কাল রাত থেকে শিশুদের চোখে ঘুম নেই। আগামীকাল সকাল সকাল দর্জিপাড়া প্রাইমারি স্কুলে যেতে হবে। কবির আংকেল শীতবস্ত্র দিবে। শিশুদের প্রিয় মানুষ, প্রিয় বন্ধু কবির আংকেল। সারা রাত অন্যসব শিশুদের মত ঘুম হয়না নিশাতেরও। ঘুমের মধ্যেও আংকেল আংকেল বলে বলে উঠে। পথ চলতে আংকেলের সাথে দেখা হলেই মোটর সাইকেলটা থামিয়ে জিজ্ঞেস করে, কেমন আছিস? হাসিমুখে উত্তর দেয়, ভাল আছি আংকেল। আপনি কেমন আছেন? মুচকি হেসে মাথায় হাত দিয়ে ভু-করে চলে যায় আংকেল। নিশাতের সাথে এই সম্পর্ক বেশ কিছুদিন ধরে। এবার সে ক্লাশ ফোরে পড়ে। রোল নম্বর দুই। আরেকটু ভাল করলেই এক-রোল হয়ে যেতে পারে। এবার ক্লাশ ফাইভে এক রোল হতেই হবে এমন পণ করেছে নিশাত। রোল যত কাছে আসবে ততোই কবির আংকেলের কাছ থেকে উপহার পাওয়া যাবে। এই আশাতেও প্রচুর পড়ালেখা করে নিশাত। দিনের বেলায় জেমকন কমলা বাগানে কবির আংকেলের গড়া শিশু স্বর্গ পাঠাগার থেকে বই নিয়ে আসে। বাড়িতে এনে খুটিয়ে খুটিয়ে পড়ে। বই জ্ঞানের ভান্ডার। জ্ঞানের সমুদ্র। নিশাত চায় শিশুস্বর্গ পাঠাগারের সবগুলো বই পড়ে ফেলতে।
নিশাতের মত ঘুম হয়না সিয়ানারও। ক্লাশে এক রোল তার। প্রখর মেধাবি। যা পড়ে সেটাই তার মেমোরিতে সেভ হয়ে যায়। সারা রাত উসখুস করে। রাতটা এত বড় মনে হয় কেন? কেন ভোর হয় না। মেয়ের এই উসখুস দেখে অবাক হয় মা তনিমা হামিদ। দিনভরই আগামীকাল নিয়ে অস্থির সময় কাটিয়েছে মেয়েটা। মুখ ফোঁটে কতবার কবির আংকেল কবির আংকেল বলে উচ্চারণ করেছে, হিসাব করা হয়নি। হিসাব করলে তো শ’পার হয়ে যাবে। এই লোকটাকে মিসেস তনিমা হামিদেরও পছন্দ। মেয়ের মত ভক্ত। সামনাসামনি কখনো কথা হয়ে উঠেনি। গ্রামের ধারেই জেমকন কমলা বাগান। কমলা বাগান ঘুরতে গিয়েও দেখা হয়নি কবির ভদ্র লোকটির সাথে। দুর থেকে ফেস আর মোটর সাইকেল চালাতে দেখা গেছে, কিন্তু কথা বলা হয়নি। আগামীকাল জানুয়ারির দশ তারিখ। দর্জিপাড়া প্রাইমারির স্কুল মাঠে শিশুদের মাঝে শিক্ষা বৃত্তি ও শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণ করবেন তিনি। মহৎ প্রাণের মানুষ। উদার চিত্তের মানব। গত বছর জানুয়ারি দুই তারিখে ওই স্কুল মাঠেই শীতবস্ত্র বিতরণ করেছিলেন। সে বছরে শিশুদের শীতার্ত শরীরে স্যুয়েটার পরিয়েছিলেন। এ বছর কম্বল। শিশু প্রেমী একটা মানুুষ। সামনাসামনি হলে মন থেকে কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা জানাবেন মিসেস তনিমা হামিদ, মনে মনে ঠিক করে রাখলেন।
মানুষ পৃথিবীতে বেঁচে থাকে তার কর্মের ফলে। যার যত মহানুভবতা, মানুষের কল্যাণের জন্য কিছু করা। মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি, উদ্ভাবন আর মানবিকতার হাত প্রসার, তারাই ইতিহাসের পাতায় মহামানব হয়ে বেঁচে থাকেন। পৃথিবী চায় মানুষের কৃর্তীর স্বাক্ষর। কল্যাণ সৃষ্টির দৃষ্টান্ত উদাহরণ। শুধু জন্ম নয়, কর্মই আসল পরিচয়। জাতির বিবেকে, সৃষ্টি তত্ত্বে আর ইতিহাসের পাতায় বেঁচে থাকার অন্যতম মুখ্যম পন্থা হল জাতির কল্যাণ পথ সৃষ্টি করা। মানবসেবী হয়ে উঠা। জন্ম নেওয়া আর বেঁচে থাকার একটা অর্থ আছে। মানুষ হিসেবে নিজেকে জানতে হবে। জানতে হবে কী আমার পরিচয়। কেন জন্ম নিলাম, কী আমার কাজ আর কী আমার দায়িত্ব?
আফ্রিকার প্রাণপুরুষ নেলসন ম্যান্ডেলা দীর্ঘ ২৭ বছর জেল খেটে ছিলেন বর্ণবিরোধের কারণে। জেল থেকে বের হয়েও পরম মমতার পরিচয় দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট হয়েও যারা তাকে জেলে পুড়ে জীবনের সাতাইশটি বছর মুক্ত পরিবেশ থেকে বঞ্চিত করেছিলেন, তাদেরও তিনি ক্ষমা করেছিলেন। এটাই মানবতা, মহানুভবতা। শিশুদের কবির আংকেল এটাই চিন্তা করেন। জীবন ক’দিনের, মানুষ আর কত বছরে বেঁচে থাকে। জীবনের সার্থক কোথায়? খেলাম-খেললাম আর বিলাসিতা করলাম এটাই কি জীবনের পূর্ণতা?
