আছিয়ার কঠোর পরীক্ষা শুরু-পর্ব ৬
আছিয়ার কঠোর পরীক্ষা শুরু-পর্ব ৫ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এখন কেবল আছিয়ার সর্বকনিষ্ঠ পুত্রটিই বাকী আছে। সে দুগ্ধপোষ্য শিশু। শিশুটি মায়ের ক্রোড়ে বসেই জ্যোষ্ঠ ভ্রাতাগণের এ শেষ পরিণতি একদৃষ্টে তাকিয়ে দেখছিল। হামানের নির্দেশে জল্লাদ তাকে মায়ের ক্রোড় হতে ছিনিয়ে আনতে গেল । শিশুটি তখন দু হস্তে মায়ের কন্ঠ সবলে জড়িয়ে ধরল।
জল্লাদ বহু টানাটানি করেও তাকে মায়ের বক্ষ হতে ছুটায়ে আনতে পারলো না। মা অবশ্য তাকে আল্লাহর নামে নিয়ে ছেড়েই দিয়েছিলেন কিন্তু নির্দয় হস্তদ্বয় সম্ভবতঃ অবশ হয়ে গিয়েছিল আর সে জন্যই সে মায়ের বক্ষ হতে শিশুকে ছাড়ায়ে নিতে সক্ষম হয় নাই। তখন ফেরাউন উঠে আছিয়ার নিকটে গিয়ে শিশুর মুখের দিকে দৃষ্টি করতঃ দুহাত পাতল। কচি অবোধ শিশুটি হয়ত ভাবল, তার মাতা তো তাকে ছেড়েই দিয়ছিল।
কিন্তু তার জনক তাকে কিছুতেই ঐ নররূপী রাক্ষসদের হাতে সোপর্দ করবে না। এ ভরসায় তন্মহূর্তে সে পিতার বক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়লো। হায় সে অবুঝ শিশু কি তখন ভূলেও ভাবতে পারছিলো যে, তার পিতাই তাকে নিয়ে এ মুহূর্তে যে অভিনয় করবে তা মহাপাপী ইবলীসকেও হার মানিয়ে ছাড়বে। ইবলীছ তা দেখে বিষময়ে বিমূঢ় হবে কিংবা লজ্জায় অধোবদন হয়ে থাকবে।
পাষাণ হৃদয় ফেরাউনের মনে স্বীয় কচি শিশুটির করূণ চাহনি দেখে এতটুকু মায়া হলো না। সে পুত্রটিকে তার মায়ের কোল হতে হাতে এনে স্বহস্তে তাকে উত্তপ্ত তেলের মধ্যে নিক্ষেপ করলো। সন্ত্রস্ত বাকরুদ্ধ উপস্থিত জনতা আবার হায় হায় করে উঠলো। এবার তাদের সাথে মিশরের আকাশ-বাতাস, পশু-পক্ষী তৃণ-লতাও ঐ একই আওয়াজে শরীক হল।
মুহূর্ত মধ্যে কচি ছেলেটির মাখনের মত কোমল দেহটি উত্তপ্ত তেলে ভষ্মীভূত হয়ে শুন্যে মিলে গেল।
ঐশ্বর্য্যের প্রাচুর্য্য ও ক্ষমতার মোহে মদগর্বিত ফেরাউন আজ এ যে মর্মবিদারক ঘটনার অবতারণা করলো তা সমগ্র মানব যতদিন এ পৃথিবী স্থায়ী থাকবে ততদিনই শিহরিত মনে স্মরণ রাখবে এবং এ নিষ্ঠুর কলংক কাহিনীর নায়ক ফেরাউনকে ধিক্কার দিতে থাকবে।
বিবি আছিয়ার সম্মুখে এ চরম নৃশংস ঘটনা সংঘটিত হল কিন্তু তাতেও তিনি বিন্দুমাত্র বিচলিত হলেন না বরং তাঁর কলিজার টুকরা সন্তানদের প্রত্যেকেই যে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে আত্নৎসর্গ করতে সামর্থ হল এতে তিনি নিজেকে পরম তৃপ্ত এবং আনন্দিত বলে বোধ করতে লাগলেন।