হযরত সুলাইমান (আঃ) ও সাবা রাণীর ঘটনা – ২য় পর্ব

হযরত সুলাইমান (আঃ) অনন্তর স্বীয় কর্মে মনোনিবেশ করলেন। কিছুক্ষণ পরেই হুদহুদ তাঁর সামনে হাজির। হুদহুদ বুঝতে পারলে হযরত সুলাইমান (আঃ) তার প্রতি অসন্তুষ্ট। কাজেই তাঁর অসন্তুষ্টি দূর ও তাকে খুশী করার জন্য তার অনুপস্থিতির কারণ খুব ঘটা করে বর্ণনা করতে হবে। তাই সে প্রথমেই বলে উঠল-

فَقَالَ أَحَطتُ بِمَا لَمْ تُحِطْ بِهِ وَجِئْتُكَ مِن سَبَإٍ بِنَبَإٍ يَقِينٍ

আমি এমন বিষয় অবগত হয়ে এসেছি যা আপনি অবগত নন এবং আমি সাবা সম্প্রদায়ের এক সুনিশ্চিত খবর নিয়ে আপনার কাছে এসেছি। (সূরা নামল)

আরবের দক্ষিণে ইয়ামেন অবস্থিত ইয়ামেনের পূর্বে এক বিরাট এলাকার নাম সাবা। সাবার রাজধানী মাআরবের নামক স্থান ছিল। পরে এর পরিধি বিস্তার লাভ করে বর্তমান হাজরা মাউত এমন কি আফ্রিকার কিছু অংশ পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে এটা কাহতানী সম্প্রদায়ের একটি শাখা এ সম্প্রদায় আবদে শামসের সম্প্রদায় নামে খ্যাত। সাবা তার উপাধি। তার নামানুসারেই এ বংশের নামকরণ করা হয় সাবা।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ)-এর কাছে জিজ্ঞেস করল, কোরআনে যে সাবা নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তা কি পুরুষের নাম না নারীর নাম? রাসূল (সাঃ)

বলেন, তা পুরুষের নাম। তার দশটি পুত্র ছিল। তন্মধ্যে ছয় পুত্র ইয়ামেনে বসাবস করত আর অবশিষ্ট চার পুত্র সিরিয়া চলে গিয়েছিল। হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর যুগে সাবা সম্প্রদায়ের শাসনকর্তা ছিল এক রমণী। তার নাম বিলকিস। তার পিতার নাম ছিল শারাহীল।

কোন কোন বর্ণনায় আছে বিলকিসের মাতা ছিল পরী। তার মাতার নাম মলআমা বিনতে শায়চান। তার দাদার নাম ছিল হুদাহুদ। হুদাহুদ ইয়ামেনের প্রতাপশালী বাদশাহ ছিল। তার ছিল চার পুত্র তাদের প্রত্যেকেই বাদশাহ ছিল। বিলকিসের পিতা পরী বিবাহ করার বিভিন্ন কারণের মধ্যে একটি কারণ হল- তার পিতা রাজ্য লাভের পর অত্যন্ত অহংকারী হয়ে পড়েছিল। সে বলত তার সমকক্ষ বংশ মর্যাদা বা অন্যান্য দিক দিয়ে কেহ নেই। সুতরাং সে যে বংশেই বিবাহ করুক না কেন তার সমকক্ষতা রক্ষা হবে না। কাজেই এমন কোন নারী নেই যাকে সে বিবাহ করতে পারে। অবশেষে সে এক জ্বিন রমণীকে বিবাহ করে তার বিলকিস তারই গর্ভে জন্ম লাভ করে। তৎকালে সাবার অধিবাসীরা সূর্যের উপাসনা করত। ধর্মীয় দিকে থেকে তারা ছিল অগ্নিপূজক। চন্দ্র, সূর্য নক্ষত্র প্রভৃতির পূজায় লিপ্ত ছিল। হুদহুদ হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর সামনে

বিলকিসের সম্প্রদায়ের অ তার রাজকার্য পরিচালনার এক বিশদ বর্ণনা পেশ করল। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-

إِنِّي وَجَدتُّ امْرَأَةً تَمْلِكُهُمْ وَأُوتِيَتْ مِن كُلِّ شَيْءٍ وَلَهَا عَرْشٌ عَظِيمٌ

وَجَدتُّهَا وَقَوْمَهَا يَسْجُدُونَ لِلشَّمْسِ مِن دُونِ اللَّهِ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيلِ فَهُمْ لَا يَهْتَدُونَ

অর্থঃ আমি দেখে এসেছি যে এক নারী তাদের উপর রাজত্ব করছে। আর এ নারীকে রাজত্ব করার সর্ব প্রকার উপকরণ প্রদান করা হয়েছে। তার একটি বিরাটকায় সিংহাসন রয়েছে। আমি সে রমণীকে এবং তার সম্প্রদায়কে দেখেছি যে তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে সূর্যকে সিজদা করছে। ইবলীস তাদের এ কুফরী কাজকে তাদের সামনে সুশোভিত করে দেখিয়েছে। তাদেরকে মৃত্যু পথ হতে ফিরিয়ে রাখছে। এজন্য তারা সত্য পথে চলছে না। (সূরা নামলঃ আয়াত-২৩-২৪)

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।