অষ্টমী পুজোর পদ্ম

প্রতিবছরের মতো এবারেও শ্রীপল্লির মিত্রবাড়িতে পূজোর আয়োজন হয়েছে।ষষ্ঠীমির সন্ধেয় পূজোর ফর্দ হাতে বাড়ির কাজের মানুষ হরি কে সঙ্গে নিয়ে বাজারের দিকে গিয়েছিলেন জয়াদেবী।কিন্তু আর সব হলেও অষ্টমি পুজোর পদ্ম ফুলের ব্যবস্থা করতে পারেনি।দুই তিন টি ফুলের দোকানে ঘোরা সার হয়েছে।সবার এক কথা পূজো এবার দেরিতে।পাকা কথা দেওয়া মুশকিল।পুজোয় কলকাতাবাজারে পদ্ম ফুলের অহাভ নেই।কিন্তু ব্যাপার হল সে সব হিম ঘরের জিনিস।দেড় দুই মাস তোলা বাসি ফুল।সদ্য ফোটা পদ্ম এবার বাজারে এসেছে সামান্য যা বাজারে আসে তাই এত চাহিদা যে,উপযুক্ত দাম দিয়ে তা পাওয়া যায়না।অথচ মিত্রবাড়ির অষ্ঠমী পুজো সেই গোঁড়া থেকে হয়ে এসেছে টাটকা পদ্ম দিয়ে।শ্বশুর স্বামী যতদিন ছিলেন,এসব নিয়ে ভাবতে হয়নি জয়াদেবীকে।কয়েক বছর হল শ্বামির মৃত্যুর পর সব দায়িত্বই এখন তাঁর কাধে।আসলে শ্রিপল্লির মিত্রবাড়িতে আজ মানুষ।বলতেই মাত্র দুইজন।বিধবা জয়াদেবী আর তাঁর মেয়ে মাধুরী।এছাড়া পুরনো কাজের মানুষ হরি।বয়স হয়েছে এখন পেরে উঠবে না।মাধুরী অনেক বার মাকে বলেছে,কেউ যখন তেমন গাঁ করে না,এবার পূজোটা বন্ধ কর মা।মেয়ের কথায় জয়াদেবী শুধু হাসেন।বেশ জানেন তা হবার নয়।শ্বশুর ঠাকুরদের কাছে শুনেছে এক সময় কি ধুমধামেই না হত এ বাড়ির পুজো।শ্রিপল্লিতে তখন সার্বজনিন পুজো শুরু হয়নি।সবাই তাকিয়ে থাকত এই মিত্র মাড়ীর দিকে।ঝুড়ি ভর্তি প্রসাদ বিলি হত।অষ্ঠমি দিন লুচি মিষ্টি।তখনও এদিকে বিদ্যুৎ আসেনি।সন্ধের পর জ্বলে উঠত হ্যাঁজাক বাতি।ঢাক আর কাসর-ঘন্টা আওয়াজ গম গম করত বাড়ি।বেঁচে থাকতে কি করে বন্ধ করবে পূজো।তাঁর পর হেয়ছে পুরুহিত নিবারব চক্রবর্তী।এ বাড়ির ছোট-বড় সবার ঠাকুরদাদা।এই শ্রিপল্লিতেই থাকেন।আশিপার হয়ে গেছে অনেক দিন।বয়সের ভারে নুব্জ অস্কত দেহ।তবু পুজো কাছে এলেই হাজির হবেন।অন্যথা হয়নি কখনো।আসলে মিত্রবাড়ির এই পুজোর সাথে পুরোহিত জড়িয়ে পড়েছেন নিবিড় ভাবে।সে সেই প্রথম বছরের কথা।দেশ ভাগের পর শ্রিপপল্লিতে সবে এসে ঘর বেধেছেন।তবু পুজোর আয়োজন ভাটা পড়েনি।তবে সমস্যা দেখা দিয়েছেন পুরোহিতের নিয়ে।পৈতৃক কুলপুরুহিত যিনি ছিলেন,দেশেই রয়ে গেছেন।কাকে দিয়ে পুজো হবে?শেষে ওঁই শ্রিপল্লিতেই খোঁজ মিলেছিল নিবারন চক্রবর্তী।তখন মাত্র বছর ত্রিশ বয়স।দেখে তেমন ভুরসা না হলেও উপায় ছিল না।