মানুষ তো মানুষের জন্য। জীবন জীবনের জন্য, সে জীবনের জন্য যদি জীবন কাজে না আসলো সে জীবনের অর্থ মূল্যায়ন কী? তাই মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চান কবির আংকেল। অন্ধজনের চোখে আলো, হত-দরিদ্রদের মাঝে সাহায্যের হাত এর এতিমদের মাথায় মহানুভবতার পিতৃত্বের প্রসারিত হাত। কয়েকদিন ধরেই অক্লান্ত পরিশ্রম চলছে। আগামীকালের শিশু শিক্ষার্থীদের মাঝে শীতবস্ত্র, শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানটা সফল করতে পারলেই পরিশ্রমের সার্থকতা। ভোরে উঠার প্রস্তুতি নিয়েই স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে দু’চোখ বুজার চেষ্টা করেন। ঘড়ির কাটায় রাত বাড়তে থাকে। ভোর অপেক্ষা করতে থাকে কখন রাত কাটিয়ে সকাল প্রবাহ আসে।
দর্জিপাড়া প্রাইমারি স্কুল। সকাল ৯টার মধ্যে শিশুরা মাঠে সুশৃংখল হয়ে সারি সারি চারাগাছের মত দাঁড়িয়ে থাকে। পাঁচ শতাধিক শিশু। সৌডিয়াম ল্যাম্পষ্টের মত শুভ্র আলো জ্বলছে শিশুদের থেকে। এরাই তো আগামী দিনের উজ্জ্বল নক্ষত্র। সুন্দর ভবিষ্যত রচনাকারী। জাতির কান্ডারী। এরাই জাতির হাল ধরবে। এদের কেউ রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, শিক্ষাবিদ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার পদগুলো অলঙ্করণ করবে। আগামী ভবিষ্যত তো এদের হাতে। শিশুরা কবীর আংকেলের অপেক্ষায় লাইনে দাঁড়িয়ে আছে দীর্ঘ সময় ধরে। কেউ বাড়িতে না খেয়ে পর্যন্ত এসেছে।
নিশাতও এদের মধ্যে একজন। তার মা জোর করেও ছেলেকে কিছু খাওয়াতে পারেন নি। শুধু মুখে মুখে আংকেল উচ্চারণ। নিশাতের মত খুব অবাক হয়। কবীর আকন্দ সাহেব তো দেখছি সেই হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা হয়ে উঠেছেন শিশুদের চোখে। নিশাতটা কিছুই খেয়ে গেল না চিন্তায় তিনি নিজেও চলে এসেছেন স্কুলের মাঠে। সিয়ানারও একই কান্ড! নিশাত আর সিয়ানা দুজনেই ভাল বন্ধু। এক সাথে ঘুরে ফিরে, খেলে। হাতে হাত ধরে মুক্ত পাখির মত ঘুরে বেড়ায়।
সিয়ানা খুব চঞ্চল মেয়ে। অল্প বয়সেই অনেক পাকনা হয়ে উঠেছে। বুদ্ধিমতীর শিল্প কথাবার্তা। বড় হয়ে আইনজীবি হবে এমন স্বপ্নের কথা আমার জীবনের লক্ষ্য নিয়ে বেশ কয়েকবার রচনায় লিখেছে। জাতীয় সংসদের স্পীকার হওয়ারও স্বপ্ন দেখে। এই খুদে বয়েসে জাতীয় সংসদের অধিবেশন খুব মনোযোগ দিয়ে দেখে। বাড়িতে একা একাই বিতর্ক চর্চা করে। ‘চাইল্ড পার্লামেন্ট অডিশন’-এ যোগ দেয়ার স্বপ্ন দেখে। তাই এই প্রস্তুতি চর্চা।
সিয়ানা নিশাতের বামপাশের লাইনের প্রথমজনই ও। দুজন চোখে চোখে তাকায়, মিটি মিটি হাসে। এই নিশাত, আর কতক্ষণ আমরা দাঁড়িয়ে থাকবো ? বলতে পার? বলে সিয়ানা।
‘জানি না, ওইতো কবীর আংকেল এসেছে। বলে নিশাত। কবীর আংকেল নিশাত আর সিয়ানার কথাবার্তার দৃশ্য দেখে কাছে আসে। মাথায় হাত বুলিয়ে হাসি টেনে আংকেল বলে, কী রে দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে? না, আংকেল। আর কতক্ষণ? বলে সিয়ানা। একটু ধৈর্য্য ধর মা, ওই তো অতিথিরা আসতে শুরু করেছে। সব শিশুদের উদ্দেশে হাত ইশারায় শুভেচ্ছা জানায় আংকেল। শিশুরা সে শুভেচ্ছা গ্রহণ করে তারাও হাত নাড়িয়ে শুভেচ্ছা জানায়। শিশুদের এ হাত নাড়ানো দৃশ্য ফুল ফোঁটা কলির মত লাগে । যেন হাতগুলো এক একটি গোলাপ ফুল। কখনো সে হাত প্রসারিত হয়ে পাখির ডানার মত সুন্দর অবলীলায় উঠানামা করতে থাকে। ঠিক যেন সমুদ্রের ওপর শান্ত ঢেউয়ের নাচনে পাখিরা ডানা মেলে উড়াউড়ি করছে। সে দৃশ্য দেখছে এখানে আসা শিশুদের অভিভাবকসহ স্বাগত অথিতিরা।
আকাশটা মেঘলা রঙে ঘুমোট হয়ে আছে। টপটপ করে ঝরছে বরফ বৃষ্টি। সে বরফ বৃষ্টিতে ভিজছে কোমলমতি শিশুরা। অতিথিরাও এখনো এসে পৌছেননি। শিশুদের মাথায় ক্যাপ পরিয়ে দিচ্ছে তেঁতুলিয়া সৃষ্টি সংঘ নামের এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ক’জন। বরফ বৃষ্টির অনুভূতি ভাগ নিচ্ছে তারাও। শিশুদের ওপর ঝরা বৃষ্টির অনুভব আংকেলের মনে ছুঁয়ে যায়। আংকেলও শিশুদের মাঝে এসে দাঁড়ান। ভাগ করে নেন বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায় গা ছোঁয়ার ঠান্ডার অনুভূতি। আংকেলকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে নিশাত-সিয়ানারা চেচিয়ে বলে, আংকেল, আংকেল বৃৃিষ্টতে ভিজবেন না প্লিজ! আংকেল আপনার ঠান্ডা লাগবে, আপনার অসুস্থ হলে আমরা কষ্ট পাব।
