অত্যাচারি মোরগ রাজ

বন্ধুরা, আমাদের অনেক অনেক আদর আর ভালবাসা নাও। তারপর- কেমন আছো তোমরা? তোমরা জবাব না দিলেও আমরা জানি যে, চারিদিকে যুদ্ধের দামামা বাজতে দেখে তোমাদের মন ভাল নেই। ভাল থাকবেইবা কেমন করে? যে বয়সে মায়ের কোলে বসে ঘুম পাড়ানি ছড়া শোনার কথা, সে বয়সে যদি হায়েনাদের গুলির আওয়াজ শোনো তাহলে কি মন ভাল থাকে?

আজকে তোমাদের জন্য রয়েছে এক অত্যাচারি মোরগের গল্প। এক দেশে ছিল একটি চালাক ও অত্যাচারী মোরগ। বিশাল সাইজের মোরগটির যেমন ছিল তেল চকচকে পালক ও লেজের বাহার তেমনি ছিল মাথার ফুল। ফুলটি এতই লাল ছিল যে, দেখলেই মনে হতো আগুন! সুন্দর হলে কী হবে- মোরগটি ছিল খুবই অলস ও অত্যাচারী। মোরগটি যখন হেলে দুলে হাঁটতো তখন মনে হতো কোনো রাজা-বাদশাহ হেঁটে যাচ্ছে। অত্যাচারী মোরগটিকে দেখে পথের সবাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও সালাম দিতো। সালাম দেয়ার ধরন দেখে মোরগটি মনে মনে হাসত এবং এ দুর্বলতাকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সে চিন্তা করত। চিন্তার এক পর্যায়ে তার মাথায় একটি চমতকার বুদ্ধি এসে গেল।

মোরগের বাড়ির পাশেই ছিল বিড়ালদের পল্লী। বিড়াল পল্লীর কারো অবস্থাই তেমন ভাল ছিল না। বলা যায়-তারা সবাই ছিল দিনমজুর শ্রেণীর। সারাদিনই তাদেরকে পেট চালানোর কাজে ব্যস্ত থাকতে হতো। এজন্য তারা কিছুটা ভীরু প্রকৃতিরও ছিল। বিড়ালদের এ দুর্বলতার কথা চালাক মোরগটি জানতো। তাই মোরগটি একদিন বিড়াল পল্লীর সবাইকে মিটিংয়ে আসার দাওয়াত দিল। গরীব বিড়ালরা কি মোরগ রাজের ডাকে সাড়া না দিয়ে পারে? তাই দেখা গেল- নির্দিষ্ট সময়ে সব বিড়াল এসে হাজির হলো মিটিংয়ে। সবাই হাজির হওয়ার পর মোরগ বিড়ালদের উদ্দেশ্যে বলতে লাগল:

মোরগ: প্রিয় বিড়াল ভাইয়েরা! তোমরা সবাই আমার প্রতিবেশি। আমিও তোমাদের প্রতিবেশী। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকায় বসবাস করে আসছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়-আমাদের কোনো অভিভাবক বা শাসক নেই। তাই আমাদের উচিত একজন নেতা নির্বাচন করা। যার হুকুমে সবাই চলবো। তোমরা কি আমার প্রস্তাবে রাজি?

মোরগের প্রস্তাবে বিড়ালরা রাজি ছিল না। কিন্তু অত্যাচারী মোরগের ভয়ে তারা ‘না’ করতে পারল না। বিড়ালদের একজন দাঁড়িয়ে বলল:

বিড়াল: আপনি ঠিকই বলেছেন মোরগরাজ। আমাদের একজন নেতা দরকার। আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আপনাকেই আমরা নেতা বানাতে চাই।

এ প্রস্তাব শুনে মোরগ খুশি হলেও মনের ভাব প্রকাশ না করে বলল:

মোরগ: তোমরা এটা কি বললে? আমি কি তোমাদের নেতা হওয়ার যোগ্যতা রাখি?

নেতাগোছের একটি বিড়াল বলল:

বিড়াল: অবশ্যই আপনি আমাদের নেতা হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। আমরা আপনার কোনো ওজর-আপত্তি শুনতে চাই না। আমাদের একটাই কথা, আপনিই হবেন আমাদের নেতা।

ক্ষমতালোভী মোরগ যেন এ প্রস্তাবের অপেক্ষায় ছিল। বিড়ালদের প্রস্তাবে আর কোনো চিন্তা না করেই রাজি হয়ে গেল। তবে সাথে সাথে বিড়ালদের কাছ থেকে এ ওয়াদা নিল যে, তারা প্রতিদিন মোরগকে পর্যাপ্ত পরিমাণে উঁইপোকা সরবরাহ করবে। কারণ খাদ্য হিসেবে উঁইপোকা মোরগের খুবই প্রিয়। মোরগের প্রস্তাবে বিড়ালরা কোনো ‘না’ করল না। বরং তারা এক বাক্যে এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল। মোরগ যা চেয়েছিল তা কড়ায়গোন্ডায় পেয়ে গেল। মোরগের আনন্দ আর দেখে কে!

নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর মোরগ নিজের জন্য কারুকার্য খচিত বিশাল একটি হুইল চেয়ার তৈরি করে নিল। ওই চেয়ারে বসেই সে বিড়ালের ওপর তার কর্তৃত্ব খাটাতে লাগল। বিড়ালরা প্রতিদিনই প্রচুর পরিমাণ উঁইপোকা আনতে লাগল মোরগের জন্য। এভাবে উঁইপোকা আনতে আনতে এক সময় উঁইপোকাশূন্য হয়ে যাবার উপক্রম হলো। যে কারণে বিড়ালরাও পর্যাপ্ত পরিমাণ পোকা সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে লাগল। উঁই পোকা ধরতে সারাদিন চলে যাওয়ায় নিজেদের খাবার সংগ্রহ করতে পারছিল না বিড়ালরা। তাই মোরগের জন্য উঁইপোকা আনতে তারা অনীহা প্রকাশ করল।

চালাক মোরগ ব্যাপারটা ঠিকই বুঝতে পারল। কিন্তু তার কি করার আছে! এতদিনকার আয়েসী শরীর। তার ওপর বসে বসে খাবার ফলে ভুঁড়িটাও দিন দিন বিশাল আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থায় তার পক্ষে কি দিনমজুরদের মত মাঠে-ময়দানে গিয়ে উঁইপোকা ধরে খাওয়া সম্ভব? তাই সে নীলকরদের মত বিড়ালদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা দিল:

মোরগ: যে ভাবেই হোক আমার উঁইপোকা চাই। প্রজারা কিভাবে উঁই ধরবে এটা রাজার দেখার বিষয় নয়। তোমরা যদি উঁই আনতে গড়িমসি কর তাহলে আগুনের যে ফুল দেখছ সে আগুন দিয়ে সবাইকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে মেরে ফেলব। একজনকেও বাঁচতে দেব না।

মোরগ রাজার হুমকি শুনে বাধ্য হয়েই বিড়ালরা নিজেদের জীবন বাঁচাতে উঁই সরবরাহ করতে লাগল। এক সময় বিড়াল রাজ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। হাহাকার উঠল ঘরে ঘরে। এ সময় ঘটল একটি চমতকার ঘটনা। এক মা বিড়াল তার বাচ্চাদের জন্য রান্না করতে গিয়ে দেখল চুলোয় আগুন নেই। তখন বিড়ালটির মনে পড়ল মোরগের কথা। সে তাড়াতাড়ি তার একটি বাচ্চাকে কিছু পাটকাঠি দিয়ে মোরগের বাড়িতে পাঠালো আগুন আনবার জন্য।

