হাজরে আসওয়াদ বৈশিষ্ট্য ফযীলত ও ঐতিহাসিক কিছু ঘটনা

হাজরে আসওয়াদ হলো, পবিত্র কাবার গায়ে এটে দেয়া একটি পাথর। হাজীগণ হজ্জ করতে গিয়ে তাতে সরাসরি বা ইশারা করে চুমু দিয়ে থাকেন। হ্যাঁ, আজ সেই হাজরে আসওয়াদ নিয়েই বলছি। হাজরে আসওয়াদ সম্পর্কে বিভিন্ন ধরণের কথা পাওয়া যায়। যা মোটেও সঙ্গত নয়। বলা যায় এগুলো অনেক দূরবর্তী চিন্তা-চেতনার বহিঃপ্রকাশ। এমনকি বড় পরিতাপের বিষয় হলো, কিছু মুসলিম নামধারী গবেষকও পবিত্র পাথরটিকে জান্নাতি নয় এমন পক্ষাবলম্বন করেছেন। বরং এ ক্ষেত্রে আলোচনা এত নিম্নে পৌঁছেছে যে, এটি মহাকাশ হতে নিক্ষিপ্ত একটি উল্কাপিন্ড বলে ধারণা করা হয়েছে। ফলে এসব অমূলক কথা-বার্তার ওপর নির্ভর করে অনেক অবুঝ হাজরে আসওয়াদের মাহাত্ত্ব উৎস সম্বলিত অধিকাংশ হাদীসসমূহকে অস্বীকার করে বসেছে। অনেকে আবার বলে এটি সামান্য পাথর মাত্র। তার আবার উপকার বা অপকার করার সাধ্য কোথায়।

তাই বলা যায় কিছু মুসলিম নিজেদেরকে স্বেচ্ছায় কলুষিত করার লক্ষ্যে এই পবিত্র গৃহ ও তৎসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অযথা সন্দেহে পতিত হয়েছেন। অথচ নিঃসন্দেহে পবিত্র কাবাঘর নিজ বুকে একটি মহান পবিত্র বস্তুকে আগলে রেখেছে। যা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই আমরা বক্ষমান নিবন্ধে হাজরে আসওয়াদ সম্পর্কে কিছু হাদীস এবং হাজরে আসওয়াদের ওপর বয়ে যাওয়া কিছু প্রামানিক ঘটনা তুলে ধরার প্রয়াস চালাব, ইনশাআল্লাহ। হাজরে আসওয়াদ : পরিচিতি ও সূচনা ইতিহাসের গ্রন্থগুলো এমনিভাবে তাফসীরের বিভিন্ন কিতাব এবং হাদীসের বিশাল ভান্ডার পবিত্র মক্কা নগরীর উত্থান, তার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মহান পবিত্র কাবা গৃহের নির্মাণ সম্পর্কিত বর্ণনা নিজের বক্ষে ধারণ করে আজও জীবন্ত। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এসকল তথ্য ভান্ডারগুলোতে বর্ণনাবীদগণ এমন সব উদ্ধৃতি দেন যা কুরআন এবং হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক। এ ছাড়াও তাদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণগুলো গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এগুলো অধিকাংশই অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বই-পুস্তক ও তাদের বিভিন্ন বর্ণনা হতে সংগৃহীত। এছাড়া বিষয়টি আল্লামা হাফেজ ইবনে কাছীর রহ. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থের ১ম খন্ডের ৩৮৩ পৃষ্ঠায় গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেছেন।

 

