অদ্ভূত অর্থাপহরণ– প্রথম অংশ

সে’বার বিজ্ঞান সম্মেলনে যোগ দিতে আমাকে হায়দ্রাবাদে যাবার জন্য হাওড়া থেকে ইস্টকোষ্ট এক্সপ্রেস ধরতে হয়েছিল।
সঙ্গে আমি পরীর দেশের রাজকুমার অপরূপ সুন্দর তেরো বছরের ভাইপো চঞ্চলকে ও নিয়ে গিয়েছিলাম।

ট্রেন সকাল সাতটা পঁয়তাল্লিশে তখন হাওড়ার ১১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়তো ।
তা বেশ ভালই চলছিল ট্রেন। কিন্তু ভাগ্যে যা আছে তা তো হবেই। বিশাখাপত্তনমের আগেই গন্ডগোলের সূত্রপাত হ’লো।
তখন বেশ রাত হ’য়ে এসেছে।

ট্রেনে মি০ গুরুরাজন নামে একজন তামিল ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় হয়েছিল। তিনি এক অদ্ভূত ধরণের অর্থ অপহরণের ঘটনা শুনিয়েছিলেন আমাকে। হায়দ্রাবাদে তাঁর একটি মেটাল ওয়্যারের কারখানা আছে। সেখানেই হয় রহস্যময় চুরি। তারপর তিনি সেই সূত্রেই কোলকাতায় এসেছিলেন। তাঁর একজন বিচক্ষণ রহস্যসন্ধানীর দরকার হ’য়ে পড়ে ছিল কিন্তু বিফল মনোরথ হয়ে ফিরছিলেন। কোলকাতার কোন নামী ডিটেক্টিভ বা অন্য কেউই এই সামান্য টাকা চুরির কেস নিতে রাজী হন নি।

আসলে সব ব্যবসাতেই কিছু গুপ্ত ব্যাপার থাকে। কারখানায় কর্মচারী ১০০ জন থাকলে কাগজে কলমে মাত্র ১০জন দেখানো হয় ফলে তাদের মাইনের টাকা ও দশভাগের একভাগ মাত্র লোকে জানতে পারে। দশলক্ষের জায়গায় একলক্ষ। তাই নামী দামী ডিটেক্টিভেরা এইসব কেসকে পাত্তা দেয় না। পুলিশের কাছে গেলেও বিপদ। টাকা চুরি গেলে তখন মালিককে কিল খেয়ে কিল চুরি করতে হয়।

কারখানার মাইনের দিন অর্থাৎ গত সোমবার সকালে দশলাখ টাকার বান্ডিল এনে ক্যাশিয়ারকে দেখিয়ে রেজিস্টারে যথারীতি পুরো টাকার এন্ট্রি করিয়ে মিঃ গুরুরাজন স্টিলের গোদরেজ আলমারিতে লক করে রাখেন। কিন্তু দুপুরে এসে দেখেন টাকার বান্ডিল হাওয়া হয়ে গিয়েছে।

তখন এমার্জেন্সী ফান্ড থেকে কর্মচারিদের মাইনে দিয়ে মান বাঁচান তিনি তবে আজ সকালের ফ্লাইটেই কোলকাতা চলে আসেন, কিন্তু এখন হতাশ হয়ে ট্রেনে ফিরছেন। অর্থাৎ যা টাকা বাঁচানো যায়।

দক্ষিণ ভারতীয়েরা অর্থের ব্যাপারে বেশ একটু কঞ্জুষ প্রকৃতির হয়ে থাকেন শুনেছিলাম। টাকার শোকটা একটু বেশীই তাঁর বুকে বেজেছে বুঝেও কিছু করবার ছিলো না আমার যদি ও তিনি আমাকে বৈজ্ঞানিক ভেবে আমার কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। হয়তো এই কারণেই কোন রহস্যসন্ধানী তাঁকে পাত্তা দিতে চান নি।

আর দু’দিন বাদে বিজ্ঞান কংগ্রেসের উদ্ঘাটনে যেতে হবে বলে আমি ও তেমন গা করিনি। কিন্তু বিধি বাম।

রাতে রূপকুমার দুধবরণ ছেলে চঞ্চলকে খাইয়ে দাইয়ে দিয়ে নিজে ও খেয়ে নিয়ে হাত মুখ ধুয়ে এসে শুয়ে পড়েছিলাম বটে কেননা এ০সি০ কোচেও লাইট না অফ করলে কারো ঘুমই তো হবে না। কিন্তু সজাগ ছিলুম কেননা অন্ধ্রপ্রদেশের নক্সাল প্রভাবিত এলাকা দিয়ে জোরে ট্রেন চলছিল।

হঠাৎ এক ভীষণ বিস্ফোরণের ও পরক্ষণেই দড়াম ধড়াম ধাঁই দারূণ শব্দে লাফিয়ে উঠতে গিয়ে আমি বার্থ থেকে ঠিকরে পড়লাম নীচে। চঞ্চল ও লোয়ার বার্থ থেকে ছিটকে এসে আমার গায়ের ওপরে পড়ল বলে বেশী আঘাত লাগলো না সুন্দর ছেলেটার। তবে অনেক যাত্রীই

ধপাস ধাঁই করে ছিটকে পড়ে আহত হ’লো। আমার ও বাঁ হাতে আঘাত লাগলো বেশ চঞ্চলকে বাঁচাতে গিয়ে। তবু ও যে অল্পের ওপর দিয়ে রক্ষা পেলাম এই ভাগ্য জোর বলতে হবে।
হায়দ্রাবাদ তো দূর অস্ত আমরা যে বিজয়নগরম ও পৌঁছতে পারিনি সে আন্দাজ আমার ছিল চঞ্চলের সঙ্গে ধসে টাইম টেবিল মুখস্থ করবার খেলার কল্যাণে। ট্রেন লেট হয়ে থাকলে তাও যোগ করেই চঞ্চল হিসেব করে দিব্যি দূরত্ব আর সময় বুঝে।

গল্পের দ্বিতীয় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

দুঃখিত!