হযরত হুদ (আঃ) এর বংশ পরিচয়-শেষ পর্ব
হযরত হুদ (আঃ) এর বংশ পরিচয়- তৃতীয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ফেরেস্তাগন আল্লাহ তা’য়ালার শেষোক্ত আদেশ কার্যকারী করার লক্ষ্যে সাতদিন পূর্বে আকাশে লাল,কাল,হলুদ রঙের মেঘের সমাবেশ করলেন। প্রবাহিত নদ-নদীর পানি স্থির করে দিলেন। চলমান সাধারণ বাতাসের গতি রুদ্ধ করলেন। এ অবস্থা দেখে কওমে আদের লোকেরা বিশ্বাস করল যে আল্লাহর আজাব অতি সন্নিকট। তখন তারা স্ত্রী, পুত্র পরিজন নিয়ে বিভিন্ন পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিল। যখন আর সময় অতিবাহিত হল তখন তারা সা পৃথিবী অন্ধকারাচ্ছন্ন দেখতে পেল। কওমে আদ এ অবস্থা দেখে কিছু তা ভীত হল এবং তারা পাহাড়ি এলাকায় গিয়ে নিজ স্ত্রী-পুত্রদেরকে মাঝখানে রেখে চতুর্দিকে যুবকেরা বেরিকেট সৃষ্টি করে দাঁড়াল। তার পর পা দিয়ে পাথরের উপর বার বার আঘাত করে করে হাঁটু পর্যন্ত গেড়ে দাঁড়াল যাতে কোন বাতাসে যেন তাদেরকে স্থানচ্যূত করতে না পারে। নির্দিষ্ট দিনে আল্লাহর আজাব জমিনে পৌঁছল। প্রবল ঝড় আরম্ভ হল। গাছ পালা, ঘর-বাড়ি প্রথমেই নিঃশেষ হয়ে গেল। তার পড়ে উঁচু উঁচু পাহাড় গুলো ভেঙ্গে ভেঙ্গে আকাশে উড়তে আরম্ভ করল। তাতে সমস্ত গুহার আবরন ও ছাদ ধ্বংস হয়ে গেল। ফলে বাতাস মানুষ গুলকে আকাশে উড়িয়ে নিয়ে গেল এবং সেখানে এক জনের সাথে অন্য জনের প্রবল আঘাত দিয়ে ধ্বংস করে দিল। তিন দিন পর্যন্ত মানুষ, গাছ ও পাহাড় শুধু বাতাসের উপর ভেসে ভেসে একে অপরকে প্রচণ্ডভাবে আঘাত করেছিল। তিন দিন পড়ে ঝড় থেমে গেল। তখন আকাশ থেকে মানুষের লাশ, গাছ ও পাহাড়ের ভগ্নাংশ মাটিতে পতিত হল। মানুষের লাশগুলো দেখতে উপড়ানো শিকড়যুক্ত খেজুর গাছের ন্যায় এলোমেলোভাবে যেখানে সেখানে পড়ে ছিল। পবিত্র কোরআনে দৃশটি এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বাতাস প্রবাহে নাস্তিক ও ধর্মদ্রোহীদের দল প্রায় সবই ধ্বংস হয়ে গেল। যারা নবীর উপর কিছুটা আস্থাশীল ছিল তারা অধিকাংশই রক্ষা পেল। কথিত আছে একদল ঈমানদার ব্যক্তি ঐ সময় উক্ত এলাকায় এমনভাবে নিরাপদে ছিলেন তারা
কিছুই জানতে পারেনি। তাদের কাপড়ের আঁচল পর্যন্ত বাতাসে উড়ে নি। তিন দিন পরে যখন নবী কওমের নিকট ফিরে আসলেন তখন জীবিত উম্মতেরা সারা দেশের পরিস্থিতি ও দৃশ্য দেখে অবাক হল। তারা আর কাল বিলম্ব না করে নবীর নিকট দ্বীনের পরিপূর্ণ ছবক গ্রহন করলেন। এ ছবক যারা গ্রহন করেছিল তারা খাটি ঈমানদার হিসেবে পৃথিবীর বুকে ইসলামী রাষ্ট্র পর্যন্ত কায়েম করতে সক্ষম হয়েছিল।
হযরত হুদ (আঃ)-এর ইন্তেকালের পরে একশত বছর পর্যন্ত এ ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম ছিল। হযরত হুদ (আঃ) চারশত বছর জীবিত থেকে কওমকে হেদায়েত করেছেন। হযরত হুদ (আঃ)-এর ইন্তেকালের পরে কয়েক লক্ষ মানুষ তার জানাজা নামায আদায় করে পরম ভক্তিসহকারে তার দাফন কার্য সম্পন্ন করেন। হযরত হুদ (আঃ) নবুয়তীর দায়িত্ব পালনে যতখানি সফলতা লাভ করেছিলেন তা নজির বিহীন। বিনা যুদ্ধে ও বিনা রক্তপাতে এতখানি সফলতা অর্জন করা অন্য কোন নবীর জীবনে দেখা যায় নি।
হযরত হুদ (আঃ) এর বংশ পরিচয়-প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন