১৯৩২ খ্রিস্টব্দের ঘটনা- ১ম পর্ব
ঘটনাটির শুরু একটি স্বপ্নের মাধ্যমে। এক রাতে হযরত হুযায়ফাতুল ইয়ামান (রাঃ) স্বপ্নযোগে ইরাকের বাদশা ফয়সালকে বললেন, আমাদের অবস্থান থেকে সরিয়ে টাইগ্রিসের অনতিদূরে অন্য কোন স্থানে দাফন করা হোক।
কেননা, আমার কবরে পানি জমতে শুরু করেছে আর যাবের (রাঃ)-এর কবরে আর্দ্রতা দেখা দেয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় কাজের প্রচণ্ড ব্যস্ততায় দরুন বাদশা দিনের বেলায় স্বপ্নের নির্দেশটি একেবারেই ভুলে যান। বাদশা পরের রাত্রে নিদ্রামগ্ন হলে তিনি আবার ঐ একই স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু সে দিনও তিনি স্বপ্নের কথাটি ভুলে যান। তৃতীয় রাত্রিতে হযরত হুযায়ফাতুল ইয়ামান (রাঃ) ইরাকের মুফতিয়ে আজমকে স্বপ্নযোগে দেখা দিলে একই নির্দেশ দেন।
আর তাঁকে এই কথাও বলেন যে, আমি গত দু’রাত ধরে বাদশাকে বলে আসছি কিন্তু দিন হলেই তিনি ব্যাপারটি ভুলে যান। এখন তোমার দায়িত্ব হচ্ছে, আমার নির্দেশটা তাঁকে স্বরণ করিয়ে দিয়ে যথাশীঘ্র আমাদের স্থানান্তর করা। সকাল হওয়া মাত্র মুফতি সাহেব প্রধানমন্ত্রী নুর-আসসায়ীদকে ফোন করে বললেন, আমি আপনার কাছে বিশেষ প্রয়োজনে আসছি। আপনার কোন প্রয়োজন থাকলে একটু পরে বের হবেন। নূরের সাথে দেখা হলে মুফতি সাহেব স্বপ্নের পুরো বৃত্তান্তটি তাঁকে বলে শুনালেন।
নূরী তৎক্ষণাৎ বাদশার সাথে মুফতি সাহেবের সাক্ষাতের সুযোগ করে দেন। তিনি নিজেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। মুফতি সাহেবের কথা শুনে বাদশা বললেন যে, হ্যাঁ আমি দুইবার এই স্বপ্ন দেখেছি। প্রতি রাতেই তিনি আমাকে এই নির্দেশ দিয়েছেন। আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না যে, এ আমি কি দেখতে পাচ্ছি। আপনি এসে ভালোই করেছেন। এখন বলুন, এমতবস্থায় আমাদের কি করা উচিত?
মুফতি সাহেব বললেন, তিনি তো স্পষ্ট করে সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব, আমি মনে করি অতিসত্বর তাঁর আদেশ পালন করাই আমাদের কর্তব্য বাদশা ফয়সাল বললেন, ব্যাপারটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় আমি বলছি যে, সাবধানতাবশতঃ আগে নিশ্চিত হওয়া যাক। সত্যিই নদীর পানি কবরের দিকে চুয়ে চুয়ে অসছে কিনা। মুফতি সাহেব বাদশার এই প্রস্তাবে রাজী হলেন। বাদশা তখনই গণপূর্ত বিভাগের চীফ ইঞ্জিনিয়ারের নামে এই পরিক্ষা করে দেখা যাক, টাইগ্রীসের পানি এদিকে চুয়ে চুয়ে আসছে কিনা।
কাজটা খুব তাড়াতাড়ি করে বিকালের মধ্যেই আমার কাছে রিপোর্ট করতে হবে। ফরমান পেয়ে লোকজন দিনভর কাজ চালাতে লাগলেন। কিন্তু পানি তো দূরের কথা, অনেক গভীর থেকে যে মাটি তুলে আনা হয় তাতেও আর্দ্রতার কোন আলামত পাওয়া গেল না। মুফতি সাহেব দিনভর তাঁদের সাথেই ছিলেন। তিনি সব কিছু স্বচক্ষে দেখে শুনে কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েন। মোটকথা, বাদশার কাছে নেতিবাচক রিপোর্ট পেশ করা হল। ঐ রাতেই হুযায়ফাতুল ইয়ামান (রাঃ) পুনরায় বাদশাকে তাগিদ দিয়ে বললেনঃ শীঘ্রই আমাদের সরানোর ব্যবস্থা কর। কেননা, আমার কবরে পানি জমতে শুরু করেছে এবং যাবের (রাঃ)-এর কবরে আর্দ্রতা দেখা দিয়েছে।
সূত্রঃ কবরের আযাব