শিশুদের এ কথা শুনে আংকেলের চোখ বেয়ে পানি চলে আসে। কত দরদ এই আংকেলটার প্রতি; সেই সকাল ন’টা হতে রিমঝিম কুয়াশা চাদরে ঠান্ডায় উহু, উহু করছে তারা। আর আমি, এ বরফ বৃষ্টিতে আসতেই বাবা-মায়ের মত দরদমাখা হৃদয় নিয়ে যেন বলছে, খোকা বৃষ্টিতে ভিজিস না। বরফ বৃষ্টি। ঠান্ডা লেগে জ্বর আসবে। আংকেল তার নিজের মা-বাবার ছবি ভেসে উঠতে দেখে শিশুদের মাঝে। সিয়ানার মত মেয়ে আর নিশাতের মত শিশুদের মাঝে মা-বাবার ছায়ামূর্তি ভেসে উঠতেই হৃদয় নদীর বাঁধ ভেঙ্গে বয়ে আসে আনন্দ ¯সোত।
সে আনন্দের আবেগে কেঁদে ফেলেন আংকেল। নিশাত ও সিয়ানার কাছে গিয়ে দু’জনকে জড়িয়ে ধরেন। দু’গাল বেয়ে চুয়ে পড়তে থাকে চোখ হতে বাঁধভাঙা অশ্রু। কতটা আপন হলে এভাবে চোখের জল ফেলে বুক ভাসানো যায়! দর্শকদের কেউ অবাক হয়ে ভিতরকার মনে প্রশ্ন করে। হাত উচিয়ে স্যালুট করতে ইচ্ছে করে কবীর আংকেল নামক লোকটাকে, অভিভাবকের কাতারে দাঁড়িয়ে মনে মনে বলে সিয়ানার মা আফসানা হক। তার মত অনেক মায়েরা এখানে এসেছে। তারাও হয়তো ভাবছে এসব, নয়তো তারচে শ্রদ্ধা জানানোর ভিন্ন কিছু।
অতিথিরা মঞ্চের আসন অলঙ্কিত করেছেন। মঞ্চে স্বাগত অতিথিদের বক্তব্য শুনছে শিশুরা। আংকেলের বক্তব্য শোনার জন্য অস্থির হয়ে উঠে সিয়ানা, নিশাতের মত চঞ্চল মন। কখন আংকেল বক্তব্য দিবে? আবহাওয়ার বৈরিতার কারণে অতিথিরাও বক্তৃতায় কম সময় নিচ্ছেন। উপস্থাপক সামদ্দোহা নিয়াজিদ মাইকে কবীর আকন্দ (আংকেল) কে বক্তব্য দেওয়ার আহবান জানাতেই শিশুদের চোখে মুখে উদ্ভাসিত হয় আনন্দের ঢেউ। শীতের বৈরী আবহাওয়ার বরফ বৃষ্টিতে ঠকঠক করে কাঁপা শিশুরা এই মানুষটার নাম নিতেই কেমন করে উজ্জীবিত হয়ে উঠে। মন্ত্রমুগ্ধের মত শ্রবণ করে আংকেলের ভাষণ। কবির আংকেল এর ভাষণ। কান পেতে মনোযোগ সহকারে শুনতে থাকে এর প্রতিটি শব্দ-বাক্য সাজানো সুচারু বক্তৃতামালা।
ওইতো আমাদের কথা বলছে, আংকেল আমাদের নিয়ে কি কি ভাবছেন সেসব বলছেন। কি সুন্দর পিতৃতুল্য মানুষটা। পথ চলতে দেখা হলে মোটরবাইকটা থামিয়ে কথা বলেন। ঈদের সময় চকচকে দশটাকার নোট হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন, এই নে তোর ঈদ বোনাস। সাথে দু’প্যাকেট বিস্কুত, একটা পটেটো। কুড়কুড়ে মুড়মুড়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে শিশুরা। যাদের জামা-কাপড়ের অভাব, তাদের ঘরে পৌছে দেন ঈদের নতুন কাপড়। কারও বাড়িতে পাঠিয়ে দেন সেমাই কেনার অর্থ, কেউ সেমাই পেয়েই খুশি। হাত তুলে আংকেলের জন্য দু’আ করেন। হাজার বছর বেঁচে থাকুন।
কখনো স্কুল পথে একা চলতে দেখলে আংকেল তার মটরবাইকে চড়িয়ে স্কুলে পৌছে দেন। সময় পেলে আড্ডায়, খেলায় মেতে উঠেন। কবীর আকন্দ শুধু আংকেল না; সে একজন ভাল বন্ধুও। কারও চোখে বাবার মত একজন। শিশুরা আংকেলের বক্তব্য শুনছে আর যে যার মত কল্পনায় ফিরছে। সে কল্পনা জুড়ে শুধু আংকেল আর আমি, আমরা। ভাবনার আকাশে স্বপ্নেরা ভেসে বেড়ায়। এক বিশাল উড়ন্ত পঙ্খিরাজ ছাদহীন জাহাজে একঝাক শিশুদের নিয়ে আংকেল ছুটছেন কোন উৎসব সফরে।
নেত্রকোনার গ্রামে কবীর আকন্দের জন্ম। জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয় হতে ভূগোল ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে মার্স্টাস করে ২০০৪ সালে চাকরির সুবাধে চলে আসেন তেঁতুলিয়ায়। উত্তরবঙের সর্ববৃহৎ স্বনামধন্য জেমকন গ্রুপের কাজী এন্ড কাজী টি-স্টেট দর্জিপাড়া ডিভিশন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। এখানে এসে লক্ষ্য করেছেন হত-দরিদ্রদের বসবাসের এক সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত অঞ্চল। এ অঞ্চল নিত্যান্ত গরীব-দুঃখীদের বসবাস। এখানকার ছেলে-মেয়েরা শিক্ষা দীক্ষায় অনেক পিছিয়ে। বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত।
এই হতদরিদ্র শিশুদের পাশে দাঁড়াতে মনটা অস্থির হয়ে উঠে কবীর আকন্দের। পরিকল্পনা করেন এ জনপদের লোকজনের পাশে দাঁড়াতে হবে। দাঁড়াতে হবে কঠিন দারিদ্রতার শিকার হতাশাগ্রস্ত শিশুদের পাশে। ছড়িয়ে দিতে হবে শিক্ষার প্রযাপ্ত আলো। ঘুচাতে হবে অভিশপ্ত বেকারত্ব। ঝরে পড়া শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে পড়ালেখায় আগ্রহী করে তুলতে হবে। এ সমাজের অন্ধ চোখে ঢেলে দিতে হবে শিক্ষার আলো।
যেই পরিকল্পনা সেই কাজ। ধীরে ধীরে শুরু করেন শিশুদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন। দরিদ্র শিশু পরিবারদের সাথে যোগাযোগ, সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে থাকেন। সম্পর্কের বিনি সুতোয় গাঁথতে থাকে বন্ধন। শিশুরা হয়ে উঠে হৃদয়ের বন্ধনের আপনজন। শিশুরা পায় আংকেল। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সম্পর্ক। সম্পর্কের সুতো ধরে আংকেল বিনে পয়সায় জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে স্থাপন করেন পাঠাগার। নামকরন করা হয় শিশুদের নামে শিশুস্বর্গ পাঠাগার। এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে কবীর আংকেলের নাম।
