হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) – পর্ব ১০

হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) – পর্ব ৯ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

কোন এক দরবেশ বলেন, যে রাতে হযরত মানসুর (রঃ)-কে শূলে দেয়া হয়, সে রাতে ভোর পর্যন্ত তিনি শূল কাঠের নিচে মোরাকাবায় কাটিয়ে দেন। ভোরের দিকে তিনি এক অদৃশ্য বাণী শুনতে পান। তাতে বলা হয়, আমি আমার গোপন রহস্যাবলীর একমাত্র রহস্য মানসুরের কাছে উন্মোচন করেছিলাম যা সে জনসমক্ষে প্রকাশ করে দিল। যার ফলে তাঁকে এরূপ কঠোর পরিণতির শিকার হতে হল। কোন শাহী রহস্য ফাঁস করে দিলে তার পরিণতি এরূপই হয়ে থাকে।

হযরত শিবলী (রঃ) বলেন, তার দেহ ভস্ম দাফন করার পর তিনি সেখানেই সারা রাত উপাসনায় কাটিয়ে দেন। ভোরবেলায় আল্লাহ্‌র দরবারে মোনাজাত করেন। হে প্রভু, মানসুর হাল্লাজ (রঃ) একজন মুমিন বান্দা ছিলেন। তিনি তত্ত্বজ্ঞানী, প্রেমিক, তওহীদবাদী। তা সত্ত্বেও আপনি তাঁকে এমন কঠিন অবস্থায় ফেলে দিলেন? তাঁর প্রার্থনা তখনও শেষ হয়নি। হঠাৎ তাঁর ঘুম নামে দু’চোখে আর তিনি স্বপ্ন দেখেন, রোজ কিয়ামত উপস্থিত। আল্লাহ্‌ পাক ঘোষণা করছেন, আমি তাঁর সঙ্গে এরূপ ব্যবহার এজন্য করেছি যে, সে আমার গোপন রহস্য মানুষের কাছে ফাঁস করে দিত।

যে গোপন রহস্য দজলা নদীর ওপর প্রকাশ করা উচিত ছিল সে তা মানুষের কাছে প্রকাশ করে দিয়েছিল। হযরত শিবলী (রঃ) দ্বিতীয় রাতে পুনরায় তাঁকে স্বপ্নযোগে দেখেন। আর তাঁর অবস্থা জানতে চান, তাঁর সমর্থক ও বিরোধী- এই দু’দলের সঙ্গে আল্লাহ্‌ কিরূপ ব্যবহার করবেন। তিনি বললেন, দু’দলের ওপরই আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ বর্ষিত হবে। একদল আমাকে বিশেষভাবে জানত ও আমার সম্বন্ধে ভালো ধারণা করত। অন্য দল জানত না, কিন্তু আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভের জন্যই আমার বিরোধিতা করত, তাই উভয় দলই আল্লাহ্‌র প্রিয় ও করুণার পাত্র বলে বিবেচিত।

কোন এক দরবেশ স্বপ্ন দেখেন, হাশরের মাঠে হযরত মানসুর হাল্লাজ (রঃ) শরাবের পেয়ালা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু তাঁর দেহের সঙ্গে মাথা যুক্ত নয়। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, পৃথিবীতে যাদের শিরচ্ছেদ হয়েছে, তাঁরাই হাশরের মাঠে শরাবের পেয়ালার অধিকারী হবে।

হযরত শিবলী (রঃ) বলেন, হযরত হাল্লাজ (রঃ)-কে যখন শূলে তোলা হয়, তখন ইবলীস তাঁর সামনে এসে বলে, আপনি যা বলেছেন আমিও তাই বলেছিলাম। আপনি ‘আনাল হক’ বলছেন, আমি বলতাম ‘আনা খাইরুন’ (আমি সর্বোত্তম)। তবে কেন আপনার প্রতি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ আর আমার প্রতি অভিশাপ অবতীর্ণ হল? হযরত হাল্লাজ (রঃ)-জবাব দেন, তুমি তা বলেছিলে অহমিকা-প্রসূত হয়ে স্বেচ্ছায়। আর আমি আনাল হক বলেছিলাম আমার আমিত্ব সম্পূর্ণ বিসর্জন দিয়ে আল্লাহ্‌রই ইচ্ছায়। এই বলে অনুগ্রহ ও অভিশাপের কারণ। জেনে রেখো, অহঙ্কার আল্লাহ্‌র দরবারে অত্যন্ত ঘৃণিত, নিকৃষ্ট। পক্ষান্তরে আমিত্ব বিসর্জন দেয়া হল আল্লাহ্‌র কাছে অত্যন্ত প্রিয় ও পছন্দনীয় কাজ।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) – শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।