এতদসত্ত্বেও আমাদের মধ্যে অনেক আলেম, বিজ্ঞজন ঐসব বর্ণনাকে নিসঙ্কোচে গ্রহণ করছেন। অথচ তারা জানেন যে, এগুলোর অধিকাংশই ইসরাঈলী বর্ণনা। ফলে আমাদেরকে অনেক ক্ষেত্রে থমকে দাঁড়াতে হয় এবং বিষয়টি সম্পর্কে তো অবশ্যয় আলোচনার দাবী রাখে যে, তাদের মধ্যকার অনেক গবেষকের ধারণা ‘হাজরে আসওয়াদ’ এটি একটি উল্কাপিন্ড মাত্র। এটি কোন জান্নাতি পাথর নয়। এছাড়াও এধরণের আরো অনেক বর্ণনা ও মতামত পাওয়া যায় যার দ্বারা সর্বস্তরের পাঠক কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে পড়ে। বিশেষত সত্যানুসন্ধানী পাঠককে বিস্মিত করে যখন তা কোন অগ্রহণযোগ্য বা অপ্রত্যাশিত ব্যক্তি থেকে পাওয়া যায়। ইবরাহীম আ. এর কাবাঘর নির্মাণ এবং হাজরে আসওয়াদের আত্মপ্রকাশ ইবরাহীম আ. কর্তৃক পবিত্র কাবাঘর নির্মাণ একটি স্বীকৃত বিষয় যা কুরআনে কারীম ও বিভিন্ন হাদীসে নববী দ্বারা প্রমাণিত। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- “স্মরণ করুন সে সময়ের কথা যখন ইবরাহীম আ. ও ইসমাঈল আ. কাবা ঘর নির্মাণ করে ছিলেন আর বলে ছিলেন, হে আমাদের প্রভূ! আপনি আমাদের পক্ষ হতে উহা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা এবং সর্ব জ্ঞাতা।” [সূরা আল-বাকারা : ১২৭] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী- ‘যদি কেউ অশ্লীলতা ও পাপাচারে না জড়িয়ে হজ্জ কার্য সম্পাদন করতে পারে। তবে সে হজ্জ হতে এমনভাবে প্রত্যাবর্তন করবে। যেন সে সদ্ব্য জন্মলাভ করলো।’ [ফাতহুল বারী ৪/২৫ হা. ১৫২১] আল্লামা আজরুকী রহ. যা বর্ণনা করেছেন- ‘যখন গৃহ নির্মাণ কাজে কিছুটা অগ্রসর হলো, তখন ইসমাঈল আ. পিতা ইবরাহীম আ.-এর পায়ের নিচে একটি পাথর রেখে দিলেন। যার ওপর দাঁড়িয়ে তিনি নির্মাণ কাজ করতেন। আর ইসমাঈল আ. কাবার বিভিন্ন কোনে অসমাপ্ত কাজ পূর্ণ করতেন। অবশেষে নির্মাণ কাজ বর্তমান ‘হাজরে আসওয়াদ’ এর স্থান পর্যন্ত এলে, ইবরাহীম আ. ইসমাঈল আ.কে লক্ষ্য করে বললেন- ‘আমি একটি পাথরের টুকরো চাই যা আমি এই স্থানটিতে রাখবো। লোকেরা দেখে বুঝবে যে, তাওয়াফ এই স্থানটি থেকে শুরু হবে।

 

পিতার নির্দেশে ইসমাঈল আ. পাথর খোঁজতে গিয়ে পাথর হাতে ফিরে আসার পূর্বেই জিবরাঈল আ. ‘হাজরে আসওয়াদ’ নিয়ে উপস্থিত হন। আল্লাহ তাআলা নূহ আ.-এর প্লাবনের সময় পাথরটিকে মক্কায় অবস্থিত ‘আবু কুবাইস’ পাহাড়ে সংরক্ষণ করেন। এবং ঘোষণা দেন, আমার খলীল ইবরাহীমকে যখন আমার ঘর নির্মাণ করতে দেখবে, তখন তাঁর নিকট পাথরটি পৌঁছে দিবে। (বর্ণনাকারী বলেন) তারপর ইসমাঈল আ. ফিরে এসে পিতাকে লক্ষ্য করে বললেন, এ পাথর আপনি কোথা থেকে লাভ করলেন? উত্তরে বললেন, পাথরটি আমার নিকট এমন এক ব্যক্তি নিয়ে এসেছে, যিনি আমাকে তোমার পাথরটি গ্রহণ হতে বিমুখ করে দিয়েছে। আর তিনি হলেন সম্মানিত জিবরাঈল আ.। তারপর হাজরে আসওয়াদকে যখন তার স্বীয় স্থানে প্রতিস্থাপন করা হলো। তখন ইবরাহীম আ. তার চার পার্শ্ব পাকা করে দিলেন। এবং তখন থেকেই তার অত্যাধিক শুভ্রতার দ্বারা চারপাশকে ঝলমলে করে রাখতো। যেন তার জ্যোতি পূর্ব-পশ্চিম, ডানে-বামে ঠিকরে পড়ছে। (বর্ণনাকারী আরো বলেন: ‘হাজরে আসওয়াদ’ এত আলোকময় ছিলো যে, মনে হতো কাবা ঘৃহের চার পার্শ্ব থেকে যেন তার দ্যুতি দিয়ে পুরো বিশ্বকে আলোকিত করে ফেলবে।’ [আখবারু মক্কা, আবরুকী : ১/৬৫] হাজরে আসওয়াদ কিছু বৈশিষ্ট্য হাজরে আসওয়াদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য হাদীস গ্রন্থগুলোতে প্রচুর পরিমাণে উদ্ধৃতি পাওয়া যায়। নিম্নে কয়েকটি হাদীস তুলে ধরা হলো- ১.নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হাজরে আসওয়াদ’ জান্নাতি একটি পাথর, তার রঙ দুধের চেয়ে বেশি সাদা ছিলো।

