হিমু বসে বসে দু আঙ্গুলের নখ দিয়ে বেশ কসরত করে আঙ্গুরের খোসা ছাড়াচ্ছে.. যদি ও এটা খুব ই আজগুবি এবং বেশ কস্ট সাধ্য ব্যাপার। তবু সময় কাটানোর জন্য ভালো কাজে দিচ্ছে… প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গিয়েছে নিতুদের বসার ঘরে বসে আছে। এই এক ঘন্টায় সে মাত্র বারোটি আঙ্গুরের ছোলা খসিয়ে মুখে পুরতে পেরেছে।বাসার পিচ্চিটা ভিতরের দরজার পর্দার আড়াল থেকে ওকে দেখছে। পর্দার নিচ থেকে তার পা দেখা যাচ্ছে। এই বাসায় আসার পর সেই প্রথমে দরজা খুলেছিলো। কিন্তু দেখেই আবার দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। কটকটা হলুদ পাঞ্জাবী, মুখ ভর্তি দাড়িগোফওয়ালা খালি পায়ের অতিথী দেখলে যে কোনো বাচ্চার ই ভয় পাবার কথা।
এই পিচ্চিটাও তাদের মতন ই ভয় পেয়েছে, ছেলেধরা ভেবেছে হয়তো! এই বয়সের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যেটা হয়, সন্দেহজনক অচেনা কোন ব্যাক্তিকে দেখলে চোর ডাকাতের চিন্তা এদের মাথায় আসার আগে প্রথমেই আসে ছেলেধরার ভয়। মুখের উপর ধপাস করে দরজা বন্ধ করে দেওয়াতে তাই হিমু কিছু মনে করেনি.. খুশি মনে আবার কলিংবেলের দিকে হাত বাড়াতেই একটা মেয়ে দরজা খুললো। সম্ভবত ঘুমাচ্ছিলো। মাত্র ই চোখে মুখে পানি দিয়ে এসেছে কিন্তু এখনও রেশ কাটে নাই। এমনিতে মেয়েটা বেশ সুন্দরী আর এখন ঘুমভাংগা ফোলা ফোলা মুখে অন্যরকম সুন্দর ই লাগছে। হেকমতের মা এই মুহুর্তে এখানে থাকলে ফোকলা দাঁতের একটা হাসি দিয়া বলতো… ‘বর…ই সৌন্দৈয্য।’ এই হেকমতের মা কাওরান বাজারে রাতের বেলা রুটি বিক্রি করেন। দুইকুলে একমাত্র বলতে ছেলে হেকমত। গত দুই বছর বিয়ে করে আলাদা থাকে। এই মহিলা হিমুকে অত্যান্ত স্নেহ করেন।
মেয়েটি হিমুর দিকে সন্দেহের দৃস্টিতে তাকিয়ে আছে।একমুহুর্তেই হীমু মনে মনে রুপকথার ঘুম কুমারীর চেহারা সম্পর্কে ধারনা নিয়ে নিল যাকে সোনার কাঠি আর রুপোর কাঠি দিয়ে দৈত্য ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিলো। আচ্ছা ঘুম কুমারীর ও কি এই মেয়েটার মত নাকটা বোঁচা ছিলো?
-কি চাই?
-আপনি নিশ্চই নুসরাত? আমি হীমালয়… শুভ্রর বড় ভাই, নীতু আছেন?
মেয়েটির ভাবের কোন পরিবর্তন হোলো না।
-জি নাহ।…ও ভার্সিটিতে গিয়েছে।
-কখন আসবেন?
-ক্লাস শেষ হলে সন্ধ্যার পর আসবে।আপ্নার কি দরকার বলেন।
-নিতুর সঙ্গে দেখা করতে চাই।
আমি কি ভিতরে বসতে পারি? এই কড়া রোদে খালি পায়ে রাস্তায় দাড়িয়ে অপেক্ষা করাটা বেশ কস্টকর।
মেয়েটি এবার বোধহয় একটু বিরক্ত হোলো। তার চোখের উপরে ভ্রু দুটি কুচকে আছে। একটু দিধান্বিত দৃস্টিতে একমুহুর্ত হিমুকে দেখলো তারপর পায়ের দিকে চোখ যেতেই জিজ্ঞেস করে বসলো।
-আপনি খালি পায়ে কেনো?
