আছিয়ার দুঃখ-শেষ পর্ব
ফেরাউন বলল, আছিয়া! তুমি কি বলতে চাও আমার এমন ভীষণ শত্রু যারা, তাদের সাথে যোগ্যনুরূপ ব্যবহার না করতঃ দুর্বল আচরণ দ্বারা তাদিগকে প্রশ্রয় দান করবো? আর তারা নির্বিগ্নে মিশর হতে বের হয়ে বিদেশে আমার দুর্ণাম ছড়িয়ে দিবে?
আছিয়া বললেন, তাঁরা দুর্ণাম ছড়াবে কেন? তারা এদেশ হতে কোনরূপ প্রাণ ও মান নিয়ে চলে যেতে পারলে অন্য কোথাও গিয়ে ভরণ-পোষণ জুটুক কিংবা নাইবা জুটুক স্বস্তির মুখ দেখতে পাবে। এটাই তাদের যথেষ্ট! তখন তারা স্বাভাবিক ভাবেই যে যার নিজ নিজ কর্তব্য কার্যে মগ্ন হবে। আপনার দুর্ণাম রটাবার তাদের অবসর কোথায়? আর তাতে তাদের লাভই বা কি হবে?
আছিয়া প্রদত্ত এ উত্তর ফেরাউনের কাছে মোটেই সুখের ও তৃপ্তিকর হল না। সে যেন এতে বনী ইসরাঈলদের প্রতি আছিয়ার প্রচ্ছন্ন গভীর প্রাণের টান অনুভব করল এবং এতে তার প্রতি আছিয়ার যথেষ্ট ঔদাসিন্যের ভাব ফুটে উঠল।
সুতরাং ফেরাউনের মনের অবস্থা মুহূর্তে ভীষণ আকার ধারণ করে সে বিবি প্রতি অত্যন্ত ক্রদ্ধ হয়ে পড়ল এবং তাঁকে বলল, তা হলে দেখা যাচ্ছে তুমি তোমার গোত্রীয় লোকদের প্রতি প্রাণের মায়ায় এতই বিভোর যে, তাদের নিরাপত্তার খাতিরে আমার হিত-অহিতের প্রতি লক্ষ্য রাখারও কোন প্রয়োজন দেখছ না। আচ্ছা তোমার জ্ঞাতী বান্ধবদিগকে রক্ষা করে রাখিও। আমি এতদিন ওদের প্রতি যে দন্ডের ব্যবস্থা রেখেছিলাম অদ্য হতে তা অপেক্ষাও শত সহস্রগুণ কঠিন দণ্ড প্রদান করবো।
হঠাৎ স্বামীর এরূপ উগ্রমূর্তি এবং ক্রুব্ধাবস্থা দেখে আছিয়া বিষ্ময় বোধ করলেন এবং শান্ত কন্ঠে তাকে বললেন, স্বামী! আমি আপনার হিত-অহিতের দিকে লক্ষ্য রাখব না তবে কিসের প্রতি লক্ষ্য রাখব? সাধ্বী নারীর কর্তব্যই তো শুধু স্বামীর হিত ও মঙ্গল কামনা করা; আর তজ্জন্যই তো আপনার কাছে আজ এ প্রার্থনা পেশ করেছি।
আছিয়া অত্যন্ত কোমল কণ্ঠে এ কথা বললেন; কিন্তু ফেরাউনের ক্রোধ এবং উগ্রতা তখন সপ্তমে চড়ছে; কাজেই সে আছিয়ার এ কথার প্রতি ভ্রুক্ষেপও করল না। সে শুধু বলল, রেখে দাও তুমি তোমার এ সমস্ত ন্যাকামীপনা। আমাকে হয়ত তুমি এখন পর্যন্ত মোটেই চিন নেই। এবার আমাকে চিনার সুযোগ দিব। এ বলে ফেরাউন সবেগে বিবি আছিয়ার কক্ষ হতে বের হয়ে গেল।
স্বামীর মেজাজ ও স্বভাবের পরিচয় বিবি আছিয়া বেশ উত্তম রূপেই জানতেন। তাতেও নাকি এখনও তাকে চিনা হয় নি। কিন্তু তা বলে তিনি স্বামীর উপরে ক্রদ্ধ বা বেজার হলেন না বা তার জন্য আল্লাহর কাছে বদ দোয়াও করলেন না। তাঁর হৃদয় জুড়ে দুঃখের তুফান বয়েছিল।
এতটুকু সুখ বা শান্তির নাম পর্যন্ত তাঁর অন্তরে ছিল না। আর এটার জন্য স্বামী ফেরাউনই একমাত্র দায়ী ছিল। তবু ধৈর্যের প্রতিমূর্তি আছিয়া তাতে ভেঙ্গে পড়লেন না; বরং তিনি দু’হাত তুলে প্রভুর সমীপে মুনাজাত করলেন, হে বিশ্ব-পালক! তুমি আমার স্বামীর স্বভাব পরিবর্তন কর, তোমার অফুরন্ত কৃপা গুণে তার সুমতি এনে দাও।