ভবেরহাটি হল্টে ট্রেনটা যখন এসে থামল রাত তখন বার টা ঘর ছুই ছুই করছে।প্যাসেঞ্জার ট্রেন। বেশি রাত হেলেও কিছু থামে এখানে।এজ কিন্তু কুল্যে নামল একজন।তবে সে জন্য প্ল্যাটফর্মের একমাত্র চায়ের দোকান নুটুপদর তেমন ভাবন্তর হল না।রাতের শেষ ট্রেনটা হলেও দশ-পনের কাপ চা বিক্রি হয়ে যায়।আগে হত না।নুটুপও দাড়ে দশটার ট্রেন পার হয়ে গেলই দোকানের ঝাপ ফেল দিত।তবে ইদানিং অবস্থা পালটে যাচ্ছে। কারন টা বেশ ভয়ানক।আশে পাশের পাঁচ-সাতটা গ্রামের ভরসা বলতে এই হল্ট।রাতের ট্রেন এ লোক কম হয়না।তবে তাঁরা কেউ বিশেষ চায়ের খদ্দের নয়,ট্রেন থেকে নেমেই অন্ধকার ফুড়ে ছোট যে যার ঘরের দিকে।কিন্তু ইদানিং মাস কয়েক ধরে রাত একটু বাড়লেই গ্রামের রাস্তার হঠাৎ তেনাদের আনাগোনা শুরু হয়েছে।সোজা কথায় ভুতের উপদ্রপ।টা গ্রামের পথে রাতের অন্ধকারে ভূত দু,একটা থাকলেই কালে ভদ্র তাদের কেউ হঠাৎ এসে পড়ে সামনে।দুই একদিন হইচই তারপর ভুলে যায় সবাই। কিন্তু এব্যাপারে কিছু বাড়াবাড়ি গোছের ।ভয়ানক ব্যাপারটা হল বেজায় ভয়ে দাঁত কপাটি লেগে মারা গেছে দুইজন।তাদের একজন পূর্বগ্রামের সনাতন মণ্ডল।বেশ সাহসি মানুষ।গুজবে কান দেননি।সেদিন রাতে ট্রেন থেকে নেমে একা যাচ্ছিল এই পথ ধরে।টা এমন ভয় পেল যে,মুখে গেজা তুলে এক দৌড়ে বাড়ি গিয়ে ফিট।ডাক্তার বদ্যি করেও বাচান যায়নি।সেই থেকে রাতের এই শেষ ট্রেন যাত্রী কমে গেছে।তবে নুটুপদর চায়ের খদ্দের বেড়েছে।বার-চৌদ্দ জন যাই নামুক,আগে এসে জড়ো হয় ওর দোকানে।আদা-তেজপাতা দিয়ে এক কাপ করে চা বানিয়ে নিজেদের ভিতরে কথাবার্তা সেরে ফলে।এক কোন গ্রামের মানুষ সেই বুঝে চলার পথ এমনভাবে ঠিক করে নেয় যে,শেষ পর্যন্ত কেউ যেন একা পড়ে না যায়।নুটুপদও তাই খুলে রাখে দোকান।তা সেই মতো দূর থেকে আওয়াজ পেয়ে উনুনের নতুন কাঠ গুজে জলের কেটলি চাপিয়েছিল সে।প্ল্যাটফর্মের অবস্থা দেখে সেগুলো তুলে ফেলেছে,অন্ধকার ফুড়ে হাজির হল লোকটা।আধময়লা ধুতি আর হাঁফসাট-পরা মাঝবয়সি মানুষ।তেল চুকচুকে টাক।নিপাট নিরহী চেহারার।কিন্তু সেসব নয়।নুটুপদর ভুরু কুচকে উঠল প্ল্যাটফর্মের আধা অন্ধকার লোকটার মুখের দিকে নজর পড়তে।ছোট হল্ট স্টেশন।যারা যাওয়া আসা করে সবাই প্রায় মুখ চেনা মানুষ।কিন্তু এ মুখ আগে দেখেনি কখনও।আনকোরা নতুন বর্ডার এরিয়া।নতুন মুখ দেখলেই সন্দেহটা স্বাভাবিক।এই বাপারে আবার নুটুপদ দায়িত্ব রেয়েছে কিছু।পুলিশ ফাড়ির ছোটবাবুকে গোপনে নানা খবর যোগায় দেয় ও।কত মানুষ ধান্দায় ঘোরা ফেরা করে এসব এরিয়ায়।সেই সাথে সব জানা থাকলে পুলিশের কাজের দুবিধা হয়।আর থানার বাবুরা খুশি থাকলে নানা দরকারে নটুপদরও কিছু সুবিধা মেলে।লোকটা কাছে আসতেই বললল,কোন গেরামের বাড়ি তোমার গো?এত রাতে!নাম কি?
আগুন্তক ততক্ষনে সামনে নড়বড়ে বেঞ্ছেটায় জাকিয়ে বসে পড়েছে।হাত কচলে গলা নামিয়ে বলল,আজ্ঞে ভবচাঁদ ভট্টাচার্য।আসছি মেলা দূর থেকে।ট্রেনের গোলমাল দেরি হয়ে গেল বড্ড।লোকটার কথার ধরনে নুটুপদের সন্দেহটা ততক্ষনে ঘন হয়েছে আরও।বলল,যাবেন কোথায়?ধুশুলেন যখন,বলেন ফেলি।লোকটার গলা খাদে নেমে এল আরও যাব পুলিশফাড়ির বড়বাবুর কাছে।সম্পকের উনার শহ বশুর বাড়ির মানুষ আমি।হঠাৎ দরকারে খবর দিতে আদতে পারে নি।তাহলে স্টেশে কেউ থাকত নিশ্চয়।দয়া করে পথটা যদি একটু দেখিয়ে দেন যদি।বলা বাহুল্য,পুলিশ ফাড়ির বড়বাবুর নামে নুটুপদ গলে জল হয়ে গেছে এতক্ষনে।উনুনের কাঠ ফের উসকে দিয়ে বলল,ছোটবাবুর শ্বশুর বাড়ির মানুষ আপনি,সে কথা আগে বলবেন তো!পরিবার নিয়ে উনি যেখানে থাকেন,সেটাবা ফাড়ি আর বেশি দূরে নয়।তবু এই রাতে নাই বা গেলেন।তাই বলে অধম৯ নুটুপদের দু এক কাপ চা খেয়ে এখানে জিরিয়ে নিন একটু।রাত সাড়ে তিনটায় প্রথম ট্রেন আসবে।ওই ট্রেনে কিছু যাত্রী নামে।তাদের কাউকে ধরিয়ে দেব।নিশ্চিতে চলে যাবেন।শুনে ফিক করে হাসল ভবু চাঁদ,কি যে বলেন দাদা!সামান্য পথ যখন একাই চলে যাব।তা ছাড়া পুলিশের কুটুম আমি চোঁর ডাকার আমার কি করবে?এবার প্রমাদ গনল নুতুপদ।চোঁর-ডাকাতের ব্যাপার নয় দাদা।তবে কি ? একটু অবাক হল ভবচাদ।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।