এক পাহাড়ের নিচে একটা জলাশয় ছিল, সবসময় জলে ভরে থাকতো। মাছেই ভরে থাকত পুকুরটা।
মাছগুলির সঙ্গে থাকতো কিছু কাঁকড়া। বক, চিল সব এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াতো, মাছ ধরতো, কাঁকড়া ধরতো আর খেতো।
একদিন একটা বুড়ো বক এক পায়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছিল। এমন সময় একটা দাঁড় বেয়ে বেয়ে সে পথ দিয়ে যাচ্ছিল। বকের কান্না দেখে সে থমকে দাঁড়াল। বলল, “বক মামা, কাঁদছ কেন?”
বক খুবই চালাক ছিল। সে বলল, “না ভাই, তোমাদের বলা যাবেনা, তোমরা ভাববে আমি বানিয়ে বানিয়ে বলছি। সর্বনাশ, বড় সর্বনাশ হয়ে গেছে।”
এই কথা শুনে কাঁকড়া বিচলিত হয়ে পড়ল। সে এসে বাকি কাঁকড়াদের ও মাছেদের জানালো। তখন সবাই একসাথে এসে বকের কাছে জানতে চাইল, সে কেন কাঁদছে।
বক বলল, “আর কেন, বল ভায়েরা। সর্বনাশ, বড় সর্বনাশ। জলের প্রাণীরা একটাও বাঁচবে না। পরে ডাঙ্গার প্রানীরাও দুর্ভিক্ষে শেষ হয়ে যাবে। আগামী বারো বছর একবিন্দুও বৃষ্টি হবে না। গণকরা গণনা করেছে। জানো তো, আমি মাছ-মাংস ছেড়ে দিয়েছি। এখন আমি নিরামিষাসী। মাছগুলোর জন্যই প্রাণটা কেঁদে কেঁদে উঠছে—তাই আমি কাঁদছি।”
তখন সকলে হাত জোড় করে বককে বলল, “দয়া করুন, দয়া করুন। আমাদের এমন বুদ্ধি দিন, যাতে আমরা বেঁচে যাই।”
খুব গম্ভীর হয়ে বক বলল, “উপায় একটা করে দিতে পারি, যদি তোমরা আমার কথামতো চলো। তাহলে কারো কোনো বিপদ হবে না।”
মাছেরা সকলে একসুরে বলল, “আপনি যা বলবেন তাই করবো—কখনও আপনার অবাধ্য হব না।”
বক বলল, “পাহাড়ের উপরে একটা প্রকাণ্ড জলাশয় আছে। তার জল কখনও শুকায় না। তোমাদের সেখানে যেতে হবে।”
মাছেরা বিপদে পড়ল। তারা বলল, “আমরা সেখানে যাব কী করে?”
বক বলল, “তোমরা চাইলে আমি তোমাদের একে একে করে সেখানে রেখে আসতে পারি।” মাছেরা অন্য উপায় না দেখে উত্তেজনায় একসঙ্গে বলল, “আমরা সবাই চলে যাবো।”
এরপর প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বক একটা করে মাছ মুখে নিয়ে পাহাড়ের উপরে উড়ে যেত, আবার পরক্ষণেই নেমে আসত। এভাবে অনেকগুলি মাছ সে পাহাড়ের উপর নিয়ে গেল।
কয়েক দিনের মধ্যেই নিচের জলাশয়ের মাছ প্রায় শেষ হয়ে গেল।
তখন কাঁকড়া এসে বলল, “বেশ তো, আক্কেল! তোমার কথা শুনে আমি মাছেদের ডেকে আনলাম, আর তুমি তাদের বাঁচানোর ব্যবস্থা করলে। শুধু মাছেদের জন্যই তোমার প্রাণ কাঁদে। যদি বৃষ্টি না হয়, পুকুর, ডোবা, মাঠ ঘাট সব শুকিয়ে ফেটে যাবে। তখন আমাদের কি দশ হবে, মামা?”
কাঁকড়ার কথা শুনে বকের মনে লোভ বেড়ে গেল। সে কাঁকড়া কখনো খায়নি। এই সুযোগে যদি কাঁকড়া খাওয়ার সুযোগ হয়, ক্ষতি কী? কাঁকড়া ক্ষেতেও অনেক সুস্বাদু।
বক কাঁকড়াদের অভয় দিয়ে বলল, “কোন ভয় নেই তোমাদের। তোমাদেরও সব পাহাড়ের উপরে জলাশয়ে নিয়ে যাব। বাঁচাতে তো হবেই, কালই আমি ব্যবস্থা করছি।”
মনে মনে বলল—”সেখানে নিয়ে গিয়ে তোদের গিলবো।”
পর দিন বক এক বৃদ্ধ কাঁকড়াকে পিঠে নিয়ে উড়ে চলল। পথ শেষ হলো না। কাঁকড়া দেখতে পেল পাহাড়ের উপরে কোনো জলাশয় নেই। তার বদলে আছে প্রচুর মাছের কাঁটা ছড়িয়ে-ছিটানো। ভয় পেয়ে গেল সে।
বকে জিজ্ঞেস করলো, “সেই জলাশয়টা কোথায়, মামা?”
বক বলল, “সে জলাশয়টা আমার পেটে। চল, না হলে সুখেই থাকবি।”
রোজ রোজ মাছ খেয়ে অরুচি ধরে গেছে—আজ কাঁকড়া খেয়ে মুখ পাল্টাব।
কাঁকড়া ভয়ে কুঁকড়ে গেল। তবে মনটা শক্ত করল—চেষ্টা করে দেখা যাক না, এই লোভী বকটাকে শেষ করতেই হবে, নচেৎ বাঁচার কোনো পথ নেই।
এই বলে সে তার দাঁড় দু’টা দিয়ে বকের গলায় সজোরে চিমটে ধরে বসল। গলায় রক্ত বার হতে লাগল। বক যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে মারা গেল।
নীতিকথা: অতি লোভ মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।