হযরত হুদ (আঃ) এর বংশ পরিচয়-২য় পর্ব
হযরত হুদ (আঃ) এর বংশ পরিচয়-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আদ জাতির লোকেরা ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী ও দীর্ঘকায়। তাঁদের মধ্যে উর্দ্ধে চারশ গজ পর্যন্ত লম্বা মানুষ ছিল। আর বেঁটেদের উচ্চতা ছিল সত্তর গজ। তারা দুতিন জনে একত্রিত হয়ে ছোট ছোট পাহাড় উল্টিয়ে ফেলতে পারত। পাড়ারের উপরে দাঁড়িয়ে যদি পা দিয়ে আঘাত করত তাহলে পাথরের মধ্যে পা গেড়ে যেত। যে কোন গাছপালা উপড়িয়ে ফেলা ছিল অত্যন্ত সহজ কাজ। তারা সেচ দ্বারা কৃষি কাজ করত। এ জন্য পানি রক্ষণের উদ্দেশ্যে তারা নদীর ন্যায় বড় বড় জলাশয় তৈরি করে রাখত। বর্ষা মৌসুমে সেখানে পানি জমা হত। সারা বছর সে পানি সেচ করে কৃষি কাজ করত। তখনকার দিনে আল্লাহ তা’য়ালা অল্প দিনে ক্ষেত খামারে বহুগুণ ফসল দান করতেন। ক্ষেতে গমবীজ বপন করলে পনের দিনের মধ্যে গম পেকে যেত। আঙুর, বেদানা, আনার, আপেল, ইত্যাদি জাতের ফলের গাছ রোপণ করার দুতিন মাস পরেই পাকা ফল পাওয়া যেত। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল খুবই সচ্ছল। কোন অভাব অভিযোগ তাদের ছিল না। শারীরিক অবস্থা ছিল খুবই ভাল। ড়গ ব্যাধি আদৌ ছিল না বললেই চলে।
কওমে আদ যখন নবীর দাওয়াত অগ্রাহ্য করল তখন নবী তাদের জন্য বদদোয়া করলেন। আল্লাহ তা’য়ালা নবীর বদদোয়া কবুল করে একাধারে তিন বছর যাবত বৃষ্টি বন্ধ করে দিলেন । এতে তাদের তৈরি করা সমস্ত ঝিল, নদী, শুকিয়ে গেল, ফলে ফসল উৎপাদন বন্ধ হল। তখন জাতির উপর নেমে আসল ভীষণ দুর্ভিক্ষ । অনাহারে, অর্ধাহারে মানুষ দিন কাটাতে লাগল। বড় বড় পালোয়ানদের শরীরের শক্তি হ্রাস পেল। রাস্তাঘাটে মানুষের লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেল। বৃদ্ধা ও শিশুরা অধিক হারে মৃত্যু বরণ করতে লাগল। সারা দেশময় ভীষণ হাহাকার আরম্ভ হয়ে গেল। মানুষ গাছের পাতা ও অখাদ্য কুখাদ্য খেয়ে জীবন ধারণের চেষ্টা আরম্ভ করল।
আদ জাতির মধ্যে সত্তরটি গোত্র ছিল। এ সত্তরটি গোত্রের মোট লোকসংখ্যা ছিল লক্ষাধিক। তাদের মধ্য থেকে মাত্র সত্তর জন মানুষ নবীর দাওয়াত কবুল করে মেহমান হয়েছিল। এ সত্তর ব্যক্তি একদিন নবীর নিকট আরজ করে বলল, হে আল্লাহর নবী! দেশব্যাপী যেভাবে দুর্ভিক্ষের করাল ছায়া নেমে আসছে তাতে আমরা ও আমাদের আপনজনেরা কেউ রেহাই পাব বলে মনে হয় না। অতএব আপনি দোয়া করুন, আল্লাহ তা’য়ালা যেন এবারের জন্য এ গজব সত্বর উঠিয়ে নেন। আমরা জাতিকে হেদায়েতের পথে আনার জন্য আর একবার আপ্রাণ চেষ্টা করে দেখব। নবী উম্মতের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন। আল্লাহ তা’য়ালা নবীর দোয়া কবুল করে বৃষ্টি দিয়ে পুন ফসল উৎপাদনের বাবস্থা করলেন। যাতে করে দেশের সকম মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ত্যাগ করে সুখে স্বাচ্ছন্দে জীবন-যাপন করতে আরম্ভ করে। নবী তাদের নিকট দ্বীনের দাওয়াত পেশ করলে তারা পূর্বের ন্যায় নবীর প্রতি দুর্ব্যবহার করে এবং পরিষ্কার ভাবে বলে দেয় যে, তারা কোন দিনই তার দাওয়াত গ্রহন করবে না।
নবী বার বার তাদের নিকট দাওয়াত পেশ করেন এবং আল্লাহর আজাবের ভীতি প্রদর্শন করেন। কিন্তু তারা কোন ক্রমে নবীর প্রতি ঈমান আনল না। বরং কওমে আদের কতিপয় লোক নবীকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হল। তারা কথাবার্তা ও আলার ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের উদ্দেশ্য অনেকটা প্রকাশ করল। নবী তাদের আচার আচারন দেখে আল্লাহর দরবারে আশ্রয় প্রার্থনা করলেন।