সকাল ও বিকেলে শিশুরা দলবেঁধে আংকেলের কাছ থেকে বই নিতে আসে। পড়া শেষে ফেরত দিয়ে নতুন দিয়ে যায়। দর্জিপাড়া জেমকন কমলাবাগানের টিনের ছাউনির ঘরটি হয়ে উঠে পরিচিত। ছনের গোলছাউনিতে বসে শিশুরা ছুটির দিনে এসে বইপড়ায় মগ্ন হয়। আংকেলও পাশে থেকে মজাদার গল্প, কৌতুক বলে আড্ডা প্রাণবন্ত করে তুলেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্যে উঠে আসে অনেক কিছু। দর্শকশ্রোতা বরফ বৃষ্টির ¯স্থানে শুনতে থাকেন এই প্রিয় মানুষটার মুখ থেকে বলা কথাগুলো।
বক্তব্য শেষ হয় আংকেলের। শিক্ষা বৃত্তির জন্য প্রথমেই ডাক পড়ে সিয়ানা, নিশাতের। দু’জনেই এক সাথে মঞ্চে উঠে শিক্ষাবৃত্তি ও শীতবস্ত্র গ্রহণ করে। অনুষ্ঠান অতিথিদের শ্রদ্ধারশৈলী ভাষায় সালাম দেয়। হ্যান্ডশ্যাক করে। অতিথিরা মুগ্ধ হোন এ শিশুদ্বয়ের অমায়িক শিষ্টাচার। করতালিতে ভরে উঠে অনুষ্ঠানের আঙিনা। নিশাত ও সিয়ানার ঠোঁটে-মুখে হাসির ঝিলিক। সে হাসির ঝিলিকে ফ্লাশ মারে আংকেলের চোখও। সে হাসির ঝিলিকে বুকটা ভরে যায়।
এক এক করে শিশুরা শিক্ষাবৃত্তি নিচ্ছে। নিচ্ছে শীতবস্ত্র হিসেবে উষ্ণজাগা কম্বল। অনুষ্ঠান শেষে সিয়ানা আর নিশাত আংকেলের সান্নিধ্য কামনা করে। আংকেলকে কাছে পেলে দু’জনে তাঁর দু’গালে চুমু দিয়ে বাড়িতে চলে যাবে। সিয়ানা-নিশাতের মত আরও ক’জন অপেক্ষা করছে আংকেলের। আংকেল কাছে আসলে দু’জন জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খায়। আহ্ কী দৃশ্য! যেন পিতার গালে সন্তান চুমু খাচ্ছে। চুমুতেই ভরে যায় আংকেলের মন। ঠোঁটের গোড়ায় হাসি টেনে বলেন আংকেল, এই তোরা এখন বাড়িতে চলে যা। কথা শুনে শিশুরা ঝাকে ঝাকে পায়রার মত শীতের কম্বল নিয়ে উড়তে উড়তে চলে যায়। আংকেল বিস্ময় নিয়ে চেয়ে থাকেন শিশুদের ছুটন্ত পায়ের দিকে।
আংকেল বসে আছেন তার অফিস রূমে। টেবিলের সামনেই তাক ও আলমারী ভরা বইয়ের সমারোহ। সকাল আটটা থেকে বিকেল পর্যন্ত অফিসে কাজ করেন আংকেল। অফিসের টাইমের বাইরেও দু’ঘন্টা এ অঞ্চলে খুদে শিক্ষার্থীদের পিছনে ব্যয় করেন। অফিসের সামনেই স্কুল শিক্ষার্থীদের চলাচলের রাস্তা। এ রাস্তা দিয়ে সারিয়াল, কানকাটা আর দর্জিপাড়ার ছেলে-মেয়েরা হেটে হেটে স্কুলে যায়। যাদের বাই সাইকেল আছে, তারা এই দ্বিচক্র যানে স্কুল যাওয়া আসা করে। অফিসের রাস্তার পশ্চিম পার্শ্বে ঈদগাঁ মাঠ। আংকেলের অফিসটা বেশি বড় নয়, ছোট্ট টিনের ছাউনির ঘরে তার অফিস।
রাস্তার ধারেই বিশাল সাইনবোর্ড। সাইনবোর্ডে লেখা আছে ‘কাজী এন্ড কাজী টি স্টেট’। বেশ কিছু চায়ের ছবি দেয়া আছে। ব্ল্যাক, গ্রিণসহ চার-পাচঁটি রঙের চা জেমকন গ্রুপ এর কাজী এন্ড কাজী টি স্টেট তৈরি করে। অর্গানিক চা, মিষ্টি দেশ-বিদেশে রপ্তানী করে সুনাম অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কাজী শাহেদ আহমেদ একজন শিল্পমনা মানুষ। সৃষ্টিশীল সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ। সাহিত্যিক মানুষরা ইতিহাসের উজ্জ্বল নক্ষত্র। মানুষের জন্য তারা ভাবেন, কাজ করেন। ২০০৪ সালে দর্জিপাড়া ডিভিশনে ১৫০ একর জমির মধ্যে ৪০ একর জমির ওপর চা চাষের যাত্রা শুরু করেন। চা চাষের পাশাপাশি এ অফিসের সাথে….একর জমির ওপর লাগানো হয়েছে কমলা বাগান।
অর্গানিক চা, মিষ্টি আর কমলা চাষে বিষাক্ত কোন মেডিসিন ব্যবহৃত হয়না। অফিসের সাথে লাগালাগি একটা ছনের তৈরি গোলছাউনি। উত্তরবঙের সীমান্তবর্তী উপজেলা তেঁতুলিয়ায় যারা ঘুরতে আসেন, তাদের অনেকেই দর্জিপাড়া চাবাগান আর কমলা বাগান দেখতে ছুটে আসেন। এই গোলছাউনিতে বসে চারপাশ দেখেন। এই ডিভিশনেই চাকরি করেন কবীর আংকেল। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। স্কুলের ছেলে-মেয়েরা সকাল আটটার সময় দলবেঁধে এসে আংকেলের গড়া শিশুস্বর্গ পাঠাগার হতে বই নিয়ে যায়। বইপড়া শেষ হয়ে গেলে ফেরত দিয়ে নতুন নিয়ে যায়। এই নেওয়া-যাওয়ার মধ্যে আংকেলের সাথে গড়ে উঠে সম্পর্ক। আংকেলকে বাবার চোখে দেখে এই অঞ্চলের শিশুরা।
আজও এসেছে বেশ ক’জন শিক্ষার্থী। এরা কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর ছাত্রী। মাথায় হাত দিয়ে চিন্তিত অবস্থায় বসে ছিলেন আংকেল। শিশু অন্তরা আংকেলের চিন্তামগ্নতা দূর করতেই কানের কাছে গিয়ে বলে, আসসালামু আলাইকুম আংকেল। শিশুদের দেখলে অটোমেটিক যেকোন কঠিন চিন্তা দুর হয়ে যায় আংকেলের। মাথা থেকে হাত নামিয়ে বলেন, কী রে তোদের বই লাগবে?
