হযরত সুফিয়ান সাওরী (রঃ)- পর্ব ৬
হযরত সুফিয়ান সাওরী (রঃ)- পর্ব ৫ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তাঁর মানে, আল্লাহ পাকের পবিত্র দরবারে উপস্থিত হওয়া মোটেই সহজ কাজ নয়। মৃত্যু আসন্ন জেনে প্রচণ্ড ভয়ে তিনি অস্থির হয়ে পড়েন। তাঁকে বলা হয়, তিনি তো জান্নাতী লোক। তাঁর এতদূর ভীত হওয়ার কারণ কি? তিনি মাথা নেড়ে বললেন, তোমরা কি মনে কর আমি জান্নাতের যোগ্য? জান্নাতী লোকের নিদর্শন অন্য রুপ।
তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন বসরা শহরে। শহরের শাসনকর্তা তাঁকে খুঁজে বের করার জন্য নির্দেশ দেন। খোঁজ নিয়ে দেখা গেল কঠিন উদরাময়ে ও পেটের যন্ত্রণায় তিনি অস্থির। কিন্তু তখনও আল্লাহর ধ্যানে বিভোর। ঐ রাতে অন্তত ষাটবার ওজু করলেন। আর সারারাত নামাজ পড়েলন। তাঁকে বলা হল, আপনি পীড়িত। এতবার ওযুর দরকার কি? তিনি জবাব দেন, তাঁর আশঙ্কা, তিনি হয়ত অপবিত্র অবস্থায় আল্লাহর সমীপে নীত হবেন।
অন্তিম মুহূর্ত আসন্ন। তাঁর নির্দেশে হযরত আবদুল্লাহ মাহেদী তাঁকে মাটির উপর রেখে দিলেন। তারপর বাইরে গেলেন তাঁর শেষ বিদায়ের কথা সবাইকে বলতে। বাইরে গিয়ে আবদুল্লাহ মাহেদী অবাক। অসংখ্য মানুষ এসে ভিড় করেছে সেখানে। তিই তাঁদের ভিড়ে জমাবার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। জনতার পক্ষ থেকে বলা হল, গত রাতে তাঁরা স্বপ্ন দেখেছে, আমার প্রিয় বান্দা হযরত সুফিয়ান (রঃ) দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। আর আসন্ন কাফন- দাফনে তাঁদের আজই যোগ দিতে বলা হয়েছে। আর এ খবর শুনে তাঁরা এখানে ছুটে এসেছে।
অতঃপর লোকজন যখন ভেতরে তাঁর অন্তিম শয্যার পাশে এসে দাড়াল তখন তিনি তাঁর মাথার পার্শ্বস্থিত বালিশের তলা থাকে এক হাজার টাকার একটি থলে বের করে দিয়ে সেগুলো গরীব-দুঃখীদের দান করতে বললেন, অনেকের মনে এ প্রশ্ন এল, তিনি নিজে সঞ্চায়ের বিরুদ্ধে বলতেন অথচ নিজে এতগুলো টাকা জমা করেছেন।
হযরত হযরত সুফিয়ান (রঃ) মানুষের মনে প্রশ্ন অনুধাবন করে বললেন, ঈমান রক্ষার প্রয়োজনে আমি এগুলো জমা করে রেখেছিলাম। যখন ইবলীস আমাকে জিজ্ঞেস করত, তোমার ভরণ-পোষন কোথা থেকে আসবে। আবার যখন সে বলত, তোমার কাফন জুটবে কোথা থেকে? তখনও তাঁকে এই টাকার কথা বলতাম। সে আমার কাছে পাত্তা পেত না। আসলে, আমার নিজের কোন প্রয়োজনে নয়,
শয়তানের প্রতারণা থেকে বাঁচবার জন্যই এটা জমা করে রেখেছিলাম। শেষ কথাগুলো শেষবারের মতো উচ্চারণ করে তিনি ধরাধাম ত্যাগ করলেন। ইন্না লিল্লাহি ও ইন্না ইলাহি রাজেউন।
বোখারায় একজন আল্লাহর বন্ধু ছিলেন। তাঁর কোন উত্তরাধিকারী ছিল না। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর কিছু নগদ টাকা হযরত সুফিয়ান (রঃ) এর হেফাজতে গচ্ছিত রাখার সিন্ধান্ত নেওয়া হয় হযরত সুফিয়ান (রঃ) এর ময়স মাত্র আঠারো। বোখারার কাজীর মাধ্যমে টাকা গচ্ছিত রাখার সংবাদ পেয়ে তিনি সেখানে যান। বোখারায় বিদ্বৎ সমাজ তাঁকে বিপুলভাবে সংবর্ধনা জানান। তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হল আল্লাহর ওলীর রেখে যাওয়া অর্থ-সম্পদ। সে সম্পদ মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর কাছে গচ্ছিত ছিল, শেষ মুহুর্ত ঘনিয়ে এলে দীন-দরিদ্রদের মধ্যে বন্টন করা হয়। কথিত আছ, তাঁর মৃত্যুর দিন সবাই আদৃশ্য শব্দ শুনতে পান। মাতাল ওয়ারা – মাতাল ওয়ারা’ পরহেজগার বক্তির মৃত্যু হয়েছে। পরহেজগার ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া