এ ক’দিন নবুদা ঘাপটি মেরে কোন চুলোয় যে ছিল , তা কেউ জানেনা । নির্বাচনের আগে FANTA বাওয়ালের পরে, কোর্টের বেইল পেতে তাকে বেশ কিছুদিন ভুগতে হয়েছিল বটে, তবে তাতে একেবারে দম বের হয়ে যায়নি কারোরই । দম বেরোলেও দমবার পাত্র তো নয় এরা !! তবে জেলের খাবার খেয়ে হুলোর পিলে বেড়ে গেছিলো, হয় কথায় নয় কথায় ছোট ঘরের ভেতর পিরিয়ডিক ভাবে সে এমন সাংঘাতিক সয়ংক্রিয় গ্যাস পাস করত যে পচার ঘুম ভেঙ্গে যেত প্রায় রাত্তিরেই । নাক চেপে মাঝ রাতে ছিটকে উঠে পচা চিল্লিয়ে উঠত ,” ওরে বাবারে…ধর ধর ধর …ওই যাঃ তেল ফ্যাক্টরির ছাত উড়ে গেল রে ….উফ কি তেজ মাইরি !!” হাজতে এরকম জৈব অত্যাচারের নজির আগে কখনো কেউ দেখেনি, মানে শোনেওনি বা শুঁকেওনি । প্রবল গ্যাসের গুতুনিতে কতৃপক্ষ নবুদা এন্ড কোম্পানি কে ভোট খতম হতেই মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।
এসব আনকোরা পেদো পাবলিকের সাথে, নির্বাচনী উত্তেজনার থেকে দুরে বোসে , দিনের পর দিন সময় কাটানো বড়ই চাপের । নিজের মানসিক ও পচার গ্যাসের চাপের জেরেই বোধহয় নবুদা কিরকম জানি ভ্যাবল গোছের হয়ে গেছিল । ছাড়া পাওয়ার পরেও, না পাওয়া পাওয়ারের মরিচিকা বুঝি আজও তাকে তাড়িয়ে বেড়ায় ! এই পচাকে বিড়ি ধরাতে বলে , আবার তারপরেই হুলোকে বলে তাতে জল ঢালতে ! ওদিকে জগা নির্বাচনের ফলাফল বেরোতেই সক্কাল সক্কাল সদলবলে bjpতে যোগ দিয়েছে। কপালে কমলা টিকা কেটে গেরুয়া গামছা গলায় ঝুলিয়ে মোদির শপথ গ্রহনের দিন সে আবার স্টেশন চত্বরে সবাইকে অর্ডারি লাড্ডুও খাওয়াতে এলো।
লাল থেকে ডাইরেক্ট গেরুয়া হয়ে গেলে এত ঝক্কি পোহাতে হত না , মাঝখানে ওই সবজে রঙের ওরাং ওটাং হতে হয়েছিল কিনা, ও জাউক্ক্গা !! স্টেশন চত্বরে আজকাল নবু এন্ড কোম্পানি নেভা বিড়ি , জলের বোতল , দেশলাই কাঠি ,ছেড়া টিকিট, চায়ের ভাঁড় এসব নিয়ে এক অদ্ভূত ধরনের খেলা খেলে । মোদির মন্ত্রী হওয়ার দিনে লাড্ডু বেলোতে গিয়ে জগাও অবাক হয়ে দেখলো সে খেল , একজন বোতল জড়িয়ে লাফাচ্ছে তো অন্যজন বিড়ি মুখে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর নবুদা দু হাতে দেশলাই কাঠি দিয়ে ক্রমাগত কান খোঁচাচ্ছে। জগা তাদেরকে লাড্ডু অফার করতেই তারা সমস্বরে চিল্লে উঠলো , “গান্ধী বাবার পোলিও দরকার, কেননা , অব আ গয়া মোদী সরকার !!!” জগার বেশ মনে ধরলো ডায়লগটা, সে খুশি হয়ে শেষ প্যাকেটটা ওদের হাতে দিয়ে জানাল যে কিছু দিনের মধ্যে স্টেশন চত্বর মন্দিরে মন্দিরে ছেয়ে দেবে সে, হনুমান, সাঁই বাবা ,গণপতি কিছুই বাকি থাকবেনা !
পচা তাতে কি বুঝলো কে জানে, ঢিপ করে জগাকে প্রনাম করে ফস করে জিগ্গেস করে বসলো , ” আপনি মন্দির বানান দাদা , সোমবারে আমরা শিবঠাকুরের ভাং গাঁজার প্রসাদ পাব তো?” জগা কর্মীদের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে পচাকে উত্তর দিল ,”হবে হবে , সব হবে, সুধু পদ্মফুল প্রস্ফুটিত হওয়া চাই !!” হুলো দেখলো পচা মাগনার ফুটেজ লুটছে , সেও হাঁই পাঁই করে বলে উঠলো , “সুধু পদ্ম কেন, দাদা আপনার আশির্বাদ থাকলে পুরো চত্বর ধুতরো ফুলেও ছেয়ে দিতে পারি, ন্যাচারাল কল্কে বাবার , পুরো অর্গানিক ! ” জগা বোধহয় বহুকাল আগে কখনো সখনো হুলোর ঠেকে দু এক টান বাবার প্রসাদ মেরেছে টেরেছে , তা বলে এই হেন নব্য আভির্ভূত রূপে তাকে যদি গাঁজার টানের দোহাই দিয়ে ধর্মীয় রাজনৈতিকে ঠেলতে হয় , তাহলে সে জানে, যে তার রাজনৈতিক ধর্ম শীঘ্রই লোপ পাবে। জগা তাই কথা না বাড়িয়ে স্রেফ দাঁত বার করে আবার বলল , ” হেঃ হেঃ, হবে হবে , সব হবে, সুধু পদ্মফুল প্রস্ফুটিত হওয়া চাই !!” খেলাতে বিঘ্ন ঘটায়ে নবুদা পুরো সময়টা গুম মেরে ছিল। অবশ্য খেলাটা যে আসলে কি তা পচা বা হুলো কেন, কেউই আজ অব্দি বুঝে উঠতে পারেনি। নবুদা যা বলে তাই ওরা করে আর তাতেই তারা দেদার আনন্দ পায়।
নবুদার খেলাটার নাম ‘গণতন্ত্র বাঁচাও ‘, আর নিয়ম গুলো ব্যাপক মজার ও বেজায় জটিল। আসলে ফেসবুক ইত্যাদিতে ভার্চুয়াল গেমে যেরকম হয় এখানে অনেকটা সেরকমই , ওখানে জনগণ পেট রেসকিউ খেলে , ভার্চুয়াল ছেড়ে বাস্তবে এই খেলাটা আপামোর জনগণ খেলেলে ‘ডেমোক্রেসি’ রেসকিউড হলেও হতে পারে। যে জানে সে উপভোগ করে, আবার পচা বা হুলোর মত আনাড়ি যারা জানেনা তারাও বেশ মজা পায়। নেভা বিড়ি , জলের বোতল , দেশলাই কাঠি , ছেড়া টিকিট, চায়ের ভাঁড় এগুলো হচ্ছে সরঞ্জাম। যারা খেলবে সব্বাইকে সেগুলো কিছুক্ষণের জন্য দেওয়া হবে। এবার সেগুলো নিয়ে খেলোয়াড়দের এমন কিছু করতে হবে যাতে করে অন্যেরা সেটা চাইতে না পারে – তা ভয় পেয়ে হলে হবে না, না চাওয়ার মধ্যে ভালবাসা থাকা চাই !! মুশকিল হলো খেলা শুরু হতেই শালা পচা হুলোকে খালি বোতল দিয়ে পেটায় কিম্বা হুলো চায়ের ভাঁড় লক্ষ্য করে পচার দিকে ছোড়ে আর যতক্ষণ এই গণতান্ত্রিক যুদ্ধ চলে ততক্ষণ নবুদা নিশ্চিন্ত মনে পোড়া দেশলাই কাঠি দিয়ে কান খোঁচায় !
যে কেউ এই খেলায় যখন তখন যোগ দিতে পারে , আশা যাওয়া নিয়ে কোনো বাধা নিষেধ নেই। তবে নিয়ম ভাঙ্গলেই বিপদ, নবুদা পুরানো টিকিটে সেই defaulterএর নামের পাশে ‘অগণতান্ত্রিক’ লিখে, তাতে নিয়ম ভঙ্গের বিবরণ দিয়ে তা টিকিট কাউন্টারের উল্টো দেওয়ালে সেঁটে দেয়। ওই ফেসবুকের ওয়ালে যেরকম স্কোর পোস্ট করা হয়ে থাকে ! লাল দেওয়াল খুদে টিকিটে ছেয়ে যায়, দেখা যায় কোনটাতে লেখা প্রহ্লাদ পাল – অগণতান্ত্রিক, বিড়ি হাতে ফাঁকা জলের বোতল ফোঁকার চেষ্টা করেছিল বলে , আবার কোনোটাতে লেখা , তাপস সিকদার – অগণতান্ত্রিক, ফাঁকা বোতলখানি পচার পেছনে গোঁজার চেষ্টা করেছিল তাই। এমনকি একটাতে লেখা আছে , নৃপেন সর্দার – অগণতান্ত্রিক, সব কিছু হাতে করে কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে মদন বৈরাগীর মত আড়াই মিনিট দাড়িয়ে থেকেছিল বলে । আবার ঠিক ঠাক খেললে কিন্ত খেলুড়েদের যথায্থ সম্মান দেওয়াও হয়। হুলো তাদের মাথাপিছু লোকাল ট্রেনে একখানা সিট হনারারী ভাবে পাইয়ে দেয় ও সিগনাল হওয়ার আগে যথাস্থানে বসিয়েও দিয়ে আসে । পুলিস কমিসানারেটে খবর পৌছালো যে নবু আর তার চ্যালা চামুন্ডারা ছাড়া পেয়ে এবারে স্টেশন চত্বরে জুয়া শুরু করেছে ! টিকিটের পেছনে অদ্ভূত ভাবে কোড হিসাবে আবার লোকেদের নাম লিখে সেটা দেওয়ালে সাঁটছে আর এই জঘন্য চক্করের থেকে মহিলারাও বাদ যাচ্ছে না ! মহিলা মানে জগার সেই দিদি মানে মেনিদির খুড়তুত বোন বিনু ট্রেন থেকে নেমে স্টেশন চত্বরে চা খেতে গিয়ে নবুদার ওই আজব খেলাতে প্রাইজের লোভে participate করে এবং পোড়া বিড়ি হাতে নিয়ে ‘উঃ মাগো !!’ বলে চিল্লিয়ে খেলা ছেড়ে পালিয়ে যায়। নবুদা সঙ্গে সঙ্গে ছেড়া টিকিটের পিছনে লিখে দেওয়ালে পোস্টালো ,
বিনু – অগণতান্ত্রিক, কেননা সে গণতন্ত্রে বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করেনা বলে !! জগা তো ধরেই নিয়েছিল যে এটা তৃনমুলি কারচুপি , কিন্তু সব দিক থেকে ইনভেস্টিগেশন করার পর সে বুঝলো সবজে পার্টির এতে কোনো হাত নেই। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সে পুলিস কে খবর দেয়। বড়বাবু আইপিএলের ডিউটিতে ব্যস্ত তাই মেজবাবু এলেন স্টেশন চত্বরে কি হচ্ছে তা নিজে চোখে দেখতে। নবুদা দূর থেকে মেজবাবুকে দেখেই আড়াই ফুট সেলাম ঠুকে বলল , “স্যার , জামাই সষ্ঠী তো পরশু আজ কোথায় চললেন?” মেজবাবু নবুর বক্তব্য কে পাত্তা না দিয়ে গর্জে উঠলো , “আবার এসব কি খেল শুরু করলি? ভাবছিস ভোট হয়ে গেছে বলে কিছু খবর রাখি না?” নবুদা আবার দেশলাই কাঠি দিয়ে কান খোঁচাতে খোঁচাতে বলল , “স্যার কি যে বলেন আপনি! গেল মাসে জেলের খাবার খেয়ে পচার পেটটা এমন বিগড়েছে যে কি বলব, তাই হজমের জন্য সবাই মিলে একটু ফিসিকাল এক্সারসাইজ করি আর কি!! ” মেজবাবু, “বটে, তা কি সব কাঠি, বোতল দিয়ে জুয়া খেলছিস, সেটা কি ধরনের খেলা বোঝা দেখি ?