বাচ্চা বিড়ালটি মোরগ রাজের বাড়ি গিয়ে দেখল চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে মোরগ। মোরগকে ঘুম থেকে ডাকারা সাহস পেল না বাচ্চা বিড়ালটি। এ সময় তার মাথায় খেলে গেল এক দুষ্টু বুদ্ধি। বিড়ালটি চুপি চুপি মোরগের কাছে গেল এবং পাটকাঠিটি মোরগের মাথায় ধরল আগুন নেয়ার জন্য। কিন্তু এ কি! আগুন ধরাতো দূরের কথা, একটু ধোঁয়ায় তো ওড়ছে না! বাচ্চা বিড়ালটি আর অপেক্ষা না করে দ্রুত তার মায়ের কাছে এসে সবকিছু খুলে বলল।

মা বিড়াল তার বাচ্চার কথা মোটেই বিশ্বাস করল না। বরং রেগে গিয়ে বলল:

বিড়াল: না বাপু, তোদের দিয়ে কিচ্ছু হবে না। আমি না থাকলে তোদের যে কি দশা হয়? এই বলে মা বিড়াল নিজেই আগুন আনার জন্য মোরগ রাজার বাড়ি গেল এবং দেখল মোরগ সত্যি সত্যিই ঘুমাচ্ছে। আর তার বিশাল পেটটি ওঠানামা করছে। এ দৃশ্য দেখে বিড়ালের মনে সন্দেহ দেখা দিল। তবু পরীক্ষা করার জন্য পা টিপে টিপে মোরগের মাথার কাছে গেল বিড়ালটি। এরপর মোরগের মাথার আগুনের মত লাল ফুলটিতে পাটকাঠি ছোঁয়ালো। কিন্তু সত্যি সত্যিই আগুন ধরল না। মা বিড়ালটি সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারল মোরগের চালাকি।

মা বিড়াল বাড়ি ফিরে বিড়াল পল্লীর সবার কাছে প্রকাশ করে দিল মোরগের চালাকির কথা। আর যায় কোথায়? ভীরু বিড়ালরাও চোখ মেলে তাকাল। অত্যাচারী মোরগের বিরুদ্ধে তারা বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তুলল-

অত্যাচারী মোরগ রাজ- ধ্বংস হোক নিপাত যাক
মিথ্যাবাদী মোরগ রাজ- ধ্বংস হোক নিপাত যাক
মোরগ রাজের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও।

শ্লোগানের শব্দ শুনে মোরগের ঘুম ভেঙে গেল। আড়মোড়া কাটতে কাটতে বাইরে বেরিয়ে এসেই মোরগের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। শত শত বিড়াল ব্যানার নিয়ে, শ্লোগান দিতে দিতে তার বাড়ির দিকেই আসছে। শ্লোগানের ধরন শুনেই মোরগ বুঝতে পারল তার সব জারিজুরি ফাঁস হয়ে গেছে। অবস্থা বেগতিক দেখে জান বাঁচানোর জন্য উড়াল দিয়ে একটি উঁচু ডালে বসল মোরগ। উপর থেকে দেখতে পেল- তার সাধে সিংহাসন, বাসাবাড়ি সবকিছু আগুন দিয়ে ছারখার করে দিচ্ছে বিড়ালরা। মোরগ জানে বেঁচে গেলেও বিড়াল পল্লীতে আর আসতে পারল না। ফলে সেখানে শান্তি ফিরে এলো। সব বিড়ালই সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।

বন্ধুরা, দেখলেতো অত্যাচারী মোরগ কিভাবে ভীরু বিড়ালদের তাড়া খেয়ে ওই এলাকা ছেড়ে চলে গেল! তোমাদের মনে রাখতে হবে যে, অত্যাচারী চিরকালই ভীরু। তাদের হুমকি-ধমকির বিরুদ্ধে সাহস নিয়ে দাঁড়ালে পারলে এক সময় তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অত্যাচারি মোরগ রাজ

বন্ধুরা, আমাদের অনেক অনেক আদর আর ভালবাসা নাও। তারপর- কেমন আছো তোমরা? তোমরা জবাব না দিলেও আমরা জানি যে, চারিদিকে যুদ্ধের দামামা বাজতে দেখে তোমাদের মন ভাল নেই। ভাল থাকবেইবা কেমন করে? যে বয়সে মায়ের কোলে বসে ঘুম পাড়ানি ছড়া শোনার কথা, সে বয়সে যদি হায়েনাদের গুলির আওয়াজ শোনো তাহলে কি মন ভাল থাকে?

