হযরত শেখ ফরীদউদ্দীন আক্তার (রঃ) – পর্ব ২

হযরত শেখ ফরীদউদ্দীন আক্তার (রঃ) – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

কিছুদূর যাওয়ার পর অন্য একটি লোক তাঁকে বন্দী অবস্থায় দেখে তাতারীকে বলল, তুমি হযরত কে হত্যা না করে আমাকে দিয়ে দাও। আমি তোমাকে এক বোঝা খড় দিচ্ছি। এবার ফরীদউদ্দিন বললেন, হ্যাঁ, তাই দাও। আমার দাম এর চেয়ে কম। তাতারী বুঝল, তামাসা করা হচ্ছে। রাগে উত্তেজনায় ক্ষিপ্ত হয়ে সে তখনই তাঁকে এক কোপে দ্বিখণ্ডিত করে ফেলল। এভাবে দস্যুরা মানুষের ইতিহাসে চির কলঙ্কিত হয়ে থাকল। অপর দিকে, যুগ যুগান্তের জন্য আলোকময় উজ্জ্বল পুরুষ হিসেবে মানুষের হৃদয়ে ও ইতিহাসের পাতায় বেঁচে রইলেন হযরত ফরীদউদ্দিন আত্তার (রঃ)। আতরের সে সুরভি তা থেকে কোনদিন উবে গেল না।

বিখ্যাত মসনবী শরীফে বিশ্বনন্দিত মরমী কবি আল্লামা হযরত জালালুদ্দীন রুমী (রঃ) শেখ আত্তারের প্রতি অফুরন্ত শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেছেন। এমনকি, তার একটি কবিতাও সংকলিত করেন মসনবী শরীফ গ্রন্থে।

হযরত ফরীদউদ্দিন আত্তার (রঃ) সম্পর্কে হযরত জালালুদ্দীন রুমী (রঃ) বলেন, দেড়শো বছর পর আল্লাহ্‌ পাক তার ওপর আপন জ্যোতি অবতীর্ণ করেন। মশহুর পারসিক কবি আল্লামা জামী বলেন, শেখ ফরীদউদ্দীনের বাক্যে অহাদানিয়াতের যে মাহাত্ন্য ও মারেফাতের গুঢ় রহস্যের সন্ধান পাওয়া যায়, তা অন্য কোন সুফী কবির কবিতায় মেলে না। কেউ কেউ বলেন, তার রচিত পদ্য ও গদ্য গ্রন্থের সংখ্যা একশো চৌদ্দ- কুরআন শরীফের সূরার সমসংখ্যক।

এ বিষয়ে গাজী নুরুল্লাহ শোসতরী (রঃ)-ও তাঁর রচিত গ্রন্থ মাজালেসুল মুমিনীনে অনুরূপ মত পোষণ করেন। তাঁর রচিত তাযকিরাতুল আউলিয়া, মানতিকততায়ির, মুসবিতনামা, আসরারনামা, তাইসিরনামা, ইলাহীনামা, পেন্দেনামা, অসিয়ত, দীউয়ান, শারহুল কলব, খুশরুগোল খুবই উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। এইসব গ্রন্থ সারা বিশ্বে বিপুলভাবে আজও সমাদৃত হয়। এগুলির জনপ্রিয়তা কল্পনাতীত। বহু গ্রন্থকার বই কাটতির জন্য নিজের নামের বদলে শেখ ফরীদউদ্দীন (রঃ)-এর নাম ব্যবহার করেছেন, এও এক অভিনব ঘটনা বৈকি। নকল নামