১৯৩২ খ্রিস্টব্দের ঘটনা- ৪র্থ পর্ব

১৯৩২ খ্রিস্টব্দের ঘটনা- ৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

এর ফলে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ নিজ জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে ও বসে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছু প্রত্যক্ষ করার এক বিরল সুযোগ পেয়ে যান। ফলে ঠেলা ধাক্কা এড়াতে পেরে সকলেই তাঁদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এদের এই খেদমতের দরুন লক্ষ লক্ষ জনতা তাঁদের চোখ জুড়িয়ে সব কিছু দেখতে সক্ষম হন। তাছাড়াও পরদিন বাগদাদে অনুষ্ঠানটি পুনঃ দেখানোর ব্যবস্থা হলে এক অভুতর্পূব দৃশ্যের অবতারণা হয়।

কফিনগুলো যখন নতুন কবর স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন ইরাকের বিনাগুলি অবনত হয়ে তাঁদের শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় এবং উপর থেকে ফুল বৃষ্টি বর্ষণ করে। পথে কয়েক বার কফিন দুটিকে নিয়ে থামাতে হয়। পরম ভক্তি শ্রদ্ধার সাথে দির্ঘ ৪ (চার) ঘণ্টা পর যখন সালমান পার্কে এসে পৌঁছেন। তখন শাহ ফয়সাল গর্ড অব অনার দেন। তারপর প্রতিনিধিবর্গ ফুলেল স্তুপ উৎসর্গ করেন। সবশেষে যেই সৌভাগ্যবানরা স্ট্রেচার থেকে মোরারক লাশ দূ’টো কফিনে রেখেছিলেন, তারা কফিন দুটি নব নির্মিত কবরস্থানে নামিয়ে রাখেন। এভাবেই কামানের গর্জন ও সামরিক বিউগলে আনন্দ ধ্বনি এবং জনতার নারায়ে তাকবিরের মধ্য দিয়ে ইসলামের এই জিন্দা শহিদদ্বয়কে মাটির কোলে রাখা হয়।

বিশাল জনতার মধ্যে যারা অমুসলমান ছিলেন তাঁদের অনেকেই ঘটনার শুরু থেকেই চিৎকার দিয়ে অবিরামভাবে কালিমা পড়ে পড়ে মুসলমান হতে থাকেন। তাছাড়াও এই দিন ঘটনার পর বাগদাদে এক অভূতপূর্ব সাড়া পড়ে যায়। অসংখ্যা ইয়াহুদী খ্রিষ্টান নাগরিক নাগরিক তাঁদের নিজেদের ভুল ভ্রান্তির উপর লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নেন। ঈমান ইসলাম গ্রহণকারীদের সংখ্যা এতোই অধিক ছিল যে, তাঁদের সংখ্যা নিরুপণ করা মোটেও সহজ কাজ ছিল না। নবনির্মিত কবর দুটির গায়ে শ্বেত পাথরে খোদাই করে পূর্ণ ঘটনা সংক্ষেপে লিখে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পর থেকেও কবর দূ’টি দেখার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষের আগমন আজও অব্যাহত রয়েছে।

উল্লেখ্য যে, এ দু’জন সাহাবী প্রিয়নবী (সা.)- এর অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলেন। তারা প্রশিদ্ধ সাহাবীদের মধ্যে অন্যতম। নবী (সা.) এর বিখ্যাত সাহাবী হজরত হুযায়ফাতুল (রাঃ) কে “আসহাবুসসীর” অন্যতম রহস্যবিদ-উপাধিতে ভূষিত করেন এবং কিয়ামাত পর্যন্ত যত ফিতনা ফাসাদ ও গোলযোগ সংঘটিত হবে তাঁর সব কয়টি ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। এমনকি তিন শত ব্যক্তির দ্বারা সংঘটিত গোলযোগেরও নায়ক কে হবে তাঁর নাম, পিতা-মাতার এবং বংশ পরিচয় পর্যন্ত বলে দিয়েছেন। হযরত হুজায়ফাতুল ইয়ামান (রাঃ)-বলতেন, মানুষ হুজুরে পাক (সা.) এর কাছে ভাল ভাল বিষয়াদি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন, আর আমি অশুভ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতাম, যেন তা থেকে বেঁচে থাকতে পারি।

একদা আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহ্‌ তা’য়ালার রাসুল (সা.)! আপনার বরকতে আজ আমরা যে মঙ্গলময় জীবন-যাপন করছি, এরপর কি কোন অমঙ্গলের আশংকা রয়েছে? হুজুরে পাক (সা.) উত্তরে বললেন, হ্যাঁ অমঙ্গল আসবে। আমি অরজ করলাম, তারপর কি আবার মঙ্গলের আসা করা যায়? হুজুরে পাক (সা.) উত্তরে বললেন যে, হ্যাঁ মঙ্গল আসবে, তবে মানুষের অন্তরের অবস্থা আগের মত আর থাকবে না। তখন তুমি আল্লাহ্‌ তা’য়ালার কালাম (কোরআন শরীফ) পড়তে থাক এবং উহার অর্থের প্রতি মনোযোগ দাও এবং উহার আদেশ নিষেধের তাবেদারী কর।

 আমি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলাম, সেই অমঙ্গলের পর আবার মঙ্গল আসবে? হুজুরে পাক (সা.) বললেন, হ্যাঁ মঙ্গল আসবে এবং এমন লোক পয়দা হবে যারা মানুষকে গোমরাহ করবে এবং জাহান্নামের নিয়ে যাবে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি যদি সেই যামানা পাই তবে আমাকে কি করতে হবে? হুজুরে পাক (সা.) বললেন, যদি তুমি তখন মুসলমানদের সম্মিলিত কোন জামাত পাও এবং তাঁদের কোন আমির থাকে তবে তাঁদের সাথে  যোগ দাও, নচেৎ সব কয়টা দল ত্যাগ করে নির্জনে বা কোথাও গাছের তলায় বসে যাও এবং জীবনের শেষ মূহূর্ত পর্যন্ত সেখানে কাটিয়ে দিবে।

(আবু দাউদ শরীফ, উসদূল গাবাহ)।

সূত্রঃ কবরের আযাব

৯৩২ খ্রিস্টব্দের ঘটনা- ১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।