হাজী সাহেব বললেন, নামাজ ছেড়ে দেওয়া এবং প্রসাবে অসতর্কতার কারণে কবরে শাস্তি দেওয়া হচ্ছিল
আহমাদপুর শারকিয়ায় একজন পূণ্যবতী মহিলা ছিল। তিনি একটি দ্বীনি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তাঁর রোগ নির্ণয় করা যাচ্ছিল না। ভাওয়ালপুর হাসপাতালে তাকে আমার তত্ত্বাবধানে ভর্তি করা হল। কিছু দিন চিকিৎসা চললো, কিন্তু তিনি সুস্থ হলেন না, মারা গেলেন। তার চিকিৎসার ব্যয় নির্বাহ করতেন করাচীর একজন হাজী সাহেব। সেই হাজী সাহেবকে জানানো হল, তিনি এলেন। ইতোমধ্যে মহিলাকে দাফন করা হয়েছিল। হাজী সাহেব মহিলার কবরের সামনে এসে বললেন, মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত মহিলার কবরে বর্ষিত হচ্ছে। কবরে মহিলা খুব ভাল আছেন।
পর দিন সেই কবরস্থানে হাজী সাহেব পুনরায় গেলেন। ফিরে আসার পর ছিলেন বেশ গম্ভীর। সারাক্ষণ কাঁদতেন। তিন দিন তিনি কিছু পানাহার না করায় বেশ দুর্বল হয়ে গেলেন। হাজি সাহেবের ডাক্তার জামাতা আমাকে শ্বশুরের কাছে নিয়ে গেলেন। আমি গিয়ে দেখি হাজী সাহেব সিজদায় পড়ে দোয়া এস্তেগফার করছেন আর শুধু কাঁদছেন। তার কান্না ছিল মন তোলপাড় করা আহাজারী। যারা সে হৃদয় বিদারক কান্না শুনতো তাদের চোখেও অশ্রুসজল হয়ে যেত। আমি তার সাথে বলার চেষ্টা করলাম। তার এরকম অবস্থা হওয়ার কারণ জানতে চাইলাম। বললাম, হাজী সাহেব আমাকে বলুন, আপনার কি হয়েছে?
হাজী সাহেব আমার প্রতি তাকালেন। তারপর বললেন, হযরত মাওলানা আহমদ আলী লাহোরী আমাকে কালকে কবরের অজিফা শিক্ষা দিয়েছেন। প্রথম দিন আমি আমার পরিচিত মহিলার কবরে গিয়ে কাশফে কবরের ওজিফা পাঠ করলাম। মহিলার কবর থেকে খবর পাওয়া গেল যে, তিনি ভাল আছেন। পর দিন একই ওজিফা অন্য কবরের পাশে পড়ে দেখি পুরো কবরস্থানে মাত্র তিনটি স্থান বাদে অন্য সব কবরে আগুন জ্বলছে। কবরের লাসগণ চিৎকার করছে, ছটফট করছে। কোনো কবরে আগুনের তীব্রতা বেশি, কোন কবরে আগুনের তীব্রতা কম।
হাজী সাহেব বললেন, এমন দৃশ্য দেখার পর কাঁদবো না তো কি করবো?
ওসব লাশের কবরের শাস্তি কমিয়ে দেওয়ার জন্য মহান আল্লাহর নিকট দোয়া করছি। এত ভয়াবহ শাস্তি যে, যদি আপনারা দেখতেন টবে হয় তো পাগল হয়ে যাবেন অথবা ভয়ে আতঙ্কে মরে যাবেন। তারপর হাজী সাহেব রাসূল (সাঃ)-এর একটি হাদিস শুনালেন। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, কবরের আযাব এত ভয়াবহ যে, মানুষ যদি সেই আযাব দেখে অথবা সেই আযবের শব্দ শোনে তাহলে তারা পাগল হয়ে জঙ্গলে চলে যাবে। লাশদের দাফন করা বন্ধ করে দিবে।
আমি হাজী সাহেবকে কবরে এতো ভয়াবহ শাস্তির কারণ জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বলেন, নামাজ ছেড়ে দেওয়া এবং প্রসাবে অসতর্কতার কারণেই মুর্দারের এত শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কবরের সেই ভয়াবহ দৃশ্য দেখার পর হাজী সাহেব সারাক্ষণ কাঁদতেন। কাঁদতে কাঁদতেই তিনি একদিন মৃত্যুবরণ করেন।