হুসাইন ই

ডাটোশেখ হুসাইন (হুসেইন ) (জন্ম ১৯৫০):

হুসাইন ই একজন মালয়েশিয়ান ইসলামিক বক্তা এবং ইসলামি দাওয়ার আন্তর্জাতিক কর্মী, পাশাপাশি হুসাইন ই, ১৯৫০ সালে একটি বৌদ্ধ মালয়েশিয়ান চীনা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মস্থান মালয়েশিয়ার পেনাং, যেখানে তিনি শৈশবকাল কাটান। তিনি পরিবারে শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রতি বেশ গুরুত্ব দেন, এবং সেই কারণে তার বেড়ে ওঠার পরিবেশে ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক প্রভাব ছিল।তার পরিবার বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী হওয়ায়, তিনি প্রাথমিকভাবে বৌদ্ধ দর্শন ও শিক্ষা গ্রহণ করেন। কিন্তু কৈশোরে, হুসাইন ই-এর মধ্যে ধর্মীয় অনুসন্ধানের আগ্রহ জন্মায়, যা তাকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করে। ১৮ বছর বয়সে, তিনি ইসলাম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন।

ইসলাম গ্রহণ এবং তার পরবর্তী সময়:

হুসাইন ই যখন তার কৈশোরে ছিলেন, তখন তিনি বিভিন্ন ধর্মের বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে শুরু করেন। তাঁর মধ্যে ধর্মীয় অনুসন্ধানের আগ্রহ জাগ্রত হয়। বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষা ও দর্শনের পাশাপাশি ইসলামের মৌলিক ধারণা ও নীতিমালা সম্পর্কে জানতে চান। ১৯৬৮ সালে, যখন তিনি ১৮ বছর বয়সে পৌঁছান, তখন তিনি ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। এই সময়ে তিনি ইসলাম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জনের জন্য বিভিন্ন ইসলামিক বই পড়তে শুরু করেন এবং স্থানীয় মুসলিমদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন। তিনি দেখেন ইসলাম একটি শান্তি এবং সহনশীলতার ধর্ম, যা মানুষের মধ্যে সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে।হুসাইন ই-এর ইসলাম গ্রহণের সময়ে, তিনি বিশেষভাবে ইসলামি শিক্ষার জন্য মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দিন আল-আলবানির দিকে আকৃষ্ট হন। আল-আলবানির কাছে শিক্ষা গ্রহণ করে তিনি ইসলামের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে বিশদে জানতে পারেন, যেমন ধর্মীয় আইন, নৈতিকতা এবং ইসলামের ইতিহাস। ইসলাম গ্রহণের পর, হুসাইন ই নিজের নাম পরিবর্তন করেন এবং ইসলামিক পরিচয়ে নতুন জীবন শুরু করেন। তিনি ধর্মের জন্য নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিবেদিত করেন এবং ইসলামিক দাওয়া এবং শিক্ষা প্রচারের জন্য কাজ করতে থাকেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণের পরবর্তী সময়ে, তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সক্রিয় হয়ে ওঠেন এবং দাওয়া কার্যক্রমের মাধ্যমে ইসলামের সঠিক বার্তা প্রচার করতে থাকেন।তার ইসলাম গ্রহণের প্রক্রিয়া কেবল একটি ধর্ম পরিবর্তন ছিল না, বরং এটি তার জীবনকে একটি নতুন লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য প্রদান করে। তিনি ইসলামিক সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধ প্রচারে কাজ করতে থাকেন, যা তাকে একজন প্রখ্যাত ইসলামিক বক্তা এবং দাওয়াহের নেতায় পরিণত করে।হুসাইন ই আল-খাদেমের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রেসিডেন্ট।

অন্যান্য পদে, তিনি ১৯৮০ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে কাম্বোডিয়ান ইসলামিক শরণার্থী সংস্থায় এক বছরের জন্য উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। এছাড়াও, তিনি কুয়ালালামপুরের পেরকিমে কাউন্সেলর এবং ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত হংকংয়ের ইসলামিক সেন্টারের দাওয়াহের পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন।

বিবাদ এবং প্রতিক্রিয়া 

২০১৫ সালে, তিনি অস্ট্রেলিয়ান ইসলামিক পিস কনফারেন্সে (এআইপিসি) একটি মূল ভাষণ দেন, যেখানে ইহুদি ও খ্রিষ্টান ধর্মের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।  ই তিনি বলেছেন যে মুসলিম সন্ত্রাসীরা যুক্তরাষ্ট্রে ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার জন্য দায়ী নয়, এটি শুধুমাত্র “সন্দেহ” এর ভিত্তিতে।

হুসাইন ই পরবর্তীতে অভিযোগগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন যে তিনি কখনোই বলেননি “জুদেরা ৯/১১ হামলার পেছনে ছিল”, এবং অস্ট্রেলিয়ান সংবাদপত্রকে “অযোগ্য সাংবাদিকতা” করার অভিযোগ করেন।

 

ইসলামিক জীবনে তার অবদান:

হুসাইন ই ইসলামের প্রতি তার নিবেদন এবং দাওয়া কার্যক্রমের মাধ্যমে ইসলামিক জীবনে বিভিন্ন অবদান রেখেছেন ।হুসাইন ই বিভিন্ন দেশে ইসলাম প্রচার করেছেন। তিনি ইসলামিক বক্তা হিসেবে পরিচিত এবং বিভিন্ন ইসলামিক কনফারেন্স এবং সেমিনারে বক্তৃতা দেওয়ার মাধ্যমে ইসলামের মূল নীতিগুলি প্রচার করেছেন।তিনি আল-খাদেম নামক একটি ইসলামিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রেসিডেন্ট। এই সংগঠন ইসলামিক শিক্ষা, দাওয়া এবং সামাজিক সেবা কার্যক্রমে নিয়োজিত।তিনি ইসলামি শিক্ষার প্রসারের জন্য বিভিন্ন শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। তাঁর উদ্যোগে ইসলামিক কোর্স এবং সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা হয়।হুসাইন ই হংকংয়ের ইসলামিক সেন্টারের দাওয়া পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন, যেখানে তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ইসলামিক শিক্ষার প্রসার ঘটাতে কাজ করেছেন।তিনি সমাজের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের জন্য বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন, বিশেষ করে মুসলিম শরণার্থীদের জন্য সহায়তা প্রদান করেছেন।হুসাইন ই ইসলামের বিষয়ে বই এবং অন্যান্য প্রকাশনা লিখে জ্ঞান বিতরণে অবদান রেখেছেন, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য উপকারী হয়েছে।তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সংলাপ এবং আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির জন্য কাজ করেছেন, যা সমাজে শান্তি এবং সহনশীলতা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়েছে।হুসাইন ই-এর এসব অবদান তাকে একজন সম্মানিত ইসলামিক নেতা ও বক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে।

 

বর্তমানে হুসাইন ই একজন সক্রিয় ইসলামিক বক্তা এবং দাওয়া কর্মী হিসেবে তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি মালয়েশিয়াতে আল-খাদেম সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যা ইসলামের শিক্ষা প্রচার এবং সমাজসেবা কার্যক্রমে নিয়োজিত। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন এবং ইসলামিক কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দাওয়া কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকেন।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।