অপব্যয়ের অভিনব সংজ্ঞা

এক ব্যক্তির ব্যবসা-বানিজ্য ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় সে খুব অভাবে পড়েছিল। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে এক বুজুর্গের কাছে গিয়ে সাহায্য চাইলো।
বুজুর্গ তার অভাবের কথা শুনে খুব দুঃখিত হলেন এবং বললেন, “সাহায্য করার মত আমার কাছে কিছু নেই। তবে আমার এক সম্পদশালী বন্ধু আছেন। তার কাছে গিয়ে আমার কথা বললে আশা করি তিনি সাহায্য করবেন।”

লোকটি সেই বিত্তবান লোকের কাছে গমন করলো। যখন তার বাড়ির দরজায় পৌঁছলো, তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ভিতর থেকে একজন লোক তার স্ত্রীর সঙ্গে রাগারাগি করছে, “তোমাকে কতবার বলেছি বাতির সলতা মোটা করবে না। এই ছোট ঘরটিতে যতটুকু আলোর প্রয়োজন, তার জন্য একটি চিকন সলতাই যথেষ্ট। মোটা সলতা দিয়ে বেশি তেল পোড়ানোর প্রয়োজন নেই।”

আগত লোকটি এ কথা শুনলো। ভাবলো—ভালো লোকের কাছে আমাকে পাঠিয়েছে। এত কৃপণের কাছে সাহায্য চাওয়ার আগেই এখান থেকে পালিয়ে যাওয়া উচিত।
একথা চিন্তা করে সে ফিরে যেতে উদ্যত হলো। পরে আবার ভাবলো, সাহায্য না চেয়ে বুজুর্গের আদেশ পালনের জন্য দেখা করে যাই। অতপর সে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো।

বাড়িওয়ালা বাইরে এলে সে বললো, “স্ত্রী-পুত্র নিয়ে খুব অভাবে ছিলাম। আপনার বন্ধুর কাছে সাহায্যের জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু তার কাছে সাহায্য করার মত কিছু না থাকায় তিনি আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন।”

বাড়িওয়ালা বললো, “বেশ! আজ রাতেই মিশর থেকে আমার দুইশত উট বোঝাই মাল আসবে। মালসহ সমস্ত উট আপনি নিয়ে যান।”

লোকটি অবাক হয়ে বাড়িওয়ালার দিকে তাকিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল।
বাড়িওয়ালা বললো, “রাত্রি গভীর হওয়ার আগেই কাফেলার কাছে পৌঁছে যান। ঐ উপত্যকায় গিয়ে দাঁড়ান। ওদের আসার সময় হয়ে গেছে।”

লোকটি বললো, “একটু আগে বাড়ির ভিতরে, বাতির সলতা মোটা করার অপরাধে একজন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিরস্কার করছিল। আপনি কি সেই ব্যক্তি নন?”

বাড়িওয়ালা বললো, “হ্যাঁ, আমি সে ব্যক্তি। সেখানে ছোট ঘরটিতে যতটুক আলোর প্রয়োজন ছিল, তার জন্য চিকন সলতাই যথেষ্ট। মোটা সলতা ব্যবহার করে বেশি তেল পোড়ানোর প্রয়োজন ছিল না। বিনা প্রয়োজনে খরচ করাই অপব্যয়, তা যত কমই হোক।
আপনি যেহেতু ব্যবসা ধ্বংস হয়ে অভাবগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন, তাই ব্যবসা শুরু করার জন্য মাল বোঝাই দুইশত উট আপনার খুবই প্রয়োজন। বাঁচার প্রয়োজনে খরচ করার অপব্যয় নয়, তা যত বেশিই হোক।”

লোকটি নতুন করে অপব্যয়ের অর্থ বুঝতে পারলো এবং উপত্যকার পথে যাত্রা করলো।

এ ঘটনা একজন সাধারণ ব্যক্তি হযরত মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুলী (রহঃ)-এর কাছ থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন। প্রথম বুজুর্গ হযরত রসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং দ্বিতীয় (বাড়িওয়ালা বুজুর্গ) হযরত উসমান (রাঃ) কিনা তা ঠিক করে বলতে পারেনি।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!