হিমু একগাল হেসে পাঞ্জাবীর দুপাশ হাত দিয়ে মেলে ধরলো
– পকেট নাই… তাই জুতা কেনার মত টাকা জমানো হয় নাই। তাছাড়া শুনেছি খালিপায়ে হাটলে শরীরে রক্ত চলাচল ভালো হয়, শরীর সুস্থ থাকে। আপনি ও চেস্টা করতে পারেন।
-আমি কি এবার ভিতরে একটু বসতে পারি?
মেয়েটা কমুহুর্ত কি যেন ভাবলো
– আসুন।
হিমু মেয়েটির পিছন পিছন বসার ঘরে ঢুকলো।
-আপনি এখানে বসুন। আমি আসছি।
– আপনার পায়ের কি অবস্থা এখন?
-আপনি জানেন কিভাবে?
মেয়েটা দেখা যাচ্ছে গর্ধব প্ররকৃতির। আর এই ধরনের মেয়েরা নিজের সম্পর্কে উদাসীন হয়। বেশির্ভাগ শুন্দরী মেয়েরা এই প্রকৃতির হয়ে থাকে। নিজের পায়ে মোটা একটা ব্যান্ডেজ বেধে রেখছে তা ভুলেই গিয়েছে দেখা যাচ্ছে।এই ধরনের ব্যান্ডেজের একটা নাম রয়েছে। এই মুহুর্তে হিমু নামটা মনে করতে পারছে না। তবে মচকে গেলে বা হাড় চটে গেলে এই ব্যান্ডেজ ব্যাবহার করা হয়। গত বছর খালু সাহেব অর্থাত শুভ্রর বাবার পায়ের হাড় যখন চটে গিয়েছিলো সেবার ই জিনিশটা ও প্রথমবারের মত দেখেছিলো।
তবে মেয়েটার ভিতরে ওকে নিয়ে কিছুট কৌতুহল কাজ করতে শুরু করেছে তা বেশ বুঝতে পারছে। কারন হিমু এই মেয়েটার ভিতরটা পড়তে পারছে।কৌতুহল মেয়েদের চিন্তা করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। সে সুধুমাত্র তার কৌতুহল নিবারনের চেস্টা করতে থাকে এবং সেটা সবচাইতে সহজ পন্থায়। আর যখন পর্যন্ত তার কৌতুহল না মেটে ততক্ষন পর্যন্ত খুব সামান্য বিষয়কেও এরা খুব বড় করে দেখতে শুরু করে। তার এই আজগুবি বেশভুষা আর মেয়েটাকে প্রথমেই তার পায়ের কথা জিজ্ঞেস করে ভড়কে দিয়েছে। এখন হীমু যদি আরেকটু কৌতুহল তার ভিতরে তৈরি করতে পারে। তাহলে মেয়েটার কাছে হিমু আধ্নাতিক ক্ষমতার অধিকারী পীর ফকির হয়ে যাবে। এই মেয়েটার সাথে মাজেদা খালার বেশ মিল আছে। দুজনের ই সব ব্যাপারে খুব সহজে কৌতুহল জন্মায়, প্রথম দেখায় যে কাউকে সন্দেহ করতে শুরু করে। খুব অল্পতেই রেগে যায়, এমনকি এরা দুনিয়ার সবকিছুর উপরেই তাড়াতাড়ি বিরক্ত হয়ে পড়ে। তবে কারো উপরে একবার বিশ্বাস চলে আসলে সেটা কখনো খুব সহজে ভাঙ্গতে চায়না। আর তখন যদি কারো সাথে মেশে তাহলে বকবক করে দুনিয়ার সব কথা এরা বলে দেয়। আর সম্ভবত খালার মত মেয়েটাও অল্পতেই যে কাউকে পীর ফকিরে ভাবতে শুরু করেন।
হঠাৎ করে হিমু সিদ্ধান্ত নিলো মেয়েটাকে সে আরো বোকা বানাবে, তার ভেতরে চরম কৌতুহল সৃস্টি করবে।
-আপ্নি শুভ্রকে চেনেন?
-নিতুর কাছে শুনেছি।
-এই পাড়ায় আপনার বোন ছাড়া আরও দুই জন নিতু আছে। সেটা কি আপনি জানেন? একজন দুই বাচ্চার মা। আরেকজন ক্লাস টুতে পড়ে। সামনের দুইটা দাঁত পোকায় খেয়ে ফেলছে।
– এটাতো আমি জানতামনা,আপনি জানলেন কিভাবে?
