অত্যাচারী রাজার গল্প

এক দেশে এক অত্যাচারি রাজা ছিলো। প্রজারা তার কথা তেমন একটা গুরুত্বের সাথে মানতো না। প্রজাদের মাঝে ছিলো পরস্পরে খুব ঐক্যের সম্পর্ক। তারা তাদের মাঝে জ্ঞানীদের কথা মেনে চলতো। রাজা মহা সমস্যা অনুভব করতেন। আত্মপীড়ায় ভুগতেন। মন ভীষণ খারাপ হয়ে যেতো। মন্ত্রীর সাথে পরামর্শ সভায় বসলেন। কী করা যায়? কী ভাবে তাদের মাঝে ফাটল সৃষ্টি করা যায়? মন্ত্রী পরামর্শ দিলেন রাজা মহাশয় ! এখন আপনি কিছুটা আফসেট। চলুন কিছুদিন শিকারে বেড়িয়ে আসি।

মন কিছুটা হলেও হালকা হয়ে যাবে। : যেই ভাবা সেই কাজ! পরদিন রাজা মন্ত্রীকে নিয়ে শিকারে গেলেন। ঘুরতে ঘুরতে এক স্থানে একটা কূপ দেখতে পেলেন। পাশে একটা কাঠের ফলকে লেখা দেখলেন “যে এই কূপের পানি এক আঁজলা পান করবে সে পাগল হয়ে যাবে“। রাজার মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেলো। খুশিতে বাগবাগ রাজা। বললো, মন্ত্রী ! এ্যাই মন্ত্রী!! জ্বি রাজা মহাশয় ! : একটা বুদ্ধি পেয়েছি! : কী বুদ্ধি জনাব! : এই দেখো ! এখানে লেখা আছে “এই কুপের পানি যারা এক আঁজলা পান করবে তারা পাগল হয়ে যাবে।“ সুতরাং চলো আমরা আমাদের রাজ্যের লোকদেরকে এই পানি খাইয়ে দিয়ে পাগল করে সবার ওপর রাজত্ব করবো।

কেমন হবে? বিশেষ করে যারা সমাজে নেতৃত্ব দেয় তাদের বেশী খাওয়াবো। মু হা হা হা হা! : হা হা হা হা রাজা মহাশয় বেশ ভালো কথা ! বেশ ভালো কথা!! ঘটি ভরে পানি নিয়ে ফিরলেন রাজা!! : পরদিন। রাজা ঘোষণা করলেন সকল প্রজা যেনো দরবারে আসে। একে একে সবাই এলো। রাজা বললেন, আমি তোমাদের জন্য এমন পানি এনেছি যা পান করলে তোমরা অমর হয়ে যাবে। আর কোনোদিন তোমাদের মৃত্যূ আসবে না। তোমরা সুস্থ হয়ে যাবে । কখনো তোমরা অসুস্থ হবে না। : রাজার চটকদার বক্তব্য শুনে কিছু সহজ সরল প্রজা তা বিশ্বাস করে পানি খেয়ে পাগল হয়ে গেলো। কিন্তু যারা সচেতন ছিলো তারা প্রথমে পানি পান করতে চাইলো না। তবুও কেউ কেউ লোভে পড়ে পান করলো। আর বাকি যারা এই পানি সম্পর্কে জানতো।

তারা নওজোয়ানদের বলে দিলো, তোমরা পানি পান করো না । তাহলে পানি তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। শত জুলুম ও প্রলোভনের মাঝেও তারা পানি পান করা থেকে বিরত রইলো । ফলে তারা সুস্থই রয়ে গেলো। : যারা অল্প করে পানি খেয়েছে তারা পাগল হয়ে সুস্থদের পাগল বলতে শুরু করে দিলো। বিবেধ বাঁধাতে লাগলো যেখানে সেখানে। ফাসাদ ঘটাতে লাগলো। কিছু সরল মানুষকে তাদের দলেও ভিড়াতে লাগলো। ফলে তাদের মাঝে ফাটল সৃষ্টি করে রাজা মহা সুখে রাজত্ব করতে লাগলো।

আরো পড়তে পারেন...

একটা আষাঢ়ে গল্প-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-১ম অংশ

দূর সমুদ্রের মধ্যে একটা দ্বীপ । সেখানে কেবল তাসের সাহেব , তাসের বিবি , টেক্কা…

একটা আষাঢ়ে গল্প-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-২য় অংশ

এমনি তো কিছুকাল যায় । কিন্তু এই তিনটে বিদেশী যুবক কোনো নিয়মের মধ্যেই ধরা দেয়…

দূরবর্তী এক নদীর উপকথা

এই সকালে কুয়ালালামপুর শহরটা নরম রোদের আলোয় ডুবে রয়েছে। সেই সঙ্গে মৃদুমন্দ বাতাসও বইছে। রোদ…