কিন্তু সেই মানুষটির পুজো-পদ্ধতি,মিয়মনিষ্ঠা দেখে অভিভুত হয়ে গিয়েছিলেন মিত্রবাড়ির প্রাচীনজনেরা।পজো শেষ হলে বাড়ির বড় কর্মী অশিতিপর বিরজাদেবি নাতির বয়সী নিবারন চক্রবর্তির পায়ে গড় হয়ে প্রণাম করে বলেছিলেন,ঠাকুরদাদা এবাড়ির পুজো অনেক দিনের।পুরহিতের নিয়ে অনেক ভাবনায় ছিলেন সবাই।কথা দিন,প্রতিবছর এই বাড়ির পুজো ঠিক এই ভাবে তুলে দিয়ে যাবেন।প্রত্যুর নিবারনচক্রবর্তী বলেছিলেন,ভাব্বেন না মা জননী।যতদিন বাচি এবাড়ীর ভার আমার।সেই শুরু।আজ মিত্র শ্রিপল্লির মিত্রবাড়ির অবস্থা পালটেছে,কিন্তু পুরোহিত নিবারন চক্রবর্তী সামান্য পালটেছে।ছোটমিত্তির মারা যাবার পর পুজোয় দক্ষিন বাবদ ষোল আনা বা একটাকার বেশি এখন আর নেয় না।এ ব্যাপারে অনেক অনুরোধ করেনও টলানো যায়নি তাকে।কিন্তু অন্য ব্যাপারে পালটাননি এতটুকুও।
গত বছর অষ্ঠমির পদ্মফুল জোগাড় করতে পায় হিমসিম খেয়ে গিয়েছিল জয়াদেবী কে।বেলা বেড়ে যাচ্ছে,অথচ ফুল তখনও এসে পৌছায়নি।এ বছর তাই নিবারব চক্রবর্তী এক সকালে নিবাচক্রর্তি যেদিন যথারীতি লাঠি ঠুকঠুক করে বাড়িতে এসে হাক দিলেন,কই গো মা জননী,কাগজটা নিয়ে এসো।ফর্দা করে নিয়ে যাই।সে দিন পদ্ম ফুলের প্রসঙ্গে আসতে জয়াদেবী সামান্য ঢোক গিলে বলেছিলেন,ঠাকুরদাদা,দিন দিন টাটকা পদ্মা পাওয়া বড় সমস্যা হয়েপড়েছে।
গত বছর যা হল!এ বছর পূজো আবার দেরিতে,বাজারে যা মেলে তাতেই কাজ মিলিয়ে নিন তাতে।বয়সের ভারে বৃদ্ধ লোকটা তেমন মাথা সোজা করে দাড়িয়ে থাকতে পারে না।কিন্তু জয়াদেবির কথায় বৃদ্ধের কথায় মুহুর্তে সোজা হয়ে উঠেছিল।হা করে খানিক চেয়ে বলেছিল,সে কি!মিত্রবাড়ি পুজোয় অষ্ঠমির আর সন্ধি হবে বাসি পদ্মে!তাই হয় মা জননী?এর পর জায়াদেবী আর কথা বাড়াননি।আজ পুজোর ফর্দ নিয়ে বাজারে গিয়ে এই আশঙকাই সত্যি হল।ভাবতে ভাবতে বাড়িতে পা দিয়েছিলেন,মেয়ে মাধুরির মেখের দিকে তাকিয়ে একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলেন,মায়ের চোখ বুঝতে সমস্যা হল না তাঁর কিছু একটা হয়েছে ইতিমধ্যে।বলেই ফেললেন,হ্যাঁ করে মাধু মুখ অমন করে শুকনো কেন তোর?কি হয়েছে।
ইতিমধ্যে বাড়িতে দু,চারজন আত্নীয়-স্বজন এসেছেন।তাদের নিয়ে ঠাকুরদালানে পূজোর গোছগাছ করছিল মাধুরী।মায়ের কথায় চমকে উঠে তাকাল।এক মুহুর্তে নীরব থেকে বলল,কই কিছু হয়নি তো মা।মায়ের চোখ দেখতে ভুল হল না,মেয়ের দু,চোখে কোন যেন ছলোছলো হয়ে গেল।তবে আর কথা বাড়াল না।মাধুরী এবছর পোস্টগ্রায়ুট শেষ করেছে।এবার বিয়ে দিবেন ঠিক করেছে।কয়েক টা ভাল সম্বন্ধও এসেছিল।কিন্তু মেয়ে রাজি হয়নি।আসলে ছোট বেলায় এই পিতৃহারা তাঁর এই মেয়েটি বরাবারি আবার চাপা স্বভাবের।আগে তবু এতটা ছিল না।এ বাড়ি তখনও এত ফাঁকা হয়ে যায়নি।শ্বামি বেঁচে।এই বাড়ির অবস্থা তেমন ভাল ছিল না ওদের।মুখ চোরা গোছের ছেলেটা পুজোর বাড়িতে এলে মাধুরী খুশি হয়ে উঠতে সবচেয়ে বেশি।তখন না বুঝলেও আজ বেশ বোঝেন,আসলে দু জনের শ্বাভাবে মিল ছিল অনেক।নিতান্ত সাধারন মানের সেই ছেলেটা পরে যে এত উন্নতি করবে তখন ভাবতে পারা যায়না।কলেজের পড়া শেষ করে সৌম্য স্কালারশিপ নিয়ে ইউ,এস,এ চলেগিয়েছিল।সেখানে মক্ত চাকুরে এখন।আর দেশের ফেরেনি।মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সেই সব কথা ভাবছিলেন জয়াদেবী।প্রসঙ্গ পালটে মাধুরী বলল,হ্যাঁ মা,পদ্ম ফুলের ব্যবস্থা কিছু হল না?উত্তরে জয়াদেবী মেয়েকে ব্যস্ত না করে বলেন,ও নিয়ে অযাথা ভাবিস তুই।দুর্গাপুজোয় টাটকা পদ্ম ফুল তেমন পাওয়া যায় না।তাঁর কারণ পদ্ম ফুলের সব চেয়ে বেশি হয় গরমের সময়।উত্তরে বাতাস আর শিশির পড়া শুরু হলেই পদ্ম পুকুর শুকিয়ে যায়।ব্যাবসায়ীরা তাই দুর্গাপূজোর পদ্ম আগে থাকতেই তুলে হিম ঘরে মজুত রাখে।বাজারে সেই ফুল বিক্রি হয়।পুজো দেরিতে হলে টাটকা ফুলের আকাল তাই আরও বাড়ে।তবে ব্যতিক্রমও হয়।যেমন চাঁদপাড়ার পয়ত্রিশ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশের এক নায়াজুলি।এই অক্টোবরের শেষ সপ্তাহেও পদ্ম ফুলে ভরতি।হঠাৎ খবরটা পেয়ে হাতিবাগান বাজারে জনার্দন জানা তাই আর সময় নষ্ট করেনি।সপ্তমীর বিকালে পৌঁছে গিয়েছিল চাঁদপাড়ায়।রাতটা ওখানে কাটিয়ে ভোঁর ভোঁর সকালে গাড়ী চালিয়ে চলে আসবে কলকাতায়।এই মতলব।তবে যথাস্থানে পৌঁছে খোঁজ খবর করতে গিয়ে গোঁড়ায় দমে গিয়েছিল একটু।পদ্ম জন্মায় কাদা ভরতি পোঁড়া মজা পুকুরে।সেই কারনে এসব পুকুরে আস্তানা পাতে বিষধর খরিশ আর পদ্মগোখরোর দল।পদ্মের ডাটায় তাই জড়িয়ে থাকে এই সব বিষধর সাপ।চাঁদপাড়ায় এই নয়াজুলিতেও এবার তেমনটাই হয়েছে।ফুল তুলতে গিয়ে অনেকে ছোবল খেয়েছে কয়েক জন।এই জন মারা গেছে।সেই ভয়ের পর আর কেউ পদ্ম তুলতে নামেনি।কিন্ত্য করিতকর্মা মানুষ জনার্দন জানা তাই বলে পিছিয়ে যায়নি।কাছের পিঠের কেউ রাজি হবে না বুঝে ফুল তোলার
জন্য বনগাঁর ওদিক থেকে দু,শ টাকায় রাজি করিয়েছে একটি ছেলেকে।খরচ একটু বেশি পড়লেও পরোয়া করেনি।হিসাব করে দেখেছে,অস্টমির সকালে কয়েকশো ফুল কলকাতায় আনতে পারলে ভালই লাভ হবে।ফুল তুলবার জন্য জনার্দন জানা যাকে ঠিক করেছিল,শিবু মালাকার নামে সেই ছেলেটির বয়স বছর পনের মাত্র।বড় অহাবের সংসার ওদের।বাবা নেই।মা বাড়ি বাসন মাজার কাজ করে।দিন কয়েক হল অসুস্থ হয়ে পড়েছে ঘরে।ছোট বোনটা অত বোঝে না।পুজোয় একটা নতুন জামার বায়না ধরেছে দাদার কাছে।জনার্দন জানার প্রস্তাবে তাই এক কথায় রাজি হয়ে গিয়েছিল।কিন্তু অস্টমির ভোঁরেই যথাস্থে হাজির হতেই শিবুর চোখ দুটো সন্দেহ দুলে উঠল।এর আগে জলা থেকে পদ্মা তুলেছে।তাই পদ্মা ভঁরা নয়াজুলিটা যে ভাল নয়,বুঝতে বাকি রইল না,কিন্তু উপায় ছিল না।ঘরে ছোট বন আর অসুস্থ মায়ের মুখটা মনে পড়লে মা মনসার কথা মনে করে নেমে পড়ল জলে।তবু ঘটেই গেল ব্যাপারটা।জলের পাকে সাবধানে পা ফেল পদ্মডাটার কাটা এড়িয়ে ফুল তুলে এগিয়ে চলেছিল শিবু।হাটের বোঝা ভারি হয়ে উঠলে আটি বেঁধে জমা করে যাচ্ছিল এক ধারে।ফেরার পথে তুলে নেবে।ভয়ানক ব্যাপারটা ওই সময় ঘটল।ও তখন জলের অনেকটা ভিতরে গিয়েচিল।পূর্বা আকাশের দিগন্তের দিকে সূর্য ইতিমধ্যে চড়া হতে শুরু করেছে,জলের উপর হালকা কুয়াশা আস্তর মিলিয়ে আসছে দূরত।পাশের পদ্ম ডাটার ভিতরে হঠৎ নেড়ে উঠল কিছু।মুহুর্তে পদ্মডাটার গায়ে পেচিয়ে থাকা মস্ত এক পদ্ম গোখরো উঁচু হয়ে ফনা মেলে দিল।সতর্ক থাকলেও দূরত ব্যাপারটা ঘটে গেল যে ।প্রায় কিছুই করার ছিল না।তবে বুদ্ধি হারায়নি।বুঝতে পারছিল সামান্য নড়লেই ছোবল দেবে প্রানিটা।তাই সে সেই ভাবেই দাঁড়িয়ে রইল স্থির ভাবে।উপরে দাঁড়িয়ে জনার্দন যানা দেখেছিল ব্যাপারটা।ভেবেছে সাপের ছোবল খেয়ে ছেলেটা ছুটে আসবে পাঁড়ের দিকে।কিন্তু তেমন হল না দেখে আশা জেগেছিল,দেখার ভুল হয়ত।তাই জোরে চিৎকার করে ডাকল বার কয়েক।কিন্তু ওদিক থেকে কোন সাড়া দিল না।বরং দেখল ধীরে ধীরে জলের উপর নেতিয়ে পড়ল ছেলেটা।দেখে বেজায় ঘাবাড়ে গেল জনার্দন জানা।কি করবে ভাবছে,ইতিমধ্যে দুএকজন করে চলতি মানুষ জড়ো হতে শুরু করেছে।ছেলেটাকে সাপেই কেটেছে,সেই সন্দেহ শুরু হয়ে গেছে শোরগোল।বিপদজনক নয়ানজুলিতে কে ওকে নামাল।তাই নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা।ব্যাপার দেখে প্রমাদ গনল জানর্দন জানা।ফুলের আর আশা নেই।দেরি করলে বরং ঝামেলা বাড়বে আরও।ভাড়া করা গাড়িটা দাঁড়িয়ে ছিল অনেক দূরে।হতাশ জানার্দন জানা সেই গাড়িতে দূরত সড়ে পড়ল ওখন থেকে।আসলে সাক্ষাত মিত্যুর সামনে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি শিবু।একটু পরেই চেতনা হারিয়ে কতকটা ঘোরের ভিতরে চলে গিয়েছিল।ওর সেই ঘর কাটল যখন অদুরে হাওয়ার ধারে অনেক লোকজন।চিৎকার চ্যাচামেচি।সন্তর্পনে চারপাশে চোখ ঘুরিয়ে ভয়ানক সাপটাকে দেখতে পেল না কোথাও।চলে গেছে।সাবধানে উঠেদাড়াল শিবু,চারপাশে নজর তুলে রাখা পদ্মের গোছাগুলোর কতক হাতে নিয়ে দূরত উঠে এল পাড়ে।ছেলেটা বেঁচে আছে দেখে ততক্ষণে সাড়াপড়ে গেছে উপস্থিত লোকজনের মাঝে।অনেকেই জনতে চাই।খোঁজ খবর না নিয়ে ওঁই ভয়ানক জলায় কেন নেমেছিল।কিন্তু অযথা সে সব প্রশ্নের জবাব না দিয়ে শিবু তখন একরাশ উৎকন্ঠা নিয়ে ভিতরে খুঁজে বেড়াচ্ছিল জনার্দন জানাকে।ওঁই সময় সাদা ঝকঝকে গাড়ি আসছিল এদিকে।আরোহরি নির্দেশে উর্দি-পরা ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছি ঝড়েল বেগে।পিছনে বসে দামি সুট পরা বছর তিরিশ বয়সের এক ভদ্রলোক।গত রাতে গাড়িটা রওনা হয়েছে ঢাকা থেকে।খানিক আগে চেকপোস্ট পারহয়ে গেছে কোলকাতার দিকে।এ,সি গাড়ি হলেও খুলে দেওয়া হয়েছে দু,পাশের জানলা।কার্তিকের ভোরের হালকা হিমেল বাতাস গায়ে মেখে ভিতরে মানুষটি তাকিয়ে দেখছিল দু,ধারের দৃশ্য।ফসল ভঁরা খেত,কাশফুলে হাওয়া হিমেল বাতাস গায়ে মেখে ভিতরে মানুষ তাকিয়ে দেখেছিল দু,ধারের দৃশ্য।ফসলভঁরা ক্ষেত,কাশফুলে হাওয়ার দোল।গৃহস্থের উঠ
োনে ঝরে পড়া ভোরের শিউলি।পদ্ম ফুলে ভঁরা নয়ানজুলিটা ওঁই সময়ে নজর পড়ল তাঁর।মুগ্ধ হয়ে তাকিয়েছিল।হঠাৎ পথের ধারে মানুষের জটলার দিকে চোখ পড়তে দেখল,এক বোঝা সদ্য তোলা পদ্ম ফুল নামিয়ে বসে রয়েছে একটি ছেলে।তৎক্ষণাৎ গাড়ি থামাতে বলল ড্রাইভার কে।নির্দেশ পেয়ে গাড়িটা কাছে এসে দাড়তেই দূরত গাড়ি থেকে নেমে মানুষটি এগিয়ে গেল সেই দিকে।কিছু ফুল নেব ভাই।বিক্রি করব।জনার্দন জানার দেখা না পেয়ে হতাশায় পথের উপর পদ্মের গোছা নামিয়ে আকাশ পাতাল ভাবছিল শিবু।লোকটা পালিয়েছের সন্দেহ নেই।এখন জিবনের ঝুকি নেওয়া এত কষ্টের ফুল গুলো কি করবে।ভেবে পাচ্ছে না,হঠাৎ খদ্দের পেয়ে চাঙ্গা হয়ে উঠল।মিনিট দুই পরেই গাড়ি আবার ফের চলতে শুরু করল কোলকাতার পথে।বাছাই করা সেরা ফুল গুলো শুবু তুলেদিয়েছে গাড়িতে।ক্রেতা মানুষটি ওকে নিরাশ করেনি একশোঁটাকার পাঁচটা নোট প্রায় জোর করেই গুজে দিয়েছে হাতে।