অসম্ভব নয় সম্ভব

আমাদের চারপাশে অনেক ঘটনাই প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। এসব ঘটনার পেছনে কোনো না কোনো কারণ সব সময় থেকেই যায়। যে সব ঘটনার কারণগুলো সাদা চোখে দেখা যায় সেগুলো খুব একটা মনোযোগ দাবি করে না। কিন্তু সে সব ক্ষেত্র, আমাদের বাড়তি মনোযোগ দাবি করে সেগুলোর ভাগ্য কিন্তু এক নয়। ঐ সব ঘটনা নিয়ে আলোচনার ডালপালা গজানোর অন্যতম কারণ হলো আমাদের আলস্য, ঘটনার গভীরে না ঢোকার আমাদের জাতীয় বৈশিষ্ট্য। যেমন ধরুন কোনো এক অনুষ্ঠানে আপনি সহ মোট আমন্ত্রিত অতিথিরা সংখ্যা তেইশ হন। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলেন ওদের একজনের আর আপনার জন্মদিন একই। খুব অবাক হবেন তাই না। অথচ সম্ভাবনার হিসেবে নিরপেক্ষভাবে বাছাই করা তেইশ জন লোকের মধ্যে যে কোন দু’জনের জন্মদিন একই হবার সম্ভাবনা কিন্তু পঞ্চাশের বেশি। অর্থাৎ এই ধরনের ঘটনা ঘটতেই পারে। এতে আশ্চর্য হবার তেমন কিছু নেই। অনেক সময় এই ধরনের ঘটনাবলীকে পুঁজি করে একদল প্রতারক ভাল ব্যবসা ফেঁদে বসে।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ও জন এফ কেনেডির কথাই ধরুন। এদের দু’জনের মধ্যকার শতবর্ষের ব্যবধানে একই ধরনের ঘটনাবলীর পুনরাবৃত্তি শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে যাবার যোগাড়। দু’জনের জন্ম সালের ব্যবধান একশ, আততায়ীদের নাম একই রকম, ফোর্ড কোম্পানীর গাড়ি ও থিয়েটার ইত্যাদি ইত্যাদি মিলে মোটামুটি ব্যাপারটি এরকম যে- ‘পৃথিবীতে অনেক ঘটনাই ঘটে যা বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করতে পারে না।’

আসলে কি তাই? এই ধরনের ঘটনা কিন্তু হরহামেশাই ঘটে। প্রতি শতাব্দীতে, ঘাটাঘাটি করলে, এরকম নজির অনেক বের করা যাবে। লিংকন ও কেনেডির বিষয়টি বাজার পাবার অন্যতম কারণ হলো-ঘটনাক্রমে এরা দু’জন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। নতুবা, উত্তর মনপুরার সলিমুদ্দি ও কুতুবদিয়ার মইজুদ্দিন মধ্যে এমনই মিল যে, তাদের দু’জনের বউ-এর নামও হয়তো এক। মোদ্দা বিষয় হলোÑ এই ধরনের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা মোটেই শূন্য নয়। সম্ভাবনার জগতে যে সম্ভাবনা শূন্য নয় তা ঘটতেই পারে, ঘটেও। এতে অবাক হবার কিছু নেই। হিসেব করে দেখা গেছে যে, কোনো শহরে নিরপেক্ষভাবে বাছাই করা দু’জন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ গড়ে দু’জন মধ্যস্থ ব্যক্তির মাধ্যমে অপর যে কোনো লোকের সঙ্গে পরিচিত। ট্রেনে ভ্রমণ করার সময় যদি দেখেন আপনার পাশের জন আপনার আপন খালার ফুফাতো দেবরের ভায়েরা ভাই, তাহলে সেটি কিন্তু ‘দৈব’ ঘটনা নয়, বরং এ সম্ভবই।

ব্রিটিশ গোয়েন্দা দফতর ১৯৪৪ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, ‘ডেইলি টেলিগ্রাফ’-এর প্রধান ক্রসওয়ার্ড নির্মাতাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে গ্রেফতার করেছিলো। কারণ সমাধানের সংকেত হিসেবে ডি-ডের পাঁচটি সাংকেতিক নাম ছাপা হয়েছিল একমাসের মধ্যে। ক্রসওয়ার্ড নির্মাতা মোটেই জার্মান গুপ্তচর ছিলেন না। সেনানায়কদের ও তার বাছাই করা শব্দের মধ্যে িিমলের কারণ—সমাপতন, কোইনসিডেন্স। এমন ঘটা মোটেই বিচিত্র নয়। সম্ভাবনার এই জগতে তাই অবাক হবার মত ঘটনা খুবই কম। তাৎক্ষণিকভাবে দ্বিধায় পড়লে, জানবেন, এ ঘোর কেটে যাবে। সত্য বেরিয়ে আসবে আঁধার কেটে। তবে, আমাদের মতো দেশে যেখানে অজ্ঞতা ও মূর্খতা চলছে হাত ধরাধরি করে, সেখানে যুক্তি দিয়ে কোনো ঘটনার মুখোমুখি হবার মতো মানুষের বড়ই অভাব। অথচ, ভণ্ড ও প্রতারকের দল কিন্তু বেশ ভারী। এদের মধ্যে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারীরাও রয়েছেন যারা ভাল কোনো গবেষণা করার চেয়ে সবুজ পুস্তকে মৌমাছির চলনের ব্যাখ্যা খুঁজে বেড়ান। শোনা যায়, বিগত শাসকের আমলে চট্টগ্রামের জনৈক আচার্যি রাষ্ট্রপ্রধানের ‘শুভক্ষণ’ নির্ধারিত করে দিতেন। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার কারণে দেশের সর্বত্র গড়ে উঠছে জনগণকে অদৃষ্টবাদী করে তোলার প্রতিষ্ঠান। শুধু রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা নয়, প্রচার মাধ্যমগুলোও এখানে অজ্ঞানতা ও কুসংস্কারের ব্যাপ্তি ঘটিয়ে চলেছে। তাই দেখা যায়, কোনো কবিরাজের দশটি ব্যর্থতার বদলে একটি সাফল্যের কথা খুব জোরেশোরে প্রকাশ পায় এবং একই সঙ্গে কোনো ডাক্তারের নিরানব্বইটি সাফল্যের পরিবর্তে একটিমাত্র ব্যর্থতাই খবর হয়ে উঠে।

অন্ধকারের এই দেশে তাই যুক্তিবাদী হয়ে ওঠা মোটেই সহজ নয়। তবে তা অসম্ভবও নয়। আপনার আশপাশের কোনো ঘটনাবলী ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হলে, অন্য কারো শরণাপন্ন হোন। মনে রাখবেন- দৈবের ওপর ভরসা করে কোনো জাতি নিজেদের ভবিষ্যৎ পাল্টাতে পারেনি। আমরাও পারবো না। সাহায্যের জন্য হাতের দরকার হলে নিজের বাহুর শেষ মাথায় দেখবেন। ওখানেই আপনি দু’টো হাত পেয়ে যাবেন।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!