“অসহায়ত্ব” —তাসমি আক্তার

আজকে গরমটা একটু বেশিই পড়েছে । আমার ছোট ঘরটাতে ছোট্ট একটা জানালা । কিন্তু বাতাসের ছিটে ফোঁটাও নেই । ইশ যদি একটু ঝড়ো বাতাস ছুটতো! আমি বালিশের গায়ে হেলান দিয়ে বসে আছি । দম নিতে সামান্য কষ্ট হচ্ছে । একটু পর হয়তো দম বন্ধ হয়ে যাবে, যেই গরম পড়েছে! বসে থাকাটাও এক ধরনের অত্যাচার মনে হচ্ছে । যান্ত্রিক শহরে মেসবাড়ির বিছানায় বসে কি আর নিজের বাড়ির বিছানার আরাম পাওয়া যায়? নিজের বিছানার পরিচিত গন্ধটা আজ খুব মনে পড়ছে । খাটের পাশে একটা টেবিল। টেবিলে অব্যবহৃত কাগজ কলম । ভেবেছিলাম শারমিনকে একটা চিঠি লিখব, কিন্তু হাতগুলো কেমন যেন অসাড় হয়ে গিয়েছে । অনেক চেষ্টা করেও কলম ধরতে পারছিনা । মনে হয় আগেই চিঠিটা লিখে ফেলা উচিত ছিল । মা, আমার মা । এই মুহুর্তে আমাদের বাড়ির উঠানে মায়ের ধান এলানোর দৃশ্য চোখে ভাসছে । মা নিশ্চয়ই অপেক্ষা করে আছে কবে আমি ছুটি পাবো, কবে বাড়ি যাব। মা যদি জানত, এখানে আমি কেমন আছি, কিভাবে আছি? জানবে কিভাবে, আমিই তো কোনদিন জানাইনি কিছু । মাকে কষ্ট দিব কেন অযথা? বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে । মনে হচ্ছে ছাতির উপর কেউ দশমনি ওজনের পাথর দিয়ে চাপা দিয়ে রেখেছে আমাকে । নিশ্বাস নিতে পারছিনা ঠিক মত । আসতে করে শুয়ে পড়লাম বালিশে । আহা, মায়ের কোলটা এখন খুব দরকার ছিল । মা গায়ে হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতেন, আমিও জগতের সমস্ত ঝামেলা ভুলে মনে অদ্ভুত শান্তি নিয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম । এই ল্যাতল্যাতে বালিশে ঘুম আসে নাকি, ধুর! ঘামে বিছানা বালিশ সব ভিজে গিয়েছে ।

মাথার চুল গড়িয়ে ঘাম পড়ছে । পুকুরে একটা ডুব দিতে ইচ্ছে হচ্ছে । শরীরের প্রতিটি কোষ যেন আমার অসহায়ত্ব নিয়ে উপহাস করছে । ধীরে ধীরে পুরো শরীর প্রতারণা শুরু করে দিয়েছে । করবেই তো, আমিও তো শারমিনের সাথে প্রতারণা করেছিলাম । মেয়েটা আমার পিছে কম দৌড়ায়নি । মেয়েটির তো কোন চাওয়া ছিল না, শুধু আমার ভালবাসাই চেয়েছিল । আমি এক হতভাগা যে কৃপণের মত ওকে ভালবাসা না দিয়ে প্রতিবার অপমান করেছি । হয়তো সেই কারনেই আজ আমার এই পরিনতি । আমি আর চোখ খোলা রাখতে পারছিনা । তাও জানালার দিকে তাকানোর মিছে চেষ্টা করছি । যদি একটু ঝড় হয়! আধখোলা চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ বন্ধ হয়ে এল আমার । তখনই অনুভূতি হল, বাইরে বাতাস ছুটেছে । ঝড় এসেছে । বাতাসে সব উথালপাথাল লেগেছে । আমার টেবিল থেকে সায়ানাইডের ছোট বোতলটি পড়ে যাওয়ার শব্দ পেলাম । টুং! কেমিস্ট্রির ছাত্র হিসেবে ছোট এক বোতল সায়ানাইড জোগাড় করা আমার জন্য খুব কঠিন ছিল না । হ্যাঁ, আমি বিষ খেয়েছি !!!

গল্পটি পাঠিয়েছেন– সুজিত বিশ্বাস

দুঃখিত!