আজকে তোমাদের জন্য রয়েছে এক অত্যাচারি মোরগের গল্প। এক দেশে ছিল একটি চালাক ও অত্যাচারী মোরগ। বিশাল সাইজের মোরগটির যেমন ছিল তেল চকচকে পালক ও লেজের বাহার তেমনি ছিল মাথার ফুল। ফুলটি এতই লাল ছিল যে, দেখলেই মনে হতো আগুন! সুন্দর হলে কী হবে- মোরগটি ছিল খুবই অলস ও অত্যাচারী। মোরগটি যখন হেলে দুলে হাঁটতো তখন মনে হতো কোনো রাজা-বাদশাহ হেঁটে যাচ্ছে। অত্যাচারী মোরগটিকে দেখে পথের সবাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও সালাম দিতো। সালাম দেয়ার ধরন দেখে মোরগটি মনে মনে হাসত এবং এ দুর্বলতাকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সে চিন্তা করত। চিন্তার এক পর্যায়ে তার মাথায় একটি চমতকার বুদ্ধি এসে গেল।

মোরগের বাড়ির পাশেই ছিল বিড়ালদের পল্লী। বিড়াল পল্লীর কারো অবস্থাই তেমন ভাল ছিল না। বলা যায়-তারা সবাই ছিল দিনমজুর শ্রেণীর। সারাদিনই তাদেরকে পেট চালানোর কাজে ব্যস্ত থাকতে হতো। এজন্য তারা কিছুটা ভীরু প্রকৃতিরও ছিল। বিড়ালদের এ দুর্বলতার কথা চালাক মোরগটি জানতো। তাই মোরগটি একদিন বিড়াল পল্লীর সবাইকে মিটিংয়ে আসার দাওয়াত দিল। গরীব বিড়ালরা কি মোরগ রাজের ডাকে সাড়া না দিয়ে পারে? তাই দেখা গেল- নির্দিষ্ট সময়ে সব বিড়াল এসে হাজির হলো মিটিংয়ে। সবাই হাজির হওয়ার পর মোরগ বিড়ালদের উদ্দেশ্যে বলতে লাগল:

মোরগ: প্রিয় বিড়াল ভাইয়েরা! তোমরা সবাই আমার প্রতিবেশি। আমিও তোমাদের প্রতিবেশী। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকায় বসবাস করে আসছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়-আমাদের কোনো অভিভাবক বা শাসক নেই। তাই আমাদের উচিত একজন নেতা নির্বাচন করা। যার হুকুমে সবাই চলবো। তোমরা কি আমার প্রস্তাবে রাজি?

মোরগের প্রস্তাবে বিড়ালরা রাজি ছিল না। কিন্তু অত্যাচারী মোরগের ভয়ে তারা ‘না’ করতে পারল না। বিড়ালদের একজন দাঁড়িয়ে বলল:

বিড়াল: আপনি ঠিকই বলেছেন মোরগরাজ। আমাদের একজন নেতা দরকার। আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আপনাকেই আমরা নেতা বানাতে চাই।

এ প্রস্তাব শুনে মোরগ খুশি হলেও মনের ভাব প্রকাশ না করে বলল:

মোরগ: তোমরা এটা কি বললে? আমি কি তোমাদের নেতা হওয়ার যোগ্যতা রাখি?

