রাত ছিল গভীর, দোকানের উজ্জল লাইটে সব কিছুই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। গেদু কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে দোকানের ভেতরে ঢুকল — খোলামেলা ভাবে চাহার-পোশাক, অযত্নে ছড়ানো জিনিসপত্র। ওস্তাদ—সোজা চিবুক, ঠাণ্ডা চোখ—দুর থেকে দেখে নিলেন। হঠাৎ গেদু মঞ্চ নাটকের মতো অভিনয় করে ব্যাগ থেকে একটি পিস্তল বার করল; আলোয় লৌহের ঠাণ্ডা ঝিলিক। পরিকল্পনা ছিল নিখুঁত, এবং গেদু ঠিক যেমন শেখা ছিল তেমনই করছিল।
“অপারেশন খতম, বস,” গেদু ফিসফিস করে বলল।
ওস্তাদ ঠাট্টা-ভরা স্বরে ফিরে বলল, “শাবাশ গেদু! এখন দ্রুত—দোকান থেকে টাকাগুলো আনবি। পিস্তল নিতেই ভুলবি না। তারপর রাস্তায় এসে আমার কাছে দৌড়ে আসবি। কোনো গাড়ি থামালে উঠে পালিয়ে যাব। যদি দরকার পরে, আরো কিছু হাতাও হবে—কিন্তু প্রথমে এই কাজটি শেষ কর।”
গেদু কাঁধে ব্যাগ টানলো, মুখে ভয়-ভান করে দোকানিদের শারীরিক কবর-নাটক। টাকা বস্তায় ভরে দ্রুত বের হয়ে এলো, আর ঠিক সময়মতো ওস্তাদের দিকে ছুটে এলো। রাস্তায় তাদের জন্য অপেক্ষা করে একটি গাড়ি — মুহূর্তেই উঠেওDriving—চলতে শুরু করলো। ওস্তাদ তীক্ষ্ণভাবে বলল, “চল, কথা কম!”
রাস্তায় একটু দূরে পৌঁছানোর পর গেদু নড়বড় করে জানালার ভেতর তাকিয়ে এক লোককে থামাতে বলল। লোকটি বাধ্য হয়ে নামলো। ওস্তাদ কড়া গলায় আদেশ দিল, “যা কিছু আছে সব দে!” লোকটা কুঁকড়ে ধরে অনুনয় করল, “এই আংটি—এটা আমার বাবার স্মৃতি, এটা দেব না।” ওস্তাদের চোখে ঠাণ্ডা এক হাসি ঝলমল করল; “জীবন গেলে ঠিকই দিবি,” বলেই পিস্তল ফাঁকা হল। এক ফিসফিস করে শেষ শব্দ—তারপর ওই লোকের জীবন থেমে গেল। আঙটিটি ছিঁড়ে পড়লো, রক্ত দিয়ে গাড়ির সিট ভিজে গেল।
ওস্তাদ চিন্তা করল—গাড়িটা যদি রাস্তার মাঝখানে ফেলে রেখে যাই, লোকজন ভিড় করলে গল্প বেরিয়ে যাবে। তাই সিদ্ধান্ত নিলো—গাড়িটা খাদে ঠেলে ফেলবে, তারপর অন্য গাড়িতে উঠবে এবং ভদ্র মানুষ হিসেবে চলবে। তারা গাড়িটা ঠেলতে লাগল; শক্ত হাতে ঠেলেই, কখনো যেন চেপে ধাক্কা—তারপর হায়! “দুম”—গাড়িটা খালের দিকে ঢলে পড়ে গেল। ওস্তাদ আর গেদু কাউকে আর দেখাতে চাইল না, দ্রুত আরেকটি গাড়ি পেলো এবং ভদ্রতার ভান করে উঠে পড়ল। গেদুর মুখ হঠাৎ পাথরের মতো ফিকে হয়ে গেল—চোখে ভয়ের ছায়া ভেসে উঠল।
“কি হয়সে, গেদু?” ওস্তাদ জিজ্ঞেস করল।
গেদু কণ্ঠ কেঁপে উঠল, “ও—ও—ওস্তাদ! আমরা কি সেই গাড়িটা…নিয়ে গিয়েছি না? আমরা তো তাকে খাদে ফেলে দিয়েছি!”
ওস্তাদ হতবাক হয়ে ড্রাইভার সিটের দিকে তাকাল—তখনই সে দেখল! সেই মৃত বলা লোকটা—যার লাশ তারা খালে ফেলে এসেছে—অবাক করে তাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে আছে। তার আঙুটিটা ঝলমলে করে কুঁচকে আছে। গাড়িটি, যেন কোনো অদৃশ্য শক্তির দাস, তীব্র গতিতে আগানো শুরু করল—তারা জানেনা কখন কার অজান্তেই গাড়িটি ফিরে ফিরছে সেই একই খাদের দিকে, যেখানে তারা ভয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল।
পরদিন সকালে—কাগজের প্রথম পাতায় বড় অক্ষরে ছাপা শিরোনাম: রহস্যজনক দুর্ঘটনা! গত রাতের এক ফোনের ভিত্তিতে উদ্ধারকারী দল ৪০০ ফুট গভীর পাহাড়ি খাদ থেকে উদ্ধার করেছে একটি প্রাইভেট কার। গাড়ির ভেতর উদ্ধার করা হয়েছে কুখ্যাত ডাকাত বদি ও গেদুর লাশ; তবে গাড়ির লাইসেন্স দেখে জানা গেছে সেটি ধনী ব্যবসায়ী আশরাফ মিরজার। কিন্তু গাড়িতে তাঁকে পাওয়া যায়নি—তিনি রাত থেকে নিখোঁজ। ধারণা করা হচ্ছে ডাকাতদ্বয় গাড়িটি ছিনতাই করে পালানোর সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন; কিন্তু রহস্যজনকভাবে গাড়িটি ছিল অক্ষত। আরো আশ্চর্যজনক—দাঁত-চাড়া দিয়ে যে আঙুটিটা লাশের থলিতে থাকার কথা, সেটিও নেই।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।