আইনস্টাইনের ভর্তিযুদ্ধ —– মোঃ জাহিদুল ইসলাম

আলবার্ট আইনস্টাইনের মন আজ ভীষণ খারাপ। সকাল থেকেই তার টেনশন হচ্ছিল। বুয়েট এডুকেশান বোর্ডের ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখল, পদার্থবিজ্ঞান সাবজেক্টে তার এ প্লাস তো দূরের কথা পাস নাম্বারটাই মিস্ হয়ে গেছে। তার জিপিএ-F! এটা কোনো কথা হলো! বুয়েট মিস মানে জীবন মিস , বউ মিস, সুনাম মিস। তাহলে !

সারাদিন ভাঙা লোহা-লস্কর নিয়ে কাজ করে
টেসলার যেখানে বুয়েটে চান্স পেল, সেখানে আইনস্টাইনের এই রেজাল্ট অকল্পনীয়। বুয়েটে ভর্তি হওয়া তাহলে কি চুলোয় যাবে ? এখন সে তার সজারুর ন্যায় কোঁকড়া চুলে চন্ডিত মুখ দেখাবে কী করে? আইনস্টাইনের ধারণা টেসলার পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন পেয়েছিল। ও এডিসনের যে লোহা-লস্করের দোকানে কাজ করে সেখানে এ টি এন্ড টি কর্পোরেশনের ও এন সি আর কর্পোরেশনের যুগ্মভাবে তৈরী ওয়াইফাই আছে। সেই ওয়াইফাই থেকেই এ
ই ফর্দাফাই। না হলে তার এত ভালো করার কথা না।

আইনস্টাইনের পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষাটা অবশ্য একটু খারাপ হয়েছিল। সেখানে একটা প্রশ্ন এসেছিল, আলবার্টের ব্রেণ কত ভাগ কাজ করতে সক্ষম, ব্যাখ্যা কর?
আইনস্টাইন অনেক ভেবেও এই প্রশ্নের একটি লাইনও মনে করতে পারছিল না। অগত্যা সে সামনের বেঞ্চিতে বসা নিকোলা টেসলারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল ফিসফিস করে। টেসলার তখন মনোযোগ দিয়ে ডেথ-রে কণার ব্যাখ্যা করছিল বিজ্ঞানের ভাষায়। এমন সময় আইনস্টাইনের ফিসফিস, এই টেসলার, শুনতে পাচ্ছিস?

সত্যি বলছি, পরীক্ষার পর তোকে আপেল খাওয়াবো। যেই সেই আপেল না! সেই আপেলগাছের আপেল, যেটা নিউটনের মাথায় পড়ে নিউটনের ব্রেণের জট খুলেছিল। একটু পেছন ফিরে তাঁকা না।

আপেলে’র কথা শুনেই নাকি কে জানে,
টেসলার তাকিয়েছিল। কিন্তু সাহায্য করতে পারেনি। উল্টো বলে দিয়েছিল, আমার জিনের ল্যাবরেটরিতে ঐ আপেলের ক্লোন অর্থাৎ কৃত্রিম বীজ তৈরী করেছি। তোর মন চাইলে এসে খেয়ে যাস। এখন ডেথ-রে কণার ব্রড কোয়েশ্চেনের আনসার করিতেছি। খুব সেন্সেটিভ মোমেন্ট! তুমি এ সময় আর যন্ত্রণা কোরো না। খুব প্যারায় আছি !

আইনস্টাইন রাগে গজগজ করতে লাগল। টেসলার ব্যাটা বলে কী! ‘আলবার্টের ব্রেণ সম্পর্কে’ নাকি তার পড়া নাই। সেসব নাকি বাজে। সে ‘এডিসনের এ-সি কারেন্ট ইন্ডাকশন মোটর’ থেকে আনসার করবে।
ফাউল পোলাপান কোথাকার! সামান্য
লোহা-বিদ্যুত নিয়ে কাজ করে, তার কি তেজ!
পরীক্ষাটা শেষ হোক, তারপর বাইরে বের
হয়ে দেখাবে মজা।

আইনস্টাইন অসহায় দৃষ্টিতে চারপাশে তাকাল। আড়াই বেঞ্চ সামনেই ম্যাক্সওয়েল বসা। সে কলেজের ফার্স্টবয় ছিল। এদের ডাকলে রা শব্দটিও করবে না। এরা ভীষণ সিরিয়াস ছাত্র। বাম দিকের কোণায় পরীক্ষা দিচ্ছিল মারি ক্যুরি। আইনস্টাইন তারই শরণাপন্ন হলো। প্রথমে ভাব জমাতে বলল, পরীক্ষা কেমন দিচ্ছ গো? তোমাকে দেখতে কিন্তু বেশ লাগছে আজ। কি সুন্দর বেগুনী রঙ্গের চশমা চোখে দিয়েছ।
মাদাম ক্যুরি পাত্তা দিল না। আইনস্টাইনের গা জ্বলে গেল। এই মেয়ে নিজেকে ভাবে কি? আইনস্টাইনের চার বেঞ্চ পেছনে ছিল বেকরেল। হেনরি বেকরেল মোটামুটি মেধা রাখে। টেনে টুনে উত্রে যায় আর কি! নোবেল পুরস্কারাদিও পেয়েছে! বেকরেল খাতায় ‘তেজস্ক্রিয়তা বন্ধু না শত্রু’ প্রশ্নের ভয়ঙ্কর কাহিনি লিখছে আর একটু পর পর চিরিক দিয়ে আৎকে উঠছে। তাই তাকেই আস্তে করে ডাক দিল।