হিমু কোন উত্তর দেয়না।কারন এই ব্যাপারটা সে বানিয়ে বলেছে।
-নিতুর ছবি আকার হাত বেশ চমৎকার।
নুসরাত নামের মেয়েটি একের পর এক অবাক হয়েই চলেছে। আর তার ভেতরে এখন চরম কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। অথচ সে একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারতো হয়তো এই লোকটি শুভ্র নামের ছেলেটির কাছে সব জেনেছে।
– চা খাবেন? চা দেই?
-চায়ে চার চামচ চিনি দিবেন। আর বাসায় মুড়ি থাকলে একবাটি মুড়ি দিবেন।
-আপনি বসুন আমি আসছি।
মেয়েটা ভেতরে চলে গেলো, হিমু বসার ঘরটার চারিদিকে একবার নজর চালালো শেষে একটা পেইন্টিঙ্গের দিকে নজর দিলো। দেয়ালে নিতুর আকা বেশ কয়েকটি পেইন্টিং ঝোলানো রয়েছে। অবশ্য পেইন্টিঙ্গের বিষয় বস্তু ওর বোধগম্য হোলো না। অতি উচ্চমার্গীয় বটে। তবে তুলির আচড় গুলো বেশ পরিষ্কার।
হিমু বসে বসে চায়ের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
গতকাল বেশ রাত করে হিমু বাসায় ফিরে দেখে সেলফোনে তিনটা ম্যাসেজ এসেছে। তিনটার মধ্যে দুইটা মাজেদা খালার আরেকটা বিকাশে টাকা এসেছে তাই। মাজেদা খালা আগে সব সময় সবার সাথে চিঠি লিখে যোগাযোগ করতেন। এমনকি হিমুকে কোন প্রয়োজনে ডাকতে হলেও চিঠি লিখে পাঠাতেন। তার চিঠি মানেই সংসারের যাবতীয় সমস্যার কথা জানিয়ে হিমুকে অতিসত্বর দর্শন দানের হুকুম। আর প্রতিবার চিঠির সাথে পাঁচশত টাকার একটা চকচকে নোট স্ট্যাপল করা থাকতো।
তবে ঈদানিং খালা আধুনিক হবার চেস্টা করছেন। পাশের বাড়ির নতুন বাড়িয়ওয়ালী ইদানিং খালাকে মর্ডান করার লক্ষয়ে বেশ উঠে পড়ে লেগেছেন। আর এই বিষয়ে তিনি যে বেশ সাফল্য অর্জন করেছেন তার প্রকাশ খালার সব কাজ কর্মেই বেশ লক্ষয়নীয়। এই যেমন গত তিনমাস যাবত তিনি চিঠি লেখার অভ্যাস পরিত্যাগ করেছেন। তার বদলে তিনি সবাইকে সেলফোনে ম্যাসেজ পাঠান। যাদেরকে চিঠি পাঠাতেন তার ও একটা সেলফোন থাকা আবশ্যক। আর চিঠি পাঠানোর একমাত্র ব্যাক্তি হিসেবে হিমুই বর্তমান। হিমুর কোন সেলফোনের কখনো দরকার পড়েনি। তাই মাজেদা খালা আঠেরোশো টাকা দিয়ে একটা চাইনিজ মোবাইল সেট কিনে দিয়েছেন। সেই সাথে একটা বিকাশ একাউন্ট খুলে দিয়েছেন। মাজেদা খালা যখনই ম্যাসেজ পাঠান তার সাথে সাথে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠান। খালা আধুনিক হলেও এই ক্ষেত্রে তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।
হিমু প্রথম ম্যাসেজটা পড়তে শুরু করে। খালা বাংলিশ হরফে ম্যাসেজ দিয়েছেন।
”হিমু,
তুই কোথায়? সেদিন না খেয়ে চলে গেলি আর তোর কোন খবর নাই। শুভ্র গতকাল দুপুরের পর থেকে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। বাসার কাজের ছেলেটা আর আমি অনেকবার ডাকাডাকি করেছি। কোন সাড়াশব্দ নাই। নির্ঘাত আবার কোন পাগলামির ফন্দি ফিকির করছে। আজ সকালে করিম আবার ওকে ডাকতে গিয়েছিলো। গিয়ে ডাক দিতেই শুভ্র দরজা খুলে করিমের গালে ঠাস করে এক চড় বসিয়ে দিয়ে আবার দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। ওটা আবার তোর খালুসাহেবের সামনে গিয়ে কেঁদেকেঁটে ”