এরপর বনী আদমের পাপরাশি তাকে কালো বানিয়ে দিয়েছে।’ [জামে তিরমিযী : ৮৭৭, মুসনাদে আহমাদ : ১/৩০৭, ৩২৯] ২. অন্য হাদীসে ইরশাদ হচ্ছে, হাজরে আসওয়াদ তথা কালো পাথরটি জান্নাতেরই একটি অংশ।” [সহীহ ইবনে খুযায়মা : ৪/২২০] ৩. অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- হাজরে আসওয়াদ এবং মাকামে ইবরাহীম জান্নাতের দুটি মূল্যবান পাথর। আল্লাহ তাআলা উভয়ের জ্যোতি বিলুপ্ত করে দিয়েছেন। অন্যথায় তা পুরো বিশ্বকে আলোকিত করে রাখতো।’ [সহীহ ইবনে হিব্বান, হা. ৩৭১০, মুসতাদরাকে হাকেম, হা. ১৬৭৯] ৪. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন- জাহিলিয়াতের নাপাকি আর অপবিত্রতা যদি পাথরটিকে স্পর্শ না করতো। তবে যে কোন পাগল তা স্পর্শ করা মাত্রই সুস্থতা লাভ করতো। এবং আল্লাহ তাআলা তাকে যে জ্যোতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, মানুষ তার সেই আসল আকৃতিতে দেখতে পেত। তবে কালো রঙ দ্বারা তাকে পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। যাতে দুনিয়াবাসী দুনিয়াতেই জান্নাতের সৌন্দর্য্য দেখে না ফেলে। আর নিশ্চয় এটি জান্নাতের শুভ্র পাথরসমূহের একটি।’

[আখবারু মক্কা, আজরুকী : ১/৩২৩, আল-কুবরা, তাবারী : পৃ. ২৯৩] হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা হাজরে আসওয়াদ চুম্বন সম্পর্কে রাসূল সা. এর বাণী এবং সাহাবাগণের আমলের বর্ণনা নির্ভরযোগ্য হাদীসের গ্রন্থগুলোতে ভরপুর। ১.রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন- কিয়ামতের দিন এ পাথরটি ‘আবু কুবাইস’ পাহাড় থেকে বড় আকার ধারণ করে উপস্থিত হবে। তার একটি জিহ্বা ও দুটি ঠোঁট থাকবে, (বায়তুল্লাহর যিয়ারতকারীরা) কে কোন নিয়তে তাকে চুম্বন করেছে, সে সম্পর্কে বক্তব্য দিবে। আর ইট আল্লাহর ডান হাত যদ্বারা তিনি তার বান্দার সাথে মুসাফাহা করেন।” [সহীহ ইবনে খুযায়মা : ৪/২২১, মুসতাদরাকে হাকেম : ১/৪৫৭] ২. আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা.কে হাজরে আসওয়াদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বললেন, আমি রাসূল সা.কে তা স্পর্শ ও চুম্বন করতে দেখেছি।” [সহীহ মুসলিম : হা. ১২৬৭] ৩. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন- তোমরা এই পাথরটি বেশি বেশি করে চুম্বন করো। কারণ তোমরা হয়তো অচিরেই তাকে হারিয়ে ফেলবে। এমন একসময় আসবে লোকেরা রাতের বেলায় তাকে চুম্বন করে সকাল থেকে তাকে আর দেখতে পাবে না। কারণ, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের পূর্বমুহূর্তে দুনিয়াতে অবস্থিত জান্নাতি সকল বস্তু স্ব-স্থানে ফিরিয়ে দিবেন।

