অপঘাত

চোখে ঘুম ধরে গেল। কামরুল সাহেব এখনও অফিসে বসে আছেন। রাত প্রায় ১২.৩০ বাজে। অফিসের কাজ করতে করতে কখন যে সময় চলে গেল টেরই পাওয়া গেল না। যাই হোক হন্ত দন্ত করে কাগজ ফাইল গুছিয়ে অফিস রুম থেকে বের হলেন। রুম থেকে বের হয়ে অফিসের করিডোরে এসে দাঁড়াল। রীতিমত একটা জনশূন্য একটা জায়গা। একজন লোকও নাই। করিডোরের শেষ মাথাতে একটা টিউব লাইট জলছে আর নিভছে। চারিদিকে পিনপতন স্তব্ধতা। কামরুল সাহেব একটু ভিতু প্রকৃতির মানুষ। একাকীত্ব বা জনশূন্য আর অন্ধকার পরিবেশ তিনি বেশ ভয় পান। কামরুল সাহেব একটু অপ্রস্তুত পেয়ে গেলেন। কামরুল সাহেব একটু ভিতু প্রকৃতির মানুষ। আর একাকীত্ব তাকে সবসময় তাড়া করে বেড়ায়। অফিসের পিওন হাসানের নাম ধরে কয়েক বার ডাকল কিন্তু তার ডাক প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসলো। তিনি বুঝতে পারলেন দাড়িয়ে থেকে লাভ নাই, তাই করিডোর ধরে এগুতে লাগলেন। তার পায়ের জুতার শব্দ ছাড়া আর কিছুই শুনা যাচ্ছে না। তাঁর বার বার মনে হচ্ছিল যেন কেউ তাঁকে লক্ষ্য করে তাঁর পিছন পিছন আসছে। তিনি পিছনে তাকালেন কাউকে পেলেন না। তাড়াতাড়ি হাটা শুরু করলেন সিঁড়ির দিকে। সিঁড়ি ঘরে এসে পৌঁছানোর পর হল আরেক বিপত্তি, মাঝখানের বেশ কয়েকটা তালার পুরো সিঁড়ি ঘর ঘুটঘুটে অন্ধকার। পুরো অফিসে কোন লোক নাই। পাশেই ছিল লিফট, কিন্তু কামরুল সাহেব লিফটকে অস্বাভাবিক ভয় পান। কখনই লিফটে উঠেন না। কিন্তু এখন লিফট ছাড়া তাঁর আর কোন পথও নাই। কাউকে দেকে যে সাহায্য চাবেন সেটাও সম্ভব না।

লিফটে কামরুল সাহেব একা। লিফটের দরজা বন্ধ হল আর কামরুল সাহেবের বুকের মধ্যে একটা জোরে ধাক্কা দিলো যেন। “কয়েক মুহূর্ত কেবল, বেশি সময় লাগবে না।” এইসব বলে নিজেকে সান্ত্বনা দেওার চেষ্টা চলছিলো। হঠাৎ… লিফটের আলো চলে গেল। কারেন্ট চলে গেছে। কামরুল সাহেব রীতিমত ভয় পেয়ে গেলেন। কি করবেন বুঝতে পারছিলেন না। ঢাকা শহর। একবার কারেন্ট গেলে কখন আসে তাঁর কোন ঠিক ঠিকানা নাই। কামরুল সাহেবের মাথা কাজ করছে না। উনার রীতিমত অবস্থা খারাপ হয়ে গেল। তিনি চিৎকার করতে গেলেন তিনি জানেন কেউ তাঁর কথা শুনতে পাবে না। তাঁরপরও চিৎকার দিলেন। কিন্তু তাঁর গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের হল না। মনে হচ্ছিল কেউ যেন তাঁর গলা চেপে ধরে আছে। ধপ করে মাটিতে বসে পরলেন তিনি আর ঠিক তখনই লিফটের বাতি জলে উঠলো আর ঝাকুনি দিয়ে লিফট থেমে গেল। লিফটের দরজা খুলা শুরু করলো আর কামরুল সাহেব তৈরি ছিলেন লিফট থেকে বের হওয়ার জন্য। লিফটের দরজা পুরাপুরি খুলার আগেই তিনি বের হয়ে গেলেন। হাপ ছেড়ে বাঁচলেন যেন একটা মৃত্যু কুপ থেকে বেড়িয়ে এলেন। তিনি উঠে দাঁড়ালেন। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তিনি কি মনে করে পিছনের দিকে লিফটের দিকে তাকালেন। তাকিয়েই তিনি বজ্রাহতের মত হয়ে গেলেন। এইটা কি? লিফটের দরজা সেই মুহূর্তেও তখন খুলা ছিল। তিনি দেখলেন লিফটের মেঝেতে একজনের নিথর দেহ পরে আছে। সেটা আর কারোর না, সেটা তাঁর নিজের মৃত দেহ। কামরুল সাহেব এক দৃষ্টিতে সেইদিকে তাকিয়ে আছেন। তাঁর মরদেহটা তখনও সেখানে পরে ছিল। তাঁর চোখ সেই দিক থেকে সরল না লিফটের দরজা বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!