প্রথম ম্যাসেজ এখানেই শেষ। দ্বিতীয় ম্যাসেজ খুলতেই বাকিটা পাওয়া গেলো।
”একাকার করেছে। তিনি খুব ই রেগে গেছেন। সাতসকালেই ছাইপাশ গিলে বারান্দায় দম মেরে বসে আছেন। এদিকে আমার যেনো কি হয়েছে। সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে আর হুট হাট মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিরে। তোকে নিয়ে একবার ঠান্ডা পিরের দরগায় যাবো ভাবছি। ম্যাসেজ পাওয়া মাত্রৈ তুই চলে আয়। আসার সময় আমার জন্য দুইটা কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ নিয়ে আসিস।
ইতি, মাজেদা খালা।”
বিকাশে খালা এক হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। অর্থাত সমস্যা বেশ গুরুতর। একমাত্র সমস্যা গুরুতর পর্যায়ে পৈছালেই টাকার পরিমান দ্বিগুন হয়ে যায়।
এত রাতে খালার বাসায় যাওয়াটা ঠিক হবেনা। অবশ্য কাল সকালে যাওয়াটাও ঠিক হবে কিনা এই মুহুর্তে বলা যাচ্ছে না। গত মাসে শুভ্রকে যখন থানা থেকে ছাড়িয়ে আনা হোলো। খালু সাহেব হিমুকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন মাজেদা খালার মাধ্যমে। হিমু রাতে যখন গেলো খালু সাহেব তখন ছাদ বাগানে বসে ছিলেন। একে কৃষ্ন পক্ষ দ্বাদশীর রাতের ঘূটঘুটে অন্ধকার তার উপর কোন আলো জ্বালানো ছিলোনা। শুধুমাত্র পাশের বাসার ছাদের আলো থেকে হালকা আলো এসে পড়ায় ক্যামনে একটা ঘোলাটে পরিবেশ তৈরি হয়েছে। খালু সাহেব চেয়ারে হেলান দিয়ে সামনের টি টেবিলের উপর পা তুলে দিয়েছেন। টেবিলের উপর একটা বেশ দামি মদের বোতল আর গ্লাস রাখা। একটা কাচের বাটিতে কিছু বরফ গলে গিয়ে পানির উপর ভাসছে।
-খালু সাহেব আমাকে ডেকেছেন?
-এস হিমালয়, বোসো.. হ্যা ডেকেছি।
ও আসার আগেই খালু সাহেব বেশ অনেক খানি মদ পেটে চালান করে দিয়েছেন তা হিমু বুঝতে পারলো। ওর আব্বা মারা যাওয়ার পর খালু সাহেব ই একমাত্র জীবিত ব্যাক্তি যিনি ওর প্রকৃত নামে ধরে ডাকেন। তবে সেটা শুধুমাত্র তখন ই যখন উনার পেটে বিদেশি মদের বেশ কয়েকটা চালান দৌড়া দৌড়ি করে।
-আপনার শরিরটা এখন কেমন? খালার কাছে শুনলাম আপনার প্রেশারটা একটু বেড়েছে?
-শুভ্রকে গাঁজা খাওয়ার বুদ্ধিটা কিগর্ধবটার মগজ থেকে বের হয়েছে নাকি তুমি তাকে দিয়েছ?
-জ্বী না। আমি শুধু জিনিশটা কোথায় পাওয়া যাবে সেই ঠিকানাটা বলেছি।
-কেনো?
-শুভ্র নিতু নামের একটা মেয়েকে চিঠি লেখার চেস্টা করছে। কিন্তু পারছিলো না।
-তাতে গাঁজা খেতে হবে কেনো!
– এটা সেবনে নাকি মাথা ভালো কাজ করে। বিশেষ করে মনের ভিতরের কথা বের হয়ে আসে। সাধু লালন ফকির নিয়মিতো গাঁজা সেবন করতেন,রবীন্দ্রনাথ ও তেনার সাথে মাঝে মাঝেই সেবন করতেন। এ কারনেই নাকি অনেক কবিতা গান উনাদের ভেতর থেকে আপনা বের হয়ে আসতো।
– তো এখন এসব খেয়ে চিঠি লিখতে হবে!!
