অপদেবতা

আমাদের গ্রামের বাড়িতে একবার একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। আত্মীয়স্বজন অনেকেই এসেছিলেন, আর অনুষ্ঠানটি ছিল রাতে। শেষ হতে হতে অনেক রাত হয়ে যাওয়ায়, যাদের বাড়ি দূরে, তারা থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

মামার বাড়িতে মোট পাঁচটা ঘর আর একটা পুরোনো বাংলো ঘর ছিল। বাংলো ঘরটা সচরাচর ব্যবহার করা হতো না। কিন্তু যেহেতু এত মানুষ ছিল, তাই ঘরের অভাব পড়ে গেল। তাই মামা-মামি ঠিক করলেন, তাঁরা নিজেদের ঘরটা অন্যদের ছেড়ে দিয়ে বাংলো ঘরে রাত কাটাবেন।

রাত তখন প্রায় ২টা।

হঠাৎ মামার ঘুম ভেঙে গেল টয়লেটের চাপায়। তিনি দরজা খুলে উঠোন পেরিয়ে একটু দূরে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলেন।

এমন সময় তিনি একটা অদ্ভুত শব্দ শুনতে পেলেন। চারপাশে তাকাতেই হঠাৎ চোখ পড়ল গোয়াল ঘরের দিকে।

তিনি স্পষ্ট দেখতে পেলেন, তাঁদের সাদা রঙের গরুটা যেন কীভাবে জানি গোয়াল ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে!

কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর মনে পড়ল—গোয়াল ঘর তো সন্ধ্যার পর সবসময় তালা লাগিয়ে রাখা হয়! তাহলে গরুটা বের হলো কীভাবে?

মামা একটু দ্বিধায় পড়লেন, কিন্তু আর বেশি ভাবলেন না। তিনি গরুটার পিছু নিলেন।

গরুটি ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করল। তার গন্তব্য গোয়াল ঘরের ঠিক পেছনে থাকা ঘন ঝোপ, যা অনেকটা ছোটখাটো জঙ্গলের মতো।

এদিকে মামা বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেলেও ফিরে আসছেন না। ঘুম ভেঙে গেল মামির।

মামি দরজার বাইরে এসে তাকাতেই দেখতে পেলেন—মামা এগিয়ে হাঁটছেন, আর তাঁর সামনে একটা সাদা কিছু চলছে!

মামির বুক ধড়ফড় করতে লাগল। ভয় পেয়ে চিৎকার করে মামাকে ডাকলেন।

কিন্তু অবাক করার বিষয়, মামা তাঁর ডাক শুনেও থামলেন না! বরং আরও দ্রুত হাঁটতে থাকলেন!

ভীষণ আতঙ্কিত হয়ে মামি ছুটে গেলেন এবং জোর করে মামাকে ধরে থামালেন।

মামা যেন ঘোরের মধ্যে ছিলেন। তিনি অস্পষ্টভাবে বলতে লাগলেন, “আমাদের গরুটা চলে যাচ্ছে… আমাদের গরুটা চলে যাচ্ছে…”

কিন্তু মামি স্পষ্ট বুঝতে পারলেন, সেটি তাঁদের গরু নয়! জোর করে মামাকে টেনে নিয়ে এলেন ঘরের ভেতর।

সকালে দুজনেই গোয়াল ঘরে গিয়ে দেখলেন, তালা ঠিকঠাক লাগানো রয়েছে। কোনো কিছুই নড়েনি, আর সব গরুই নিজের জায়গায় আছে!

তখন মামি মামাকে বললেন—”গতকাল রাতে তোমাকে নিশা (আমাদের গ্রামে অপদেবতা বলে পরিচিত) ডাকছিল। আমি যদি না উঠতাম, আর তোমাকে না থামাতাম, তাহলে নিশা তোমাকে বনের মধ্যে নিয়ে যেত। তারপর মেরে মাটিতে গলা পর্যন্ত পুঁতে রাখত…!”

মামা স্তব্ধ হয়ে গেলেন। তাঁর শরীর হিম হয়ে এলো।

সেই রাতের পর থেকে, কেউ আর গভীর রাতে গোয়াল ঘরের দিকে যেত না…!

বারবাডোজ দ্বীপের “জীবন্ত” কফিনগুলো!

কলিং বেল◄

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *