আছিয়ার কঠোর পরীক্ষা শুরু-পর্ব ৪

আছিয়ার কঠোর পরীক্ষা শুরু-পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

আছিয়া বললেন, মন্ত্রী! এমন পাপোক্তি আর মুখে আনিও না। এবং এরূপ প্রলোভনও আমাকে দেখাইও না, বরং তুমি তোমাদের বাদশাহর মন পরিবর্তন করার জন্য চেষ্টা করে দেখ। নতুবা ধবংস অনিবার্য তা কোন শক্তিই ফিরায়ে রাখতে সক্ষম হবে না।

বাদশাহ এতক্ষণ ধৈর্য ধরে আছিয়ার কথা শ্রবণ করেছিল। এবার তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল। সে বলল, হামান! তুমি এখান হতে চল, আছিয়ার বাক্য আমার সহ্য হচ্ছে না, সে এখনও তার পূর্বের জেদ নিয়েই আছে। এবার তাকে আমার শিক্ষা না দিয়ে গত্যন্তর নেই। এবার সে দেখুক তার জেদ কত দৃঢ় এবং মিশরাধিপতি ফেরাউনের শক্তি বা কত প্রবল।

আমি তাঁর এবং তাঁর পুত্রদিগের এমন ভীষণ শাস্তির দ্বারা প্রাণ সংহার করব যা দুনিয়াতে কেউ কোন দিন দেখে নেই, কেউ কোন দিন শ্রবণও করে নেই। তুমি একটি বৃহৎ ডেকচিতে তেল ভর্তি করত: উত্তপ্ত করো। অতঃপর আমি সেই অগ্নিতুল্য উত্তপ্ত তেলের ভিতরে একে একে তাদেরকে নিক্ষেপ করতঃ তার চরম শাস্তি দান করবো।

আছিয়ার সম্মুখে এ কথা বলে বাদশাহ সেখান হতে মন্ত্রীকে নিয়ে চলে গেল।

বাদশাহর সিদ্ধান্তে কেউ প্রতিবাদ করার নেই। মন্ত্রী হামান অনুচরগণের দ্বারা ভেকচিতে তেল ভর্তি করতঃ তা উত্তপ্ত করতে আরম্ভ করলো। ফেরাউনের এ পৈশাচিক সিদ্ধান্তের কথা আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলেই শুনল। আছিয়ার মত দয়াবতী ও গুণান্বিতা মহিলা তারা কোন দিন দেখে নাই।

তিনি ছিলেন সমস্ত গরীব ও দুঃখী কাঙ্গালদের কাছে সাক্ষাত জননীর মত। তাঁর স্নেহ ও দয়া লাভ করে নাই দেশে এমন মানুষ বিরল ছিল। তারা সে আছিয়ার মত রমণী এবং তাঁর নিরাপরাধ পুত্রদিগের এ ভয়াবহ পরিণতির কথা শুনে শহরিয়ে উঠলো।

কিন্তু বাদশহর এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা বা এটার প্রতিবাদ করার মত কেউ সমগ্র মিশরেও ছিল না। অতএব লোকগণ শুধু স্তব্ধ হয়ে রইলো। তবে আছিয়ার অনেক শুভাকাঙ্খী তাঁর নিকটে উপস্থিত হয়ে বলতে লাগল, দেখুন! আমরা অজ্ঞান, অধম, আপনাকে কোন পরামর্শ দেই তেমন যোগ্য নই তবে এতটুকু বুঝতেছি, যদি আপনি বাদশাহর মন এতটুকু যুগিয়ে চলতেন তা হলে আপনার এ নিরাপরাধ পুত্র কয়টি রক্ষা পেতে পারতো। আপনার নিজের প্রাণের মায়া না থাকলেও এ প্রাণ কয়টিকে রক্ষা করতে বাদশাহকে আপনি খুশী করুন।

কোন কোন লোক বললো, হে বেগম! আপনি অন্তর দ্বারা বাদশাহকে খোদা না মানলেও অন্ততঃ তাকে মুখে একবার খোদা বলুন। তবু হয়ত বাদশাহ আপনার প্রতি খুশী হয়ে আপনার এবং আপনার সন্তানগণের উপরে অনুকম্পা প্রদর্শন করবেন। তাতে আপনার জীবন রক্ষা হবে এবং আপনার পুত্রগণও অকালে তাদের মূল্যবান প্রাণগুলো হারাবে না।

আছিয়া তাদের এ অনুরোধ শুনে কোনরূপ জবাব দিলেন না বা কোনরূপ কিছু মন্তব্যও করলেন না। তখন তাঁর দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছিল, তিনি যেন কোন দূরজগতের গভীর ভাবনায় নিবিষ্ট হয়ে আছেন। এ জগতের ভাবনা, চিন্তা, ভয়, ভীতি, আশা-আকাংখা সকল কিছুর উর্দ্ধে উঠে সর্বরকম মুক্ত হয়েছেন।

আছিয়ার কঠোর পরীক্ষা শুরু-পর্ব ৫ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।