শুনেই ফিরে তাকাল হেনরি। তারপর উচ্ছ্বাসে বলল, আরে আইনস্টাইন যে! বলো
কীভাবে সাহায্য করতে পারি?
বাইক্কা তুই আমাকে বাঁচা প্লিজ! ‘আলবার্টের ব্রেণের কত ভাগ কাজ করে’ এই প্রশ্নের কোনো লাইন কি তোর মনে আছে? থাকবে না কেন? আলবার্টের মতো মহৎ বিজ্ঞানী আর কি কেউ আছে? এই আলবার্ট তো এই ভুবনের সেরা বিজ্ঞানী। এ প্রশ্নের উত্তর আগুনে জ্বলে না, হৃদয় ছেড়ে বের হতে চায়না।
প্রশংসা শুনে আইস্টাইন মনে মনে খুব খুশিই
হলো। যাক হেনরি অন্তত প্রশ্নটির মর্ম বুঝেছে। ওর মনটা ভালো। হাল্যোজেনের মত মায়ামাখা।আইনস্টাইন দ্রুত বলল, তাহলে বল দেখি দুটা লাইন।
হেনরি বেকরেল তরতর করে লাইনগুলো বলে দিয়েছিল তখন :’E=mc² ’

পুরোটা লিখে আইনস্টাইন পরীক্ষার হল থেকে বের হয়েছিল সেদিন। ও! হেনরি বেকরেলকে সে নিউটনের মাথায় পড়া ঐতিহাসিক আপেল গাছের আপেলও সেদিন খাইয়েছিল। অথচ আজ রেজাল্ট তার এ কি হলো! আইনস্টাইন কিনা পদার্থবিদ্যায় ফেল! এখন ইচ্ছা করছে বাইক্কাকে ধরে এমন ধোলাই দেয় যে, তার কান্নায় পুরো ধোলাই খালটাই ডুবে যায়। পাজির হতচ্ছাড়া! এমন ভুল উত্তর বলার কি দরকার ছিল। বলবি না, টেসলারের মতো মুখের ওপর বললেই হতো।তা হলেই তো সে আজ আর পদার্থবিদ্যায় ফেল করতো না।

আইনস্টাইন দুপুরের পর থেকে কিছু মুখে দিতে পারে নি। অথচ বন্ধুরা মিষ্টি বিতরণ
করছে। মার্ক টোয়েন এসেছিল একটু আগে মিষ্টি নিয়ে। আইনস্টাইন ওর রেজাল্ট শুনে হা হয়ে গিয়েছে। এই ছেলে কিনা বুয়েটে চান্স পেয়েছে! যদিও সেই হা করা মুখ দিয়ে মিষ্টি ঢোকেনি। রসায়নবিদ ডাল্টন ইনবক্স করেছে,
এক সাবজেক্টের জন্য তার ঢাকা ভার্সিটি মিস হয়ে গেছে তার অবস্থাও আকাশের ওই খসে পড়া তারার মতোই। বিকেলে এম.পি-র ছেলে কানাই এসে কী কানা কথাই না বলে গেল। সঙ্গে কৃষ্ণবালার রসমালাই নিয়ে এসেছিল। কিন্তু সেই রস আইনস্টাইনের টক লেগেছে। এসব দেখে আইনস্টাইনের মন আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সবাই তার চেয়ে ভালো রেজাল্ট করেছে। কানাই প্রশ্ন পেয়ে মেডিকেলে প্রথম হয়েছে। ভার্সিটির প্রভাষক তাকে ফ্যাকল্টিতে
দেখা করার জন্য স্পেশাল ফোন দিয়েছে !

আইনস্টাইন এবার বড় ভাই দার্শনিক সক্রেটিসকে, কুপারের তৈরি মোবাইল ফোন দিয়ে কল দিল।
সক্রেটিস তখন প্লেটোর আড্ডা শেষ করে জি.ই.সি-র মোড় থেকে বাঁদুড়ের ন্যায় লেগুনায় ঝুলে ঝুলে বাসায় ফিরছিল। সে
ঝুলন্ত অবস্থাতেই ফোনটা কানে ঠেকিয়ে
চেঁচিয়ে উঠল, আরে আইস্টা কী খবর তোর?
“আর বলো না।”
‘কেন কী হয়েছে?’
“আমার ভার্সিটি রেজাল্ট দিয়েছে আজ।”
‘সে তো অতি আনন্দের খবর,মিষ্টি কবে খাওয়াচ্ছিস!’
“আনন্দের না ছাই!”
‘এবার বুঝেছি।’
সক্রেটিস আইনস্টাইনকে সান্ত্বনা দেয়, শোন, মন খারাপ করিস না। সবাই তো আর বিদ্যাসাগর হতে পারে না। এই আমাকে দ্যাখ, আমারও তো পড়াশোনা, ঘর-সংসার
ভালো লাগে না। কাল বিপ্লবী উদ্যানে চলে আয়, চুটিয়ে আড্ডা দেয়া যাবে। এডিসন আর এলিসা আইনস্টাইনকেও বলা হয়েছে। ওসব লেখাপড়া দিয়ে কী হবে অ্যা? তাছাড়া
আমরাও কী এক বুয়েট -চুয়েট পেয়েছিলাম নাকি ?

সক্রেটিসের কথা শুনে আইনস্টাইনের মনটা হঠাৎ ভালো হয়ে গেল। সে কানে ফোনটা
রেখেই মাথাটা কাৎ করে ওই দার্শনিক সক্রেটিস হয়েই বলল, ঠিক আছে, কাল আসব ঐ উদ্যানে। সক্রেটিস হ্যাঁ হ্যাঁ ওকে ওকে করতে করতেই লাইনটা ওপাশ থেকে টুট টুট করে কেটে গেল।

 

(সমাপ্ত)

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!