আকালুর অদ্ভুত ক্ষমতা–১ম পর্ব-মঞ্জু সরকার

গল্পের ২য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

গাঁয়ে যত ভূত আর অদ্ভুত সব জিনিস আছে, সেসবের খোঁজ আকালুর মতো কেউ জানে না। এর প্রধান কারণ হল গাঁয়ের সঙ্গে আকালুর মাখামাখি জীবন। তার বাবা আকালের সময় কাজের খোঁজে শহরে গেছে। আর ফেরেনি। সেই তখন থেকেই ছোট আকালু সংসারের হাল ধরেছ

মা ও ছোট ভাইবোন দুটির খাবার জোটাতে গ্রামেই ঘুরে বেড়ায় সারাদিন। তার বাবা ছিল ক্ষেতের কামলা, আর আকালুকে কেউ কেউ ‘ক্ষ্যাত’ বলেও খেপায়। আকালের সময় জন্ম হয়েছে বলে এ গ্রামে বুড়ো আকালু আরও একজন আছে। আকালুকে তাই ছোট আকালুও ডাকে কেউ কেউ।

আকালুর সমবয়সী ছেলেরা গ্রাম পেরিয়ে হাইস্কুলে যায়, পাকা রাস্তায় শহরে যাওয়ার বাস এবং বাজারে শহুরে কত কী জিনিস দেখে! কিন্তু স্কুল ছাড়ার পর আকালু এখন দিনমান হয় বাড়িতে, নয়তো ফসলের মাঠে কাজ করে। কোন ক্ষেতে কেমন ধান হয়, ধানের ফাঁকে কী ঘাস গজায়, কোন ঘাসের কাণ্ড আঁখের মতো মিষ্টি হয়– আকালু অভিজ্ঞ চাষির মতো ভালো জানে।

ক্ষেতের কাজ ভালো পারে বলে এখন সে বড়দের সমান মজুরি পায়। চাষের কাজের বাইরে গাঁয়ের খালেবিলে মাছ ধরাটা আকালুর বড় নেশা। বিলের পানিতে মাছ ছাড়াও অদ্ভুত যত জীব আছে, সেগুলির খবর আকালুই জানে ভালো। একটা রাক্ষুসে গজার মাছের তিনটি চোখ একমাত্র আকালুই দেখেছে।

এক কালে, কালিসাঁঝে কিংবা অমাবস্যার রাতে গ্রামের গাছগুলোতে এবং বিলের জলেও কত রকম ভূত-প্রেত নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াত। গাঁয়ের লোকেরা সবাই স্বচক্ষে না দেখুক, তেনাদের গল্প প্রত্যেকেই জানে। রাতবিরাতে আকালু বিলে মাছ ধরতে গিয়ে সেই পুরনো আমলের একজনকে নিজের চোখেও দেখেছে। এছাড়া শেয়ালের গর্তে খরগোশের বাচ্চা, পাখির বাসায় সাপÑ এ রকম নানা অদ্ভুত ও ভয়ঙ্কর জিনিস আকালু যত দেখে এবং জানে, গাঁয়ের আর কোন ছেলে তত জানে না। এ কারণে অদ্ভুত জিনিসের গল্প শোনার মানুষ অনেক দেখেছে। আকালুর কাছে এসব গল্প শোনার জন্য তার স্কুলপড়ুয়া বন্ধুরাও সময় পেলেই আকালুকে ঘিরে ধরে। কিন্তু আকালু গল্পগুজব করার মতো সময় পায় কম।

একদিন বিকেলে বাড়ির একমাত্র গরুটার ঘাস কাটার জন্য কাস্তে নিড়ানি নিয়ে ক্ষেতের আল ধরে হাঁটার সময় মোমেন চেঁচিয়ে ডাকে, “এই আকালু, একটা আশ্চর্য জিনিস দেখে যা।”

যত কাজই থাক, আশ্চর্য কিছু দেখার নেশা ছাড়তে পারে না আকালু। সে এগিয়ে যায়। মোমেনের হাতে ছোট একটি যন্ত্র। আকালু দেখেই চিনতে পারে, মোবাইল ফোন। প্রতিদিনই কত মানুষের হাতে এবং কানে নিয়ে কথা বলতেও দেখেছে। কিন্তু মোমেন পেল কোথায়? ওর বাপেরও তো নেই।

আকালু জিজ্ঞেস করল, “এটা সত্যি মোবাইল, নাকি খেলনা রে?”

মোমেন রেগে জবাব দিল, “খেলনা মোবাইল এরকম? এটা দুলাভাই বুবুকে কিনে দিয়েছে, আমি বুবুর কাছ থেকে নিয়েছি।”

“কোথায় ফোন করবি তুই?”

“এটা দিয়ে তুই ঢাকায়, শুধু ঢাকার না, দুনিয়ার যে কোনো মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারবি। খালি নাম্বারটা জানতে হবে। আর দুলাভাইয়ের নাম্বার তো সেভ করাই আছে, খালি একটা টিপলেই হল।”

 

 

আকালু মোমেনের হাতের জিনিসটার দিকে তাকিয়ে থাকে। মোবাইল কীভাবে চালাতে হয়, কীভাবে কাকে ফোন করবে, আর কীভাবে ফোন আসবে, কিছুই জানে না সে। মোমেনের কথা বিশ্বাস করবে কিনা বুঝতে পারে না। কিন্তু আকালুকে বিশ্বাস করাতেই যেন, হঠাৎ মোমেনর হাতে মোবাইলটা জ্বলে ওঠে এবং বাজতে থাকে। মোমেন মোবাইল কানে নিয়ে কথা বলতে থাকলে আকালু না শুনেও বুঝতে পারে, ঢাকা থেকে ওর দুলাভাই ফোন করেছে।

গল্পের ২য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

দুঃখিত!