জ্বি, আংকেল আপনার কী হয়েছে? বলে অন্য শিশু সাইফা। ‘না-রে কিছু হয়নি। নে কি বই লাগে নিয়ে যায়, যেগুলো পড়া শেষ হয়েছে সেগুলো নিয়ে এসেছিস? কেউ বলে হ্যাঁ, কেউ বলে না, আনতে ভুলে গেছি। শিক্ষার্থীরা বই পছন্দ করে, আংকেল রেজিস্টার খাতায় টুকে রেখে অফিস সহকারী মাইকেলকে দিয়ে প্রত্যেকের হাতে একটি করে বিস্কুতের প্যাক তুলে দেন। ওরা হাসতে হাসতে চলে যায়। সে হাসির মধ্যে নিজের মনের ভিতর চিন্তার ফাঁকে খানিক আনন্দ উঁকি দিয়ে ঢেউ মেরে যায়।
ছেলে হারেজকে নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়েছিলেন বাবা হাতেম আলী। ছেলেটা আইএসসি পাশ করে বেকার হয়ে ঘরে বসে আছে। সংসারের অভাব-অনটন। দিন-শ্রমিকের সংসার। পরিবারে তিন ছেলে এক মেয়ে। মেয়েটা ক্লাশ নাইনে পড়ছে। ছোট দুজনে একজন সিক্সে আরেকজন ফোরে পড়ছে। সবার বড় হারেজ। বেকারের মত সারাদিন তৈ তৈ করে ঘুরে বেড়ায়। এক হাতের কামাই পরিবারের ছয়জনের চলে কিভাবে। ছেলেটাকে কোন কাজে লাগাতে পারলে সংসারে কিছুটা সচ্ছলতা আসতো। দু’দিন পর বিয়ে করাতে হবে। বেকার ছেলের হাতে কোন বাবা তার মেয়েকে বিয়ে দিতে চাইবে। ওরও তো একটা ভবিষ্যত আছে। সে ভবিষ্যতটা যদি বাবা হয়ে না গড়িয়ে দিতে পারি, কষ্ট থেকে যাবে ব্যর্থ হওয়ার যন্ত্রণায়।
হাতেম আলী এই চিন্তায় দিন পার করেন। ঘরের বেড়ানোর কাজ করেন। দিন হাজিরা। কখনো চুক্তিতে। জেমকনে বেশ ক’দিন বেড়ার কাজ করেছিলেন। সেখানে তার সঙ্গী আরশেদ আলীর কাছ থেকে একটা পরামর্শ পেয়েছেন। আরশেদ আলী বলেছে, এই জেমকনের ইনচার্জ কবির স্যারের সাথে দেখা করে বিষয়টি বলতে। উনি চেষ্টা করলে আপনার ছেলেটারে কোন কোম্পানী কিংবা এনজিওতে ঢুকাইয়া দিতে পারব। এইভাবে ছেলেটা ঘুইর্যা না বেরাইয়া কবির স্যারের সাথে দেখা করুক। আরশেদ আলীর পরামর্শে হাতেম আলি এক সকালে কবীর আংকেলের কাছে আসেন। মুখোমুখি কথাবার্তায় নিজের পরিবারের অস্বচ্ছলতার কথা তুলে ধরেন।
কবীর আংকেল সবিস্তার শুনে হাতেম আলিকে শান্তনা দিয়ে আশ্বস্ত করেন, সাধ্যমত চেষ্টা করবেন আর আপনার ছেলেটাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবেন। হাতেম আলী মনে মনে আশ্বস্ত হোন। স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধাবোধ বেড়ে যায়। যদি কবীর ছেলের মত, কখনো সে ছেলের বয়সী হলেও পদবীতে তাকে স্যার বলে সমন্ধন করতে হয়। হাতেম আলী বাড়িতে গিয়ে ছেলেকে কাছে টেনে কবীর স্যারের কথা বলেন। বাবার মুখে কবীর আংকেলের নাম শুনে উচ্ছাস নিয়ে হারেজ বলে উঠে- ‘ও কবীর আংকেল, আমার সাথে পরিচয় আছে বাবা। খুব ভাল মানুষ।
হারেজও বেকারত্বের অভিশাপে মনে মনে নিজের ভিতর অসহায় বোধ অনুভব করতে থাকে। এভাবে আর কতদিন। বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি করতে হবে, মায়ের আঁচল খুলে টাকা নিতে হবে। বেকারকে যে কেউ মূল্যায়ন করে না। সামিয়াও ইদানিং এরিয়ে চলছে। সামিয়া হারেজ এর প্রেমিকা। সেও চাকরির জন্য চাপ দিচ্ছে। চাকরি না পেলে প্রয়োজন হলে অফিসের পিয়নকে বিয়ে করতে রাজী সে, এমন ৭ নম্বর সতর্ক সংকেত দিয়ে রেখেছে। এ দুর অবস্থা থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে হবে। আংকেলকে বললে একটা না একটা ছোটখাটো চাকরি জুটিয়ে দিবেনই। কেননা দেশের বিভিন্ন স্থানে উনার বন্ধু সার্কেল রয়েছে। তাদের কেউ কেউ নামিদামী কোম্পানী, এনজিও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা।
বিশ্বাস নিয়ে আংকেলের দিকে পা বাড়ায় হারেজ। দেখা-সাক্ষাত করে মনের কথা খুলে বলে আংকেলকে। আংকেল বহু চেষ্টা-তদবির করে মোবাইল ফোন কোম্পানীতে চাকরি জুটিয়ে দেন হারেজকে। হারেজ মনের আনন্দে চাকরিতে যোগ দেয়। ফিরে আসে সামিয়ার সেই নৈঃশব্দ ভালবাসা। কয়েক মাস পর বিকেলে বাবা হাতেম আলীকে নিয়ে আংকেলের সাথে দেখা করতে আসে হারেজ। আংকেল খুব খুশি হোন। হারেজের পিঠে হালকা চাপড় দিয়ে আনন্দ বিহলিত হয়ে আংকেল বলেন, যা বেটা, কেমন লাগছে এখন?