[আখবারু মক্কা, আযরুকী : ১/৩৪২-৩৪৩] ৪. ওমর বিন খাত্তাব রা. একদা হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করার পর বললেন, আমি জানি তুমি পাথর মাত্র। উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা তোমার নেই। তারপরও আমি যদি তোমাকে আমার প্রিয় হাবীব রাসূল সা. চুম্বন করতে না দেখতাম, তবে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না। এরপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন- “নিশ্চয় আল্লাহর রাসূলের মাঝে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে।” [আল-আহযাব : ২১] এসময় উবাই বিন কাব রা. বলে উঠলেন, নিশ্চয় তা উপকার ও ক্ষতি উভয়ই করতে পারে।
আর কিয়ামতের দিন তো এটি  বাকপটু জিহ্বা নিয়ে উঠবে। এবং তাকে যারা চুম্বন ও স্পর্শ করেছে, তাদের ব্যাপারে সে সাক্ষ্য দিবে। ঠিক সে মুহূর্তে আলী বিন আবি তালিব রা. তাঁকে সমর্থন জানিয়ে বললেন, হ্যাঁ, আমীরুল মুমিনীন! নিশ্চয় তা উপকার ও ক্ষতি সাধন করতে পারে। এ ছাড়াও আমি রাসূল সা. কে বলতে শুনেছি- কিয়ামতের দিন হাজরে আসওয়াদকে উপস্থিত করা হবে। তার একটি জিহ্বা থাকবে যাদ্বারা সে তাকে চুম্বনকারী সকল মুসলমানদের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। এসব কথা শ্রবণান্তে ওমর রা. বললেন, সে জাতির জীবন যাত্রার মাঝে কোন কল্যাণ নেই।
যাদের মাঝে আবুল হাসান তথা আলীর রা. উপস্থিতি নেই। [আল-জামে আল-লতিফ ফী ফাযলে মক্কা ওয়া আহলুহা ওয়া বিনাউল বাইতিশ শরীফ : পৃ. ৩৫] ৫. হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- নিশ্চয় এ পাথরটির একটি জিহ্বা ও দুটি ঠোঁট রয়েছে। সে তার চুম্বনকারীদের ব্যাপারে কিয়ামতের দিন সত্য সাক্ষ্য দেবে। [সহীহ ইবনে হিব্বান : ৯/১২, সহীহ ইবনে খুযায়মা : ৪/২২১] ৬. আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, পৃথিবীতে দুটি বস্তু এমন রয়েছে যা জান্নাতের অংশ।

