আইশা আবদুররহমান বেউলি
আইশা আবদুররহমান বেউলি (জন্ম ১৯৪৮):
আইশা আবদুররহমান বেউলি একজন প্রখ্যাত ইসলামী পণ্ডিত, লেখক এবং অনুবাদক, যিনি ইসলামী সাহিত্য ইংরেজি ভাষাভাষী পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন।ওয়ার্ল্ডক্যাট ইউনিয়ন ক্যাটালগে তাকে “৭৩টি কাজ, ১৭২টি প্রকাশনা, ৩টি ভাষা এবং ৮৫৫টি লাইব্রেরি ধারণ”-এর লেখক বা অনুবাদক হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তিনি এবং তার স্বামী কুরআনের একটি ইংরেজি অনুবাদে সহযোগিতা করেছেন।আইশা আবদুররহমান বেউলি ১৯৪৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলে থেকে ফরাসি ভাষায় স্নাতক (বিএ) এবং নিকট প্রাচ্যের ভাষায় স্নাতকোত্তর (এমএ) ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি কায়রোর আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেলোশিপ নিয়ে অধ্যয়ন করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তার স্বামী শায়খ আবদালহক বেউলি, যিনি প্রায়শই তার বইগুলোর সহ-অনুবাদক, এবং তাদের তিন সন্তান রয়েছে।
ইসলাম গ্রহণ এবং তার পরবর্তী সময়:
আইশা আবদুররহমান বেউলি একজন ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী এবং ইসলামের উপর বহু গ্রন্থের লেখক বা অনুবাদক। তার পরিবার খ্রিস্টান ধর্মে দৃঢ় ছিল, তবে তিনি খ্রিস্টধর্মে কিছু অভাব অনুভব করেন, যা তাকে কয়েক বছর জেন বৌদ্ধধর্মে যুক্ত করে। এই সময়ে তিনি দার্শনিকদের রচনা, যেমন নিটশে, শোপেনহাওয়ার, কান্ট, হেগেল ইত্যাদি পড়েন, মানব অস্তিত্বের অর্থ অনুসন্ধানে। নিটশের রচনায় ইসলাম সম্পর্কে তার ইতিবাচক উল্লেখ তাকে প্রভাবিত করে। এই অধ্যয়ন ও অনুসন্ধানের ফলস্বরূপ, ১৯৬৮ সালে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
আইশা আবদুররহমান বেউলি ইসলামী জ্ঞান ও সাহিত্য ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তিনি কুরআন, হাদিস এবং ইসলামী আইনসহ বিভিন্ন বিষয়ে বহু গ্রন্থ অনুবাদ ও রচনা করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য অনুবাদগুলোর মধ্যে রয়েছে ইমাম মালিক ইবনে আনাসের ‘আল-মুওয়াত্তা’, যা ইসলামী আইনের প্রথম সংকলন হিসেবে পরিচিত। এছাড়া, তিনি তার স্বামী শায়খ আবদালহক বেউলির সাথে কুরআনের একটি ইংরেজি অনুবাদ সম্পন্ন করেছেন, যা ইংরেজিভাষী মুসলিমদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তার অন্যান্য কাজের মধ্যে ‘দারকাওয়ি পথ: মাওলায় আল-দারকাওয়ির চিঠিপত্র’ এবং ‘তাফসির আল-কুরতুবি: পবিত্র কুরআনের শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা’ উল্লেখযোগ্য। তিনি ‘ইসলাম: নারীর ক্ষমতায়ন’ এবং ‘মুসলিম নারীরা: একটি জীবনীমূলক অভিধান’ রচনা করেছেন, যা ইসলামে নারীর ভূমিকা ও অবদানকে তুলে ধরেছে। তার এই কাজগুলো ইসলামী জ্ঞানচর্চা ও গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ, রয়্যাল ইসলামিক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টার (RISSC) ২০২২ সালে তাকে ‘মুসলিম ওম্যান অফ দ্য ইয়ার’ উপাধিতে ভূষিত করে।
নির্বাচিত কাজসমূহ
অনুবাদ:
১. (অনু.) দারকাওয়ি পথ: মাওলায় আল-দারকাওয়ির চিঠিপত্র, মুহাম্মদ আল-আরাবি আল-দারকাওয়ি। নরউইচ: দিওয়ান প্রেস, ১৯৮১।
২. (অনু.) আল-মুওয়াত্তা ইমাম মালিক ইবনে আনাস: ইসলামী আইন প্রথম সংকলন, মালিক ইবনে আনাস। লন্ডন ও নিউ ইয়র্ক: কেগান পল ইন্টারন্যাশনাল, ১৯৮৯।
৩. (আবদালহক বেউলির সাথে অনু.) আল-কুরআন: এর অর্থের একটি নতুন ইংরেজি অনুবাদ, নরউইচ: দিওয়ান প্রেস, ১৯৯৯।
৪. মাদানী পথ: মদিনার লোকদের মাদরাসার মূল ভিত্তির সাউন্ডনেস, ইবনে তাইমিয়া। ২০০০।
৫. (অনু.) ইবনে আরাবি: আল্লাহর একত্ব এবং মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুওয়াতের সাক্ষ্য প্রদান রহস্য, ইবনে আরবি। ২০০২।
৬. (অনু.) তাফসির আল-কুরতুবি: পবিত্র কুরআনের শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা, আল-কুরতুবি। ২০০৩।
অন্যান্য কাজসমূহ:
১. (আবদালহক বেউলি ও আহমদ থমসনের সাথে) ইসলামী ইচ্ছাপত্র: মৃত্যু এবং ইসলামী আইন ও ইংরেজি আইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ইচ্ছাপত্র প্রস্তুতের জন্য একটি বাস্তবিক গাইড, লন্ডন: দার আল তাকওয়া, ১৯৯৫।
২. ইসলামী পরিভাষার শব্দকোষ, ১৯৯৮।
৩. ইসলাম: নারীর ক্ষমতায়ন, ১৯৯৯।
৪. মুসলিম নারীরা: একটি জীবনীমূলক অভিধান, ২০০৪।