হারেজ আনন্দে কেঁদে ফেলে। আংকেলের পাঁ ছুঁয়ে সালাম করে। উঠ বাবা বলে হারেজকে তুলে বুকে আগলে ধরেন, হারেজ অনুভব করতে থাকে কবীর আকন্দ শুধু আংকেল নয়, ।
ক’দিন ধরেই নিশাত জ্বরে ভুগছে। জ্বর গিয়ে ঠেকেছে টাইফয়েডে। তার এই জ্বরের কথা শুনে ছুটে এসেছে সিয়ানা। ক্লাশের বন্ধুরাও। জ্বরের মুখে নিশাত কিছুই খেতে পারছে না। বাবা-মা খুবই চিন্তিত। চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, কিন্তু জ্বর কমছে না কিছুতেই। গতকাল থেকে ভাল করে চোখও খুলছে না নিশাত। চোখ বন্ধ করে আবোল-তাবোল প্রলাপ বকে। সিয়ানা কাছে গিয়ে কানে কানে বলে, নিশাত..এই নিশাত। সিয়ানা নিশাতের খুব ভাল বন্ধু। বন্ধুর কন্ঠস্বর শুনে চোখ খোলার চেষ্টা করে। পুরো শরীর জ্বরের আগুনে পুড়ে যাচ্ছে তার। কম্বলেও এ ঠান্ডা থামছে না। ছেলের এ জ্বরের প্রকোপে মা শারমিন শীলার চোখ বেয়ে পড়ছে কান্নার পানি।
মা..মা..ভাঙা স্বরে ডেকে উঠে নিশাত। মা দৌড়ে যান ছেলের কাছে। কী বাবা? বল বাবা বল..। মা, আংকেলকে আসতে বলবে একটু। কাউকে দিয়ে খবর দিয়ে পাঠিয়ে দিও। বলবে নিশাতের জ্বর হয়েছে। দেখবে আংকেল এক মুহুর্তও দেরি করবে না এ খবর শুনামাত্র। আন্টি আমি যাচ্ছি বলে সিয়ানার সাথে আসা কাকলি। আমি যাব, বলে আরও দুজন। উহু; তোদের কাউকে যেতে হবে না, আমি যাচ্ছি বলে সিয়ানা। এ কথা শুনামাত্র নিশাত কম্বলের ভিতর হতে ডান হাত বের করে সিয়ানার ফ্রক টেনে ধরে। সিয়ানা নিশাতের দিকে তাকায়। ইশারায় বুঝে নিশাত তাকে যেতে নিষেধ করছে। এই তাহলে তোরা যায়, আংকেলকে খবর দে। ওরা চলে যায়, সিয়ানা নিশাতের কাছে বসে পিরিচে রাখা আঙুর নিয়ে মুখে তুলে দেয়, খেতে পারে না নিশাত। মুখে অরুচি। তবুও সিয়ানার হাতের খাবার। ধীরে ধীরে কষ্ট করে খেতে চেষ্টা করে।
নিশাতের জ্বরের খবর শুনে পাগলের মত ছুটে আসেন আংকেল। বাইর বাড়িতে মোটরবাইকটা রেখেই নিশাতের কাছে এসে কানের কাছে বলে আংকেল, নিশাত…এই নিশাত এই দেখ-আমি তোর আংকেল এসেছি। কবীর আংকেল। চট করে চোখের পাতা খুলে নিশাত আংকেলের কন্ঠস্বর শুনে। আংকেল আসার সময় সঙ্গে করে খাবার নিয়ে এসেছেন। সে খাবার তুলে দেন নিশাতের মুখে। খেতে পারে না সে তবুও চেষ্টা করে। ক’দিন ধরে এই জ্বর? নিশাতের মা শারমিন শীলার কাছে জানতে চান।
‘নয় দিন, কবীর ভাই চোখ মুছতে মুছতে বলেন মা।
‘ ডাক্তার দেখিয়েছেন?
‘ হ্যাঁ, ডাক্তার শামীম স্যারকে দেখিয়েছি।
‘ ডাক্তার যে ঔষধপত্র দিয়েছেন, তাতে কী কম বলা যায়?
‘ হ্যাঁ। কিছুটা কমেছে। আর দু’চারদিন লাগতে পারে সুস্থ্য হতে জানিয়েছেন তিনি।
‘ যাক ভাল লাগলো জেনে। আংকেল নিশাতের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করেন।
তারপর কানের কাছে গিয়ে বলেন, থাক বাবা। পকেট থেকে কিছু টাকা বের করেন দেন নিশাতকে কিছু ফলফলান্তি কিনে খাওয়ানোর জন্য। সিয়ানার মাথায় মুচকি হেসে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কর্মব্যস্ততার তারণায় ভূ করে চলে যান আংকেল। নিশাতের সঙ্গীরা কান পেতে শুনতে থাকে আংকেলের মটরসাইকেলের শব্দ।
প্রতিবন্ধী আব্দুল কাদের। কথা বলে অস্পষ্ট। ইশারায় প্রায় সব কথা বুঝে। দর্জিপাড়া স্কুলে কোন অনুষ্ঠান হলে তাকে নাচতে দেখা যায়। গানের তালে নাচে, হাসে আবার হাতের করতালিতে প্রকৃতি নাচিয়ে তুলে। পরণে তার নতুন লাল শার্ট। ঈদের সময় কবীর আংকেল তাকে কিনে দিয়েছিলেন। ঈদের এ নতুন শার্টটি পেয়ে কীনা খুশি। এ গ্রামেই বাস করেন তরুণ লেখক সালেহ আহমেদ। অনলাইন আর প্রিন্টিং মিডিয়ায় লেখালেখি করেন। ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতাও করেন। ব্লগার হিসেবে বেশ পরিচিতি আছে উনার। দীর্ঘদিন ঢাকায় সময় কাটানোর জন্য আংকেলের সম্পর্কে জানা ছিল না তার। লোকের কাছে জেমকন গ্রুপের কাজী এন্ড কাজী টি স্টেট এর দর্জিপাড়া ডিভিশন ইনচার্জ কবীর আকন্দ, শিশুদের পরমা কন্ঠে কবীর আংকেল। সমাজসেবী, শিশু প্রিয় আর অন্ধচোখে জ্ঞানের প্রদীপ হয়ে উঠেছে কবীর আকন্দ। স্বচক্ষে দেখতে চান কে এই কবীর আকন্দ। ঘুরতে ঘুরতেই দেখা। প্রতিবন্ধী কাদেরের মত বেশ কিছু প্রতিনবন্ধী ও দরিদ্র শিশুর ঈদের নতুন পোশাক। কে দিয়েছে, জানতে গিয়ে জানতে পারেন-তাদের প্রিয় আংকেল কবীর আকন্দ।
তরুণ লেখক ঘুরে ঘুরে তথ্য নেন কবীর আকন্দের। সুদুর নেত্রকোনা থেকে ২০০৮ সালে দর্জিপাড়া কাজী এন্ড কাজী টি-স্টেটে ডিভিশন প্রধান হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। লেখাপড়া করেছেন জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভূগোল ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞান নিয়ে অনার্স-মাস্টার্স জীবন ভূগোলে চলে আসেন তেঁতুলিয়ায়। জীবন বইতে দেখেছেন কঠিন দারিদ্রতা চিত্র, বেকারত্বের অভিশাপে জীবন থেকে ক্ষয়ে যাওয়া মূল্যবান সময়। উত্তরের এ জনপদে এসে আবার চোখে ভেসে উঠে হতদরিদ্রদের জীবনচিত্র। এ অঞ্চলের শিক্ষিত বেকারত্ব। আর এ প্রত্যন্ত অঞ্চলে হতদরিদ্র শিশুরা লেখাপড়ায় অনেক পিছিয়ে। বাবা-মায়ের নিরক্ষরতাজনিত কারণে ঝরে পড়ছে হাজারও শিশু লেখাপড়া হতে। এই দূর্বি মানচিত্র দেখে মনটা নাড়া দেয় কবীর আকন্দের। মনের মানসে জেগে উঠে কিছু করার। সেই মানস ইচ্ছাকে প্রতিফলন ঘটাতে থাকেন এখানকার মানুষদের পিছনে দাঁড়িয়ে। তরুণ লেখক ঘুরতে ঘুরতে জানেন কবীর আকন্দকে। সময় করে দেখা সাক্ষাতের মাধ্যমে পরিচিত হোন। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন মানুষ আংকেল। পৃথিবীতে সবাই এক জিনিস হতে পারে না। প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরিতে পরিচিত হয়ে উঠেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাণপুরুষ নেলসন ম্যান্ডেলার মত কী সবাই ম্যান্ডেলা হতে পারবেন! প্রত্যেক মানুষই ভিন্ন ভিন্ন আঙিকে নিজেকে গড়ে তুলেন। স্বীয় ব্যক্তিত্ববোধ, সামাজিক স্টেটাস ও দায়িত্ববোধ আর মানুষের কল্যাণের জন্য যারা ভাবেন, কাজ করেন তারাই তো সত্যিকারের মানুষ। মনুষত্ববোধসম্পন্ন প্রাণী। তরুণ লেখক আংকেলের সাথে কথাবার্তায়, তাঁর সামাজিক দায়িত্ববোধ ও মানুষ মানুষের জন্য’ এই চির সত্যের জয়গান তার কাজের মাহাত্বের মধ্যে ফুটে উঠতে দেখেন। এই অঞ্চলে তো বহু অর্থবিত্ত মানুষ রয়েছেন, ভুরি ভুরি টাকা। কই তারা কি কখনো কবীর আংকেলের মত সমাজসেবী, মানবপ্রেমী হতে পেরেছেন? ভাবতে ভাবতে তরুণ লেখক হাটতে থাকেন। মনে মনে বাহবা দেন, শ্রদ্ধার সাথে স্যালুট করেন। পৃথিবীর হতদরিদ্র, দারিদ্র্রশ্রেণী মানুষদের জন্য কবীর আকন্দের মত মানুষগুলোর খুবই অভাব রয়েছে!