নেতাগোছের একটি বিড়াল বলল:

বিড়াল: অবশ্যই আপনি আমাদের নেতা হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। আমরা আপনার কোনো ওজর-আপত্তি শুনতে চাই না। আমাদের একটাই কথা, আপনিই হবেন আমাদের নেতা।

ক্ষমতালোভী মোরগ যেন এ প্রস্তাবের অপেক্ষায় ছিল। বিড়ালদের প্রস্তাবে আর কোনো চিন্তা না করেই রাজি হয়ে গেল। তবে সাথে সাথে বিড়ালদের কাছ থেকে এ ওয়াদা নিল যে, তারা প্রতিদিন মোরগকে পর্যাপ্ত পরিমাণে উঁইপোকা সরবরাহ করবে। কারণ খাদ্য হিসেবে উঁইপোকা মোরগের খুবই প্রিয়। মোরগের প্রস্তাবে বিড়ালরা কোনো ‘না’ করল না। বরং তারা এক বাক্যে এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল। মোরগ যা চেয়েছিল তা কড়ায়গোন্ডায় পেয়ে গেল। মোরগের আনন্দ আর দেখে কে!

নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর মোরগ নিজের জন্য কারুকার্য খচিত বিশাল একটি হুইল চেয়ার তৈরি করে নিল। ওই চেয়ারে বসেই সে বিড়ালের ওপর তার কর্তৃত্ব খাটাতে লাগল। বিড়ালরা প্রতিদিনই প্রচুর পরিমাণ উঁইপোকা আনতে লাগল মোরগের জন্য। এভাবে উঁইপোকা আনতে আনতে এক সময় উঁইপোকাশূন্য হয়ে যাবার উপক্রম হলো। যে কারণে বিড়ালরাও পর্যাপ্ত পরিমাণ পোকা সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে লাগল। উঁই পোকা ধরতে সারাদিন চলে যাওয়ায় নিজেদের খাবার সংগ্রহ করতে পারছিল না বিড়ালরা। তাই মোরগের জন্য উঁইপোকা আনতে তারা অনীহা প্রকাশ করল।

চালাক মোরগ ব্যাপারটা ঠিকই বুঝতে পারল। কিন্তু তার কি করার আছে! এতদিনকার আয়েসী শরীর। তার ওপর বসে বসে খাবার ফলে ভুঁড়িটাও দিন দিন বিশাল আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থায় তার পক্ষে কি দিনমজুরদের মত মাঠে-ময়দানে গিয়ে উঁইপোকা ধরে খাওয়া সম্ভব? তাই সে নীলকরদের মত বিড়ালদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা দিল:

মোরগ: যে ভাবেই হোক আমার উঁইপোকা চাই। প্রজারা কিভাবে উঁই ধরবে এটা রাজার দেখার বিষয় নয়। তোমরা যদি উঁই আনতে গড়িমসি কর তাহলে আগুনের যে ফুল দেখছ সে আগুন দিয়ে সবাইকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে মেরে ফেলব। একজনকেও বাঁচতে দেব না।

মোরগ রাজার হুমকি শুনে বাধ্য হয়েই বিড়ালরা নিজেদের জীবন বাঁচাতে উঁই সরবরাহ করতে লাগল। এক সময় বিড়াল রাজ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। হাহাকার উঠল ঘরে ঘরে। এ সময় ঘটল একটি চমতকার ঘটনা। এক মা বিড়াল তার বাচ্চাদের জন্য রান্না করতে গিয়ে দেখল চুলোয় আগুন নেই। তখন বিড়ালটির মনে পড়ল মোরগের কথা। সে তাড়াতাড়ি তার একটি বাচ্চাকে কিছু পাটকাঠি দিয়ে মোরগের বাড়িতে পাঠালো আগুন আনবার জন্য।

বাচ্চা বিড়ালটি মোরগ রাজের বাড়ি গিয়ে দেখল চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে মোরগ। মোরগকে ঘুম থেকে ডাকারা সাহস পেল না বাচ্চা বিড়ালটি। এ সময় তার মাথায় খেলে গেল এক দুষ্টু বুদ্ধি। বিড়ালটি চুপি চুপি মোরগের কাছে গেল এবং পাটকাঠিটি মোরগের মাথায় ধরল আগুন নেয়ার জন্য। কিন্তু এ কি! আগুন ধরাতো দূরের কথা, একটু ধোঁয়ায় তো ওড়ছে না! বাচ্চা বিড়ালটি আর অপেক্ষা না করে দ্রুত তার মায়ের কাছে এসে সবকিছু খুলে বলল।