খালু সাহেব রেগে যাচ্ছেন… হিমু এখোনো দাড়িয়ে রয়েছে। খালু সাহেব বসতে বললেও সামনে বসার কোন চেয়ার রাখা নেই।
-শুনেছি বারাক ওবামাও সেবন করতেন।
-আমার ছেলে বারাক ওবামা না। আমি খুব ভালো ভাবেই জানি এই কুকাজের একমাত্র হোতা তুমি। ইউ মাস্ট পে ফর দিস।
-শুভ্র তোমাক অনুসরন করে আর তোমার বুদ্ধি ছাড়া যে সে একপা নড়েনা তা আমি বেশ ভালো ভাবে জানি। কিন্তু আমি চাইনা তোমার প্রভাব শুভ্রের উপর পড়ুক। একটা মেয়ের পাল্লায় পড়ে এসব খেয়ে চিঠি লিখতে হবে! রাবিশ!! আমার ছেলের অধপতন দেখে আনন্দে নাচতে ইচ্ছা করছে। এখন তুমি আমাকে একটু হেল্প কর।
খালু সাহেব উত্তেজিত হয়েগেলেই বাংলা কথার মাঝে ইংরেজি বকা শুরু করেন।
– জ্বী খালু সাহেব বলেন।
-এই মুহুর্তে তুমি আমার বাসা থেকে বের হয়ে যাবা। আর কখনো এ বাসার ত্রিসীমানায় আসবেনা আর শুভ্রর সাথে কোনরকম যোগাযোগ রাখবেনা।
হিমু তার বত্রিশ পাটি দাঁত বিকশিত করে হাসছে। আবছা ছাদের এই মুহুর্তের পরিবেশে হাসিটা প্রকট ভাবে খালু সাহেবের চোখে পড়ছে।রাগান্বিত ব্যাক্তির সামনে এই ধরনের হাসি দিয়ে হিমু ভিষন আনন্দ পায়। এই ধরনের হাসিকে ও একটা নাম দিয়েছে . ‘বেহায়া হাসি’. ঈচ্ছে করেই বেশ নিষ্ঠার সাথে সে কাজটা করছে।
-তুমি সারারাত আমার সামনে তোমার ঐ নংরা দাঁতগুলো বের করে দাড়িয়ে থাকবে নাকি?
-আমি কি এখন ই বাসা থেকে বের হয়ে যাবো? খালা বলেছিলো রাতে খেয়ে যেতে। খিচুড়ি আর ইলিশ মাছ রান্না হয়েছে।
-না… তুমি এই মুহুর্তে বের হয়ে যাবা।
-জ্বী আচ্ছা। খালুসাহেব আপ্নি ভালো থাকবেন।
– তোমার কাছে ম্যাচ আছে?
-জ্বী না।
-তুমি আসতে পারো।
হিমু বাসা থেকে বের হয়ে এসেছে। এরপর একমাস হয়ে গিয়েছে সে ওমুখো হয়নি। তবে আজ সকাল এগারোটায় ও শুভ্রদের বাসার উদ্দেশ্যে বের হোলো। কিন্তু বাসার গলির মুখে এসে সিদ্ধান্ত বদলে হাটতে হাটতে শেখেরটেকে নিতুদের বাসায় এসে হাজির হয়েছে। নিতুদের বাসাটা গলির একদম শেষ মাথায়। তবে খুজে পেতে ওর খুব একটা কষ্ট হয়নি। হিমু এখানে দুটো কারনে এসেছে।হয়তো নিতু বলতে পারবে শুভ্রের পাগলামির কারন। আর শুভ্র যদি এখন পর্যন্ত নিতুকে চিঠিটা না পাঠায় তবে আজ সে নিতুর কাছ থেকে একটা চিঠি নিয়ে যাবে শুভ্রর জন্য। চা নাস্তার পর্ব শেষ হয়েছে বেশ আগেই। চা মুড়ির সাথে আংগুর আর বিস্কিট দেওয়া হয়েছিলো। বিস্কুটের অংশ এখনও মাড়ির দাঁতের গোড়ায় লেগে আছে। হিমু কয়েকবার আঙ্গুল ঢুকিয়ে বের করবার চেস্টা অবশ্য করেছে কিন্তু বের করতে পারেনি। এখন বাজে তিনটা . আরও কমপক্ষে তিন ঘন্টা এখানে অর্থাত নিতুর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। হিমু প্লেটের বাকি আঙ্গুর গুলো গুনে দেখলো। এখনও সাইত্রিশটা আঙ্গুর রয়েছে। অর্থাত সে ঠিক গতিতেই এগোচ্ছে।ঘন্টাপ্রতি বারোটি করে আঙ্গুরের খোসা ছাড়াতে পারলে ছয়টা নাগাদ এগুলো শেষ হবে।
(হিমুকে বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টা মাত্র)