৩১ জানুয়ারি শুক্রবার। নিশাত সকালে উঠে পড়াশেষে খেলা করছিল। কাগজ কাটাকাটি করে বিভিন্ন ফুল, নৌকা তৈরি করছিল সে। এ বয়সেই যেন কারিগরী নৈপূনতা ফুটে উঠছে তার হাতের খড়িতে। চারুকলায় পড়ার ইচ্ছে। বড় হয়ে চিত্রশিল্পী ও শিল্পকারিগরী হওয়ার স্বপ্ন। অন্যান্য ছুটির দিনের মত আজও চলেছে এসেছে সিয়ানা নিশাতের সাথে খেলতে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত খেলেধুলা করে দু’জন। সন্ধ্যায় মা আফসানা এসে সিয়ানাকে নিয়ে যান। সিয়ানা নিশাতের কাগজের কাটাকাটি আর ফুল বানানোর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। নৌকা, গোলাপ। গোলাপটা খুব পছন্দ হয় তার।
‘এই নিশাত গোলাপটা আমাকে দিবে ? পছন্দের আবদার জানায় সিয়ানা।
মুখ তুলে গোলাপের মত হাসি টেনে নিশাত বলে-
‘নাও, তুমি চেয়েছ সেখানে আমি না করতে পারি?
‘ওহ্ থ্যাংকস নিশাত। আর হ্যাঁ চলো কমলা বাগানে। আজকের তারিখ তোমার মনে আছে?
‘ ও তাইতো। আজ তো আংকেল শিশুস্বর্গ পাঠাগার থেকে পাঠকদের মাঝে কম্বল বিতরন করবেন। টোকেন পাওনি?
‘ পেয়েছি তো। মায়ের কাছে রয়েছে টোকেনটা। মা আমার টোকেন দিয়ে যাও। আংকেলের ওখানে যাব।
‘এইতো আসছি বাবা, আয় খে নে আগে। রান্না ঘর থেকে ডাকতে থাকে নিশাতের মা শারমিন শীলা।
‘ চলো সিয়ানা খেয়ে নেই,
‘ না, আমি খেয়ে এসেছি নিশাত। তুমি খেয়ে নাও-কুইকলি।
‘ তুমি ছাড়া খাবই না….চলো না সিয়ানা।
‘ ওহ্–চলো। সিয়ানা জানে নিশাত তার কাছে থাকলে তাকে ছাড়া কিছুই খাবে না। তাই নিশাতের হাত ধরে মায়ের বাড়া খাবারে বসে যায়। মা শারমিন শীলা দু’জনকেই যতœ করে খাইয়ে দেন। খাওয়া শেষ হলেই টোকেনটা হাতে নিয়ে সোজা জেমকন কমলা বাগানের দৌড়ে ছুটে নিশাত-সিয়ানা। সে দৌড়ের দৃশ্যের দিকে ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখতে থাকেন নিশাতের মা মিসেস শারমিন শীলা।
জেমকন কমলা বাগান। শুক্রবারে ঝকঝকে চারপাশ ঘিরে রোদ। শিশুস্বর্গ পাঠাগারের পাঠক সদস্যরা এসে গোলছাউনিতে বসে আছে। নিশাত ও সিয়ানা চলে আসে। আংকেল অফিসে বসে আছেন তার বন্ধু নুরুল হুদাকে নিয়ে। হাতে ক্যামেরা নিয়ে গল্প করতে ছিলেন। আংকেলের চোখে তাদের চোখ পড়তেই নিশাত বলে উঠে-
‘আসসালামু আলাইকুম আংকেল,
‘ ওয়ালাইকুম আসসালাম, তোরা এসেছিস? মুখের রেখায় হাসি টেনে বলেন আংকেল।
‘ জ্বি আংকেল। নিশাতের পাশে সিয়ানা।
সিয়ানাকে কাছে টেনে আংকেল আদর দিয়ে বলেন-
‘ কি রে মা, ভাল আছিস?
‘ হ্যাঁ আংকেল। আপনি ভাল আছেন?
‘ হ্যাঁ-রে ভাল আছি। তোদের জন্যই ভাল আছি।
আংকেলের আদরে সিয়ানা উজ্জীবিত হয়ে উঠে। নিশাত আংকেলের টেবিলে গিয়ে ঝুঁকে পড়ে। টেবিলটার ওপর কাছ লাগানো হয়েছে। কাচের দৃশ্যপটে পরিস্কার পড়া যাচ্ছে আংকেলকে নিয়ে কিছু পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন। এই প্রতিবেদনগুলো আগেও নিশাত পড়েছে। আজও একবার পড়তে মনটা উতলা হয়ে উঠছে। সিয়ানাও ঘাড় টেনে পড়ার চেষ্টা করে। আংকেলের বন্ধু নুরুল হুদা এ দৃশ্য দেখে অবাক হোন। বন্ধুর প্রতি শিশুদের কত টান। আবার শিশুদের প্রতি বন্ধুর কী প্রাকৃতিক প্রেমমোহ। নিশাত যেন প্রতিটি প্রতিবেদন চোখের পলকে পলকে পড়ে ফেলে। হঠাৎ এক স্থানে এসে একটা ইংরেজীতে লেখা মেসেজ দেখে। সে লেখাটা পড়েই আংকেলকে জিজ্ঞেস করে,
‘আংকেল, এই ম্যাসেজটা কার?
‘ কী ম্যাসেজ রে বাবা,
‘ এই যে, “প্রথম কথা হচ্ছে, যারা কাজকে লড়ু মনে করবে না, তারা পারবে না। যারা শুধু চাকরিই করবে তারাও পারবে না। যারা প্রকৃতির সাথে একাত্ম হতে পারবে না, তারাও পারবে না। কাজকে মনে করতে হবে লড়ু এবং সেটা বহলড়ু করতে হবে। পৎবধঃ করতে হবে; ঢ়ৎড়ধপঃরাব হতে হবে। অপেক্ষা করলে সময় শুধু বয়ে যাবে, সময়ের সাথে থাকতে হবে সৃষ্টির নেশায়”।
‘ আমার বস কাজী শাহেদ আহমেদ।
‘ উনি কে, আংকেল?
‘ উনি, আমি যে জেমকন গ্রুপে চাকরি করি, তিনি এই শিল্প প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান।
‘ ও, উনি বুঝি খুব মানুষ! তাই না আংকেল? বলে উঠে সিয়ানা।
‘ হ্যাঁ রে মা। উনি খুব ভাল মানুষ। শিল্প সাহিত্যপনা উদার মনের মানুষ।
‘ জানেন আংকেল, দু’জন শিক্ষিত লোক উনার বদনাম করছিলেন। বলছিলেন, জেমকন গ্রুপ তেঁতুলিয়া উপজেলার জমিজমা বিভিন্ন কৌশলে নিচ্ছে। আর পত্রিকাতেও পড়েছি, সরকার কোম্পানীর কাছে জমি বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন এমন খবরাখবর। আর শুনেছি অর্গানিক চা, মিষ্টিতেও নাকি রাসায়নিক স্যার ব্যবহৃত হয়। তাহলে অর্গানিক হলো কীভাবে? বলে উঠে নিশাত।
‘ জানিস রে বাবা, নিন্দুকেরাই দুর্নাম রটনা করে। যারা স্বার্থে ব্যর্থ হয় তারাই এমন ভুরি ভুরি মিথ্যা কথা বলে। পত্রিকায় রিপোর্ট করে। প্রকৃতপক্ষেই আমার মালিক খুব ভাল মানুষ।
‘ থ্যাংকস আংকেল। বলে উঠে নিশাত ও সিয়ানা একসঙ্গে।
‘ কবীর চল সময় হয়ে এল। বেলা প্রায় এগারটা। বলে উঠেন আংকেলের অতিথি বন্ধু নুরুল হুদা।
‘ হ্যাঁ চলো বলে কবীর আকন্দ সবাইকে নিয়ে ঈদগা মাঠে আসেন। এখানে প্যান্ডেল সাজানো হয়েছে। শিশুস্বর্গ পাঠাগারের সদস্যদের পাশাপাশি আবাল বয়োযষ্ঠ নারী-পুরুষরাও এসেছে। তাদের অনেকে আংকেলের কমলা ও চা-বাগানে কাজ করে। লাইন ধরে আছেন সবাই। প্রতিবন্ধী জায়েদকে দিয়েই কম্বল বিতরন শুরু করেন অতিথি নুরুল হুদা। এরমধ্যে চলে এসেছেন এ এলাকার সেই তরুণ লেখক সালেহ আহমেদ। তিনিও এই পাঠাগারের একজন সম্মানিত পাঠক সদস্য। নিশাত-সিয়ানারাও উনাকে কবি পরিচয়ে চিনে। খুব ভাল কবিতা লিখেন। তেঁতুলিয়ার বাইরে তিনার যথেষ্ট লেখক হিসেবে পরিচয় রয়েছে।
শিশুস্বর্গ পাঠক পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র কম্বল বিতরন শেষ। নিশাত ও সিয়ানার হাতে লাল রঙের দুটি কম্বল। দুজনেই চরম খুশি। অনেকে টোকেন ছাড়া খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন। তাদের নাম তালিকাবদ্ধ নয়। তাদের অনেকে পাচ্ছে না এ কম্বল। চোখের সামনে কম্বল বিতরণ দেখে নিজের মনে আফসোস করতে থাকেন। কিন্তু করার কী আছে, নির্দিষ্ট জনের জন্যই এ কম্বল বিতরন। যারা পান না, তারা আংকেলকে বকতে বকতে চলে যান। এদের চোখে আংকেল খুব খারাপ বনে যান। দৃশ্যটা দেখে দূর থেকে ভাবতে থাকেন তরুণ লেখক সালেহ আহমেদ। গতকাল বাজারেও তিনি অনেকের মুখে নিন্দাবাক্য শুনেছিলেন। নিন্দুকদের চোখে ভাল লোকদের ছবি, বাস্তব উপস্থিতি কাটার মধ্যে লাগে। অথচ এই সমাজে এমনও কিছু নিন্দুক রয়েছে, যারা খোলস পরে ভাল মানুষ সাজার চেষ্টা করেন। সমাজপতি, সমাজসেবকের জোরতালে প্রকাশ করতে চান। নিজের ঢোল নিজেরাই পিটান। এই খোলস পরিহিত সমাজসেবীদের প্রতি বরাবরই একটা ঘৃণা রয়েছে তরুণ লেখকের মনের গন্ডিতে। আড়ালে সমালোচনা কেন, হিংসার আগুনে জ্বলা কেন? যদি রাঁগই থাকে, তাহলে আংকেলের মতো সমাজসেবায় প্রতিযোগীতায় নেমে অন্তত কয়েকশ বেকারত্ব ঘুচানোর চেষ্টা করুন না! বেশ আনমনা হয়ে ভাবতেছিলেন তরুন লেখক। কবি ভাইয়া, বলে দৌড়ে এসে সিয়ানা ও নিশাত দু’হাত ধরে।
কী রে তোমরা বাড়ি যাবে? জিজ্ঞেস করেন লেখক।
‘ হ্যাঁ ভাইয়া। চলুন না।
কবির হাত ধরে এ প্রজন্মের দু’শিশু বাড়ির দিকে যাচ্ছে। হাতে আংকেলের দেয়া লাল রঙের কম্বল। শীতের তীর্বতা হয়তো কিছুটা কমে গেছে, কিন্তু আংকেলে প্রতি ভালবাসার উষ্ণ ছোঁয়া প্রতিটি সময় রক্তের শিরা-উপশিরায় বহমান ¯সোতের মত বইতে থাকে।।