এক. হাজরে আসওয়াদ, দুই. মাকামে ইবরাহীম। মর্যাদার দিক থেকে ‘আবু কুবাইস’ পাহাড় পরিমাণ উঁচু। উভয়েরই দুটি চোখ ও দুটি ঠোঁট রয়েছে। এবং উভয়েই তাদের পূর্ণসম্মান দাতাগণের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিবে।” [আদ-দুররুল মানশুর, সুয়ূতী : ১/১১৯] ৭. আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. আরো বলেন যে, নবী সা. বিদায় হজ্জে একটি উটের ওপর সওয়ার হয়ে তাওয়াফ করেছেন। এবং সে সময় তিনি একটি বাঁকা মাথা ওয়ালা লাঠি দ্বারা হাজরে আসওয়াদকে (ইশারা করে চুম্বন করেছেন।”
[ফাতহুলবারী : ৩/৫৩৬ হা. ১৬০৭] উপরোক্ত হাদীসগুলো থেকে বুঝা যায় যে, কেউ যদি হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করতে সক্ষম না হয়, হাত দ্বারা তাকে স্পর্শ করতে সক্ষম হয়, তাহলে সে হাতকেই চুম্বন করবে এবং চেহারায় হাত বুলাবে। কারণ, আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর রা. যখন হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করার ইচ্ছা করতেন, তখন তিনি তাঁর চেহারায় উপর-নিচ করে হাত বুলাতেন।
[আখবারু মক্কা : ১/১০৬] হাজরে আসওয়াদের কিছু অজানা ঘটনা প্রবাহ ইসলামপূর্ব কুরাইশদের যুগে কাবা শরীফের গিলাফ যখন পুড়ে গিয়েছিল, তখন এই হাজরে আসওয়াদও পুড়ে গিয়েছিলো। ফলে তার কৃষ্ণতা আরো বৃদ্ধি পেল। ক. কুরাইশরা যখন কাবা শরীফকে পুনঃনির্মাণ করে, তখন রাসূলুল্লাহ সা. হাজরে আসওয়াদকে স্ব-স্থানে রেখে দেন। এসময় তাঁর বয়স ছিল ৩৫ বছর। খ. আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. এর শাসনামলে হাজরে আসওয়াদ ভেঙ্গে তিন টুকরো হয়ে গিয়েছিল। ফলে তিনি তাকে রুপা দিয়ে বাঁধালেন। আর তিনিই সর্বপ্রথম হাজরে আসওয়াদকে রুপা দিয়ে বাঁধানোর সৌভাগ্য অর্জনকারী। গ. ১৭৯ হিজরীতে খলীফা হারুনুর রশীদ রহ. হাজরে আসওয়াদকে রুপা দ্বারা বাঁধায় করা দেখে তাঁর মনে পাথরটিকে সংরক্ষণ ও মেরামতের খেয়াল এল। ফলে তিনি হীরা দ্বারা তাকে ছিদ্র করে রুপা দ্বারা ঢালায় করে দেন।
ঘ. ১৮৮ হিজরীতে আব্বাসী খলীফা হারুনুর রশীদ রহ. তাঁর এক নির্মাতাকে নির্দেশ দিলেন। ফলে রুপা অপসারণ করা হয়। এবং তাঁরই নির্দেশে হাজরে আসওয়াদসহ তার আশপাশের উপর নিচের পাথর ছিদ্র করে তাতে রুপা ঢেলে দেওয়া হয়।
ঙ. ৩১৭ হিজরীতে কারামতিরা হারাম শরীফে অতর্কিত আক্রমণ করে হাজরে আসওয়াদ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এবং ৩৩২ হিজরীতে ফিরিয়ে এনে চুনা দিয়ে তার চারপাশ এঁটে দেওয়া হয়।
চ. ৩৬৩ হিজরীতে রোম দেশীয়ও এক অমুসলিম ব্যক্তি হাজরে আসওয়াদ আক্রমণ করে। এবং ইস্পাতের কুড়াল দ্বারা আঘাত করে। ফলে তাতে দাগ পরে যায়।
ছ. ৪১৩ হিজরীতে এক নাস্তিক লৌহ শলাকা দ্বারা হাজরে আসওয়াদের ওপর হামলে পড়ে। ফলে তা ছিদ্র হয়ে যায়। এরপর বনী শায়বার কিছু লোক তার ভগ্নাংশগুলোকে একত্র করে কস্তুরি দ্বারা ধৌত করে তার টুকরোগুলো পুনরায় জোড়া লাগিয়ে দেয়।
জ. ৯৯০ হিজরীতে ইরাকের আধিবাসী এক অনারব লোক মক্কায় আসে। এবং লৌহ শলাকা দ্বারা হাজরে আসওয়াদ আক্রমণ করে। ফলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তবে এবার কোন ক্ষতি করতে পারেনি।
ঝ. ১৩৩১ হিজরীতে সুলতান মোহাম্মদ রাশাদ হাজরে আসওয়াদের চারপাশে রুপার একটি নতুন বেষ্টনি তৈরি করে দেন।
ঞ. আফগানিস্থান থেকে এক ব্যক্তি মক্কায় এসে হাজরে আসওয়াদের একটি টুকরো উপড়ে ফেলে দেয়। এবং ঐ লোকটি কাবার গিলাফের একটি অংশের সাথে কাবার চৌকাঠের এক টুকরো রুপাও চুরি করে নিয়ে যায়।
ট. ১৮/০৪/১৩৫১ হিজরীতে বাদশাহ আব্দুল আযীয রহ. বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও অনেক আলেম ওলামাসহ কাবা শরীফে উপস্থিত হলেন এবং হাজরে আসওয়াদের মজবুতির জন্য তাতে মেশকে আম্বরেমত মূল্যবান পাথর সংযুক্ত করেন।
ঠ. ২২/০৮/১৩৭৫ হিজরীর বুধবার দিন সউদী বাদশাহ রুপার একটি নতুন বেষ্টনি স্থাপন করেন। এবং ১৩৩১ হিজরীতে স্থাপিত বেষ্টনি পরিবর্তন করে ফেলেন। ড. ১৪১৭ হিজরীতে পবিত্র কাবাঘরের সাথে সাথে হাজরে আসওয়াদেও বিশেষ রুপার দ্বারা নতুন বেষ্টনি স্থাপিত হয়।

হরিণ শিকারী,নেকড়ে এবং বুনো শূকর

শকুন ও শেয়াল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *