হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) – পর্ব ৫

হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) – পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

একবার হজ্জ যাত্রার তাঁর সঙ্গে ছিলেন চার হাজার হজ্জযাত্রী। তাঁদের নিয়ে তিনি মক্কায় পৌঁছে কাবা ঘরের সামনে ঐ যে দাঁড়ালেন, পুরো একবছর আর নড়লেন না। এভাবে দাঁড়িয়ে রইলেন। সুর্যের তাপে দেহ গলে গিয়ে চর্বি বেরোতে লাগল। গায়ের চামড়া গেল ফেটে। কিন্তু তিনি এক চুলও নড়লেন না। এ অবস্থায় এক লোক প্রতিদিন তাঁকে একটি রুটি এক কুঁজো পানি দিয়ে আসত। তার থেকে মাত্র এক ঢোক পানি আর এক টুকরো রুটি খেয়ে বাকী সব রেখে দিতেন।

হযরত মানসুর হাল্লাজ (রঃ) আরাফাতের মাঠে গিয়ে আল্লাহ্‌র দরবারে প্রার্থনা করেন, প্রভু গো আপনি পথ ভ্রষ্ট মানুষের পথপ্রদর্শক। আমি যদি সত্যিই কাফের হয়ে থাকি, তবে আমার কুফরীই বাড়িয়ে দিন। যখন লোকজন তাঁর চারপাশ থেকে চলে যেত, তখন তিনি আবার দোয়া করতেন, প্রভু! আমি আপনার একত্ব স্বীকার ও বিশ্বাস করেই আপনি ছাড়া আর কারও এবাদত করি না। আর আপনার দেয়া দানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে অক্ষম বলে তা প্রকাশ করতে পারি না। অতএব, আমার অনুরোধ, আমার বদলে আপনিই আপনার নেয়ামতসমূহের শোকর আদায় করুন। কেননা, আপনার প্রদত্ত নেয়ামতসমূহের সম্পূর্ণ শোকর আদায় আপনার কোন বান্দার দ্বারা সম্ভব নয়। সেটি কেবল আপনার দ্বারাই হতে পারে।

হযরত মানসুর (রঃ) হযরত মূসা (আঃ)-এর একটি ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, হযরত মূসা (আঃ) একবার ইবলীসকে জিজ্ঞেস করেন, সে হযরত আদম (আঃ)-কে সেজদা করেনি কেন? ইবলীস বলল, সে আল্লাহ্‌র প্রতাক্ষদর্শী ও সেজদাকারী ছিল। সুতরাং আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কাউকে সেজদা করার তাঁর কাছে সঙ্গত নয় বলে মনে হয়েছিল। আল্লাহ্‌র দীদারের মূল্য ও গুরুত্ব কী অপরিসীম, হযরত মূসা (আঃ) তা জানেন। আল্লাহ্‌র দীদার লাভের প্রতি তাঁর তীব্র বাসনার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্‌ হযরত মূসা (আঃ)-কে বললেন, পাহাড়টার দিকে তাকান। আর আপনিও প্রবল বাসনা নিয়ে পাহাড়টির দিকে দৃষ্টি দেন।

ধৈর্যের সংজ্ঞা কি? এ প্রশ্নের উত্তরে হযরত মানসুর (রঃ) বলেন, হাত-পা কেটে ফেললেও,

শূলে চড়ালেও দুঃখ না করা এবং বিচলিত না হওয়ার নাম ধৈর্য। হযরত ফরীদ উদ্দীন আত্তার (রঃ) বলেন, আশ্চর্য লাগে, হযরত মানসুর হাল্লাজ (রঃ)-এর প্রতি শূলার যে ঘটনা ঘটল, তাতে এতটুকু দুঃখ বা আক্ষেপ প্রকাশ করলেন না।

হযরত শিবলী (রঃ) গেছেন হযরত হাল্লাজ (রঃ)-কে হত্যা করতে। হাল্লাজ (রঃ) বললেন, আমি এমন এক গুরুতর কাজ করার ইচ্ছা করেছি যার কারণে আমি পাগল প্রায়। আর আমি নিজেই তো মৃত্যুকে আহ্বান করেছি। অতএব, আপনি আমাকে হত্যা করবেন না।

আগেই বলা হয়েছে, তাঁর ‘আনাল হক’ মানুষের রোষ বৃদ্ধি করে। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, আপনার আল্লাহত্বের দাবী কি কুফরী নয়? তিনি বললেন, আল্লাহ্‌র প্রকৃত পরিচয় হল, সবকিছুই তাঁর। আর আপনাদেরই কথায়, তিনি কখনও বিলুপ্ত হন না। তবে কি হুসাইন মানসুর বিলীন হয়ে গেছে?

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) – পর্ব ৬ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।