এতটা একেবারেই আশা করেনি ও।শ্রীপল্লির বাড়িতে তখন ঢাক বাজছে।পুরোহিত নিবারন চক্রবতির পুজোর প্রস্তুতি প্রায় শেষ।পদ্ম ফুলের জন্য শুরু করতে পারছেনা।ফুলের খোঁজে ভোরে হাওড়া হাটে পাঁঠানো হয়েছে হরিকে।এখনও সে পৌছায় নি,চিন্তায় কপালে ভাজ পড়েছে সবার।জয়াদেবী ঘরবর করছেন।ওঁই সময় সেই মস্ত বিদেশি গাঁড়িটা বাড়ির সামনে এসে দাড়াল।উর্দিধারি ড্রাইভার দরজা খুলে দিতেই নেমে ভিতরে সেই মানুষটি।তাকে দেখেই উচ্ছাসে চেঁচিয়ে উঠল মাধুরী,ওমা!সৌম্যদা তুই!ঢাকায় এসেছিস,অথচ একটা ফোনও করলি না।হঠাৎ এমন আক্রমনের জন্য একেবারে তৈরি ছিল না।থমথমে খেয়ে বলল,আমি,আমি এসব বুঝি গোপন থাকে সৌম্যদা!এক রাশ অভিমান ঝড়ে পড়ল মাধুরীর গলায়।আসলে সেই সষ্ঠির সন্ধায় কলকাতার এক টিভি চ্যানেল প্রচার করেছিল খবরটা।বাংলাদেশ অয়াটার ডেভলপমেন্ট বোর্ডের কাজে টিভিতে হঠাৎ সেই খবর দেখে মাধুরী বুঝতে বাকি থাকে নি মানুষটি কে।মনটা ভিষন খারাপ হয়ে গিয়েছিল তারপর।সেই পাঁচ বছর আগে সৌম্য ওদেশে চলেগিয়েছিল।তারপর আর ফেরেনি।গোঁড়ার দিকে সামান্য যোগাযোগ ছিল দুজনের।মাঝে মধ্যে ফোনে কথা হত দুজনের সৌম্যদাদা তখন পড়াশুনায় নিয়ে ব্যস্ত।তাই মাধুরী নিজেই গুটিয়ে নিয়েছল নিজেকে।ক্রমশম যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছিল অন্য তরফও।গত দেড় দুই বছর আর জোগাড় নেই।সেই মানুষটি কোলকাতার এত কাছে এসেও একবার যোগাযোগ করবে না।ভাবতেই অভিমানে ভেঙ্গেগিয়েছিল মাধুরীর।গত কদিন মায়ের শত প্রশ্নের তাই জবাব দেয়নি।এবারের কোন কথা বলল না।চোখ নামিয়ে দাঁড়িয়ে রইল শুধু।মাধুরীর সেই মুখের দিকে তাকিয়ে ব্যাপারটা যেন বুঝতে পেরেছিল সৌম্য।বলল,অন্য্য হয়ে গেছে রে মাধু।আসলে ভেবেছিলাম একটা সারপ্রাইজ দেব সবাইকে।তা এমন হয়ে যাব ভাবেনি।তাঁর পর ঢাকার কাজ শেষ হতে সেরি হয়ে গেল।ততক্ষণে জয়াদেবি ছুটে এসেছেন।সৌম্য বলল,রাঙামামী বিশ্বাস কর,মাধুকে আমি ব্যথা দিতে চাইনি।উত্তরে জ্যাদেবি শধু বললেন,সৌম্য ভিতরে এস বাবা।কতদিন পরে-সেই কথায় হঠাৎ যেন থমকে উঠল সৌম্য, ছুটে গিয়ে গাড়ি থেকে সেই ফুল দু,হাতে সেই পদ্ম ফুলের গোছা এনে তুলে দিল মাধুরীর হাতে।ওমা সৌম্য তুই, তুই পুজোর ফুল এনেছিস!সৌম্য সে কথার কোন জবাব না দিয়ে শুধু মৃদু হাসল।কে যেন বলল,অস্টমি পুজোর পদ্মা এসে গেছে ঠাকুর দাদা।পুজো শেষ করে দিন এবার।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!