” নবুদা, “ওঃ ওটা , হ্যাঁ সেটা খেলা তো বটেই স্যার, তবে জুয়া কিনা জানিনা, ভেবেও দেখিনি! আইপিএলের মরশুমে সবাই বল পিটিয়ে বা উইকেট ফেলে নোট কামাচ্ছে, কলকাতার দলও হেব্বি খেলেছে। অথচ পচা জানালো যে, যে ব্যাটাচ্ছেলে এই ফাটকা শুরু করেছে সেই মোদী নাকি এখন দেশের বাইরে পালিয়ে আছে, পুলিস সিবিআই সব আঙ্গুল চুষছে….আর আমরা সৎ ভাবে বিনা ফাটকার একটা খেলা খেলছি তাতে সবাই এরকম ঘাবড়ে যাচ্ছে কেন স্যার ? ” মেজোবাবু ঘেঁটে গিয়ে চিত্কার করে উঠলো , “মোদিজি এখন প্রধানমন্ত্রী হবে , সে দেশের বাইরে আছে মানে, তুই কি পাগল হয়ে গেলি নাকি?” হুলো এইবার হুরমুরিয়ে লাফিয়ে উঠলো , “এ মোদী নরেন্দ্র নয় , এ ললিত স্যার।” তারপর মাথা নামিয়ে ফিসফিসিয়ে পচাকে বলল ,”সাধে বলে পুলিশের ব্রেনের দাম পুরোনো জাঙ্গিয়ার ইলাস্টিকের চেয়েও কম … ” মেজবাবু আরো ঘেঁটে গেল , কিন্ত কোনরকমে সামলে নিয়ে বলল ” হুমম বুঝেছি, ওপরের অর্ডার আছে, ফারদার এই সব খেলা খেললে পেছনে রুল ঢুকিয়ে সোজা তুলে ভেতরে করে দেবো।
” হুলো অমনি বলল , “এখনি পচাকে ভেতরে ঢোকান স্যার , ওর পেটটা এখনো সাইজ হয়নি , পেছনে রুল ঢোকালে যদি গ্যাস বার করা বন্ধ হয় …” মেজবাবু না শোনার ভান করে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেলো। স্টেশন চত্বরে নতুন মন্দিরের শিলান্যাস হবে আজকে। তপন সিকদার মারা না গেলে নিজেই আসতেন। মোদিজির (ললিত নয় নরেন্দ্র) ভিডিও মেসেজ দেখানো হবে। জগাদা এবার লাড্ডুর সাথে দলীয় ব্যাজও বিতরণ করবে। ক্লান্ত নবুদা নব নির্মিয়মান মন্দির চত্বরে গেরুয়া কার্পেটে তার পোষা কুত্তা যার সদ্য দেওয়া নতুন নাম মদু , তার ঘাড়ে হাত বোলাতে বোলাতে বডি ফেলে দিয়ে বলল , “জিরিয়ে নে , কাল অনেক প্রোগ্রাম আছে!” হুলো আর পচা নাছোরবান্দা , তারা অন্য একটা খেলার প্ল্যান এঁটেছে। সেটা তারা খেলবেই, খেলাটার নাম ‘গণততন্ত্র হটাও ‘ । নিয়মটা খানিকটা এরকম, যে যখানে যা হাতের সামনে পাবে তা দিয়ে যাকে খুশি ক্যালাবে। হুলো আর পচা এই নিয়ম মেনে দিব্য ক্যালাকেলি শুরু করে দিল। অদ্ভূত ভাবে শুয়ে শুয়ে কান খোঁচাতে খোঁচাতে নবুদা লক্ষ্য করলো , যে ওদের মারপিট বেশিক্ষণ চলল না। ওরাও কেমন জানি ক্লান্ত হয়ে জড়াজড়ি করে ৩৭৭ মার্কা ‘অগণতান্ত্রিক’ দের মত লাওয়ারিশ ভাবেই মাটিতে ঘুমিয়ে পড়ল।