অবসর

জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন। কালো মেঘে ঢেকে আছে পুরোটা আকাশ। মেঘ জমেছে মনের কোণেও। আকাশের মেঘ কিছু পরেই সরে গেলেও, মনের বিষন্নতার কালো মেঘ এতো সহজেই কি তাঁকে নিষ্কৃতি দিবে?

একটু আগে এইচ,আর ডিপার্টমেন্ট থেকে ঘুরে এলেন। ওনাকে ম্যানেজার ডেকেছিলেন। হাতে আর চার মাস সময় আছে। বয়স ৬০ হতে যাচ্ছে এই চার মাস পর। বাধ্যতামূলকভাবে এবার অবসরে যেতেই হচ্ছে।

জানালার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিজের সেকশনের দিকে ফিরলেন। এই ষ্টোরটির প্রতিটি যায়গায় রয়েছে তার হাতের ছোয়া- হৃদয়ের পরশ। গত পনের বছরে নিজের মেধা দিয়ে এটিকে গড়ে তুলেছেন। ইমপ্লিমেন্ট করেছেন যুগের সাথে তাল রেখে। এগুলোকে ছেড়ে চলে যেতেই হচ্ছে তাহলে! একটা দীর্ঘশ্বাসের সাথে কিছু জমাট বেদনাও যেন বের হয়ে সেকশনের ভিতরের আবহাওয়াকে ভারাক্রান্ত করে তোলে।

গত পঁইত্রিশ বছর ধরে হাসিনা বেগম রয়েছেন ওনার সুখ-দুঃখের সাথী হিসেবে। এই চাকরি থেকে ‘অবসর’ নেবার পরে কি করবেন? ভাড়া বাসায় থাকেন। দুজনের থাকা-খাওয়ার খরচ আর ঘরভাড়ার টাকাটা তো মাস গেলে হাতে থাকতেই হবে।

সেকশনের মেইন ডোর বন্ধ করে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে যেতে যেতে ভাবলেন, তিনি কি ভুল করলেন? অন্যদের মত ‘উপরি আয়ের’ দিকে না গিয়ে সৎ থাকাটা কি সঠিক ছিল? সিকিউরিটিদের সালামের জবাব দিতে গিয়ে একটু ভাবনা ছিন্ন হলেন।

উত্তর দিতে গিয়ে নিজের উত্তরও পেয়ে গেলেন। আল্লাহপাক তো রয়েছেনই। তিনিই তো তাকে এখনো কর্মক্ষম এবং সুস্থ রেখেছেন। আল্লাহর দুনিয়ায় একটা না একটা কাজ পাবেনই ইনশা আল্লাহ।

বিশাল কারখানার মেইন গেইট দিয়ে একজন মোবারক সাহেব বের হয়ে এলেন। মুখে হাসি আর অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস। হাতে আর চার মাস সময় আছে, এরপর অবসরে যাবেন- এমন ষাট বছর ছুঁই ছুঁই একজন মানুষ আর পিছন ফিরলেন না। সোজা রাস্তাটি একদম জীবনের পথেই চলে গেছে। তিনিও সেদিকে পা বাড়ালেন।

মুখোশ

►সোবহানবাগের ঘটনা◄

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *