অতসীদের কথা— তৃতীয় পরিচ্ছেদ

স্বপ্ননীলের নাম পিটার, অতসীর নাম লুইসা। কলেজ জীবনের বন্ধু। এখন একই অফিসের সহকর্মী। কোপেনহাগেন শহরের প্রান্তে ওদের অ্যাপার্টমেন্ট। সই-সাবুদ বিয়ে-রেজিস্টিরি এসবে ওদের কোনো আগ্রহ নেই। সে অনেকেরই থাকেনা, ওদের দেশে। তো, ওরা একসঙ্গেই থাকে। বিয়ে-টিয়ে এসব অনুষ্ঠান মাত্র। বাচ্চা-টাচ্চার ইচ্ছা হলে করে নেবে সই-টই। ওরা এরকমই থাকে। এটাই স্বাভাবিক। লুইসা হাসিখুশি। বুদ্ধিদীপ্ত। হাসিতে, কাজে কর্মে। তুলনায় পিটার অনেক সাদামাটা। একসঙ্গে কাজে আসে। ফেরেও একসাথে। কাজ শেষে, লুইসা অপেক্ষা করে পিটারের জন্য, কখনো বা পিটার বসে থাকে লুইসা বাড়ী যাবে বলে। পার্টি-টাটিতেও যায় একসাথে। বীয়ার পাবেও। ভরপুর বীয়ার খায় ওরা, কিম্বা ওয়াইন। হা হা করে হাসে। ঠাট্টা করে সরু-মোটা দাগের। প্রকাশ্যে চুমু খায় দুজন দুজনাকে। সামান্য মাতাল লুইসাকে প্রায় কোলে চড়িয়ে গাড়ীতে নিয়ে যায় পিটার। গাড়ী ছাড়ার আগে, দুজনে খানিকক্ষণ ঘনিষ্ঠ থাকে। বন্ধুরা সবাই দেখে । সিটি মেরে উৎসাহ দেয়। ওদের দেশে এসব সাধারণ ব্যাপার। একটু কম যা সাধারণ তা হল, পিটার সত্যি ভালবাসে লুইসাকে। বন্ধুদের সাথে বীয়ারের টেবিলে সেই ভালবাসার কথা উজাড় করে বলে। গরমের ছুটিতে পিটার আর লুইসা বেড়াতে যায় ফুকেট। থাইল্যান্ড। পশ্চিমীদের ছুটি কাটানোর আদর্শ গন্তব্য। পিটার অফিসের সবাইকে সাতকাহন করে ওদের এই সফরের প্ল্যান জানায়। লুইসা শুধু হাসে। চার সপ্তাহ ঘুরে আসে ওরা। লুইসা হাসিখুশি। পিটার উচ্ছল। সবাইকে বলে বেড়ায় ওদের সফরের গল্প। সবিস্তারে বর্ণনা করে ওদের নাইট ক্লাবে যাওয়ার গল্প। যেখানে নাচ করে &হয়ষঢ়;কাথোয়ে’রা। &হয়ষঢ়;লেডি বয়েস’। লিঙ্গ পরিবর্তিত নারী-বালক। এরপরে আবার কাজে ডুবে যায় ওরা। মাঝে মাঝে প্ল্যান করে পরের গ্রীষ্মের। পিটারের টেবিলে পাঁচ-বাই-সাত ইঞ্চির হাস্যমুখ দুজনের ছবি। লুইসার টেবিলে পিটারের।
জেরাল্ড। মধ্যবয়সী ম্যানেজার। একলাই থাকে। বর্তমানে কোনো স্ত্রী বা মহিলাবন্ধু নেই। সহজ লোক। মাঝেমাঝে সহকর্মীদের ডেকে পার্টি-টার্টি দেয়। স্কোয়াশ খেলে। মাঝে মাঝে সকার বা সাঁতার। মিশতে পারে ভাল। গোপ্পে লোক। তো, হেমন্তে, অ্যামেরিকায় একটা নতুন প্রজেক্ট শুরু হয়। কম্পানীর। জেরাল্ড যায় সেখানে। কিছুদিন পরে অভিজ্ঞ আর চটপটে হিসাবে, লুইসাকে ডেকে নেয়। লুইসা সাগ্রহে যায়। কেরিয়ারে উন্নতির সুযোগ। পিটার মনমরা হয়ে থাকে। মাসে এক/দুইবার আসে লুইসা। তারপর আসা কমে যেতে থাকে। পিটার আরো মনমরা।
আমারও কোপেনহাগেনের কাজ শেষ হয়ে আসে এরপর। আর ওদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। বছর ঘুরে যাবার পর, কোপেনহাগেনের এক বন্ধুর কাছ থেকে মেল পাই। একথা-সেকথা, কম্পানী-প্রোজেক্ট-উন্নতি-অবনতি-ক্যান্টিনসমাচার এসবের পর লিখেছে, জেরাল্ড আর লুইসা অ্যামেরিকা থেকে ফিরে এসেছে। ওরা এখন একসঙ্গেই থাকে। যমজ বাচ্চা হয়েছে লুইসার, জেরাল্ড গর্বিত বাবা। ফিরতি মেল-এ আমি জিগাই, &হয়ষঢ়;আর পিটার?’। পিটার ভালই আছে। লুইসার সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবার পর, বীয়ার পাবেই নাকি পড়ে থাকত। এখন অবশ্য অনেক ভদ্রস্থ। আবার মেয়ে বন্ধু পেয়ে যাবে, চিন্তা নেই। না চিন্তা নেই, ওদের দেশে এসব তো কিছুই না। খালি ভাবি পিটারের টেবিলে সেই ওদের দুজনের পাঁচ-বাই-সাত হাস্যমুখ ছবিটার কথা। এখনো আছে??

 

গল্পের প্রথম পরিচ্ছেদ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!