গল্পের শেষ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
মরতে পারলেই বাঁচে, এমনই তার করুণ দশা। সেই বুড়োকে আকালু বলেছিল একদিন, ও মিতা, মন্ত্রটা শেখায় দেও তো আমাকে, তোমার মতো মাছ ধরতে পারলেও তবু সেই মাছ বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতে পারতাম।
বেশ কয়েকদিন ঘোরার পর আকালু বুড়ো বিড়িবিড় করে ছোট আকালুকে একটা মন্ত্র শিখিয়ে দিয়েছে, কিন্তু সেই মন্ত্র এখনও কাজে লাগায়নি আকালু।
ক্ষেতের কাজ না থাকলে বাবার রেখে যাওয়া ঝাঁকি জাল কিংবা ছিপবড়শি নিয়ে চতলার বিলে মাছ ধরতে যায় আকালু। বাজার থেকে তো ইলিশ মাছ দূরে থাক, পুঁটি মাছও কেনার মতো বাড়তি পয়সা থাকে না। কাজের ফাঁকে আকালু বিল থেকে দুচারটা মাছ ধরে আনে বলেই মা ও ভাইবোনেরা এখনও মাছভাত খাওয়ার সুখ পায়। আজও বাড়িতে সেই সুখ আনার জন্য, সারাদিন মাঠে কাজের পর, সন্ধ্যার আগে জাল নিয়ে বিলে যায় আকালু।
বুড়ো আকালুদের ছোটবেলায় চতলার বিলে তখন কত যে মাছ ছিল! পুরনো দিনের মাছের গল্প শুনলে অবাক হয় সবাই। এখন তো বিল শুকিয়ে অনেক জায়গায় জমি হয়েছে। পানি যেখানে আছে, সেখানে আগের মতো বড় বড় মাছ দূরে থাক, পানি বাগড়ানো ব্যাঙের লাফ পর্যন্ত চোখে পড়ে না তেমন। তবু গাঁয়ের লোকজন তন্নতন্ন করে মাছ খুঁজতে সরকারি এই বিলেই ছুটে আসে। আকালুও আজ জাল নিয়ে বিলে এসে দেখতে পায়, তার আগেই আরও দুজন জাল নিয়ে বিলের অল্প পানিতে ঝপাংঝপ জাল ছুড়ছে।
আকালু বুড়োর কাছে শেখা মন্ত্রটা এরই মধ্যে মুখস্থ করেছে আকালু। মুখস্থ সেই মন্ত্রটা আউড়ে আজ জালে ফুঁ দিল সে, বিলের পানিতেও ফুঁ ছুড়ে মারল একটা। আশ্চযর্, আকালুর ফুঁয়ের জোরেই কিনা, পানিতে এক জায়গায় ঢেউ জাগতে দেখল আকালু। সেই ঢেউটা লক্ষ করে জালখানা ঝপাং করে ছুড়ে মারল সে।
পানি থেকে জাল টেনে তোলার সময় তো চোখের পলক পড়ে না আকালুর। কিন্তু আজ চোখ বুজে জাল টেনে তুলল সে। তারপর জালে ফাঁদা প্রাণীদের পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখল, আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের মতো কোনো জিনিস নয়, বড় আকারের দুটি তেলাপিয়া মাছ জালে ফেঁদেছে। ওজন করলে দুটো এক কেজিরও বেশি হবে। বাজারে বেচলে দাম কম করে ৫০ টাকা। এত বড় তেলাপিয়া মাছ ধরা দূরে থাক, চোখেও দেখেনি অনেকে।
মাছ দুটি খলইতে নিয়ে আজ আকালু আর জাল ফেলল না। কারণ বেশি লোভ করলে যদি মন্ত্রটার জোর মিথ্যে হয়ে যায়! জাল কাঁধে ও খালই হাতে নিয়ে বাড়িতে ফিরতে লাগল আকালু। বিলে মাছ ধরতে এলে মাছুয়ার খলই দেখা গাঁয়ের মানুষের অ
ভ্যাস। আকালুর খলইতে এক জোড়া বড় তেলাপিয়া দেখেও অনেকে আহ-উহ করতে লাগল। একজন তো কেনার প্রস্তাব দিল। কিন্তু আকালু মা ও ভাইবোনকে না দেখিয়ে এ মাছ বেঁচবে না। বলা তো যায় না, এই মাছ দুটি থেকেই হয়তো আকালুদের সৌভাগ্যের চাকা খুলে যাবে এবার।
বাড়িতে আসার পর মাছ দেখে আকালুর মা ও ছোট ভাইবোনরাও বেজায় খুশি। পড়শি জোবেদ বেপারি এসেছে তাদের বাড়িতে। ধারের টাকা শোধ করার তাগাদা দিতেই বোধহয়। আকালুদের উঠানে পিঁড়িতে বসে বিড়ি টানছিল লোকটা। আকালুর মায়ের হাতে এত বড় মাছ দেখে বলল, “কার দিঘি থেকে ধরে আনলি রে আকালু! চুরি করে আজও মণ্ডলের দিঘিতে জাল নিয়ে গেছিলি?”