মা বিড়াল তার বাচ্চার কথা মোটেই বিশ্বাস করল না। বরং রেগে গিয়ে বলল:

বিড়াল: না বাপু, তোদের দিয়ে কিচ্ছু হবে না। আমি না থাকলে তোদের যে কি দশা হয়? এই বলে মা বিড়াল নিজেই আগুন আনার জন্য মোরগ রাজার বাড়ি গেল এবং দেখল মোরগ সত্যি সত্যিই ঘুমাচ্ছে। আর তার বিশাল পেটটি ওঠানামা করছে। এ দৃশ্য দেখে বিড়ালের মনে সন্দেহ দেখা দিল। তবু পরীক্ষা করার জন্য পা টিপে টিপে মোরগের মাথার কাছে গেল বিড়ালটি। এরপর মোরগের মাথার আগুনের মত লাল ফুলটিতে পাটকাঠি ছোঁয়ালো। কিন্তু সত্যি সত্যিই আগুন ধরল না। মা বিড়ালটি সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারল মোরগের চালাকি।

মা বিড়াল বাড়ি ফিরে বিড়াল পল্লীর সবার কাছে প্রকাশ করে দিল মোরগের চালাকির কথা। আর যায় কোথায়? ভীরু বিড়ালরাও চোখ মেলে তাকাল। অত্যাচারী মোরগের বিরুদ্ধে তারা বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তুলল-

অত্যাচারী মোরগ রাজ- ধ্বংস হোক নিপাত যাক
মিথ্যাবাদী মোরগ রাজ- ধ্বংস হোক নিপাত যাক
মোরগ রাজের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও।

শ্লোগানের শব্দ শুনে মোরগের ঘুম ভেঙে গেল। আড়মোড়া কাটতে কাটতে বাইরে বেরিয়ে এসেই মোরগের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। শত শত বিড়াল ব্যানার নিয়ে, শ্লোগান দিতে দিতে তার বাড়ির দিকেই আসছে। শ্লোগানের ধরন শুনেই মোরগ বুঝতে পারল তার সব জারিজুরি ফাঁস হয়ে গেছে। অবস্থা বেগতিক দেখে জান বাঁচানোর জন্য উড়াল দিয়ে একটি উঁচু ডালে বসল মোরগ। উপর থেকে দেখতে পেল- তার সাধে সিংহাসন, বাসাবাড়ি সবকিছু আগুন দিয়ে ছারখার করে দিচ্ছে বিড়ালরা। মোরগ জানে বেঁচে গেলেও বিড়াল পল্লীতে আর আসতে পারল না। ফলে সেখানে শান্তি ফিরে এলো। সব বিড়ালই সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।

বন্ধুরা, দেখলেতো অত্যাচারী মোরগ কিভাবে ভীরু বিড়ালদের তাড়া খেয়ে ওই এলাকা ছেড়ে চলে গেল! তোমাদের মনে রাখতে হবে যে, অত্যাচারী চিরকালই ভীরু। তাদের হুমকি-ধমকির বিরুদ্ধে সাহস নিয়ে দাঁড়ালে পারলে এক সময় তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়তে পারেন...

মুগীরা ইবন শু’বা (রা)

নাম আবু আবদিল্লাহ মুগীরা, পিতা শু’বা ইবন আবী আমের। আবু আবদিল্লাহ ছাড়াও আবু মুহাম্মাদ ও…

সাপের তওবা

একটি সাপের ঘটনা বর্ণনা করছি। আমার কাছে যারা তালীম গ্রহন করতে আসে প্রথমেই আমি কাউকে…

আবদুল্লাহ ইবন হুজাফাহ আস-সাহমী-(রা)

আবু হুজাফাহ আবদুল্লাহ নাম। পিতার নাম হুজাফাহ। কুরাইশ গোত্রের বনী সাহম শাখার সন্তান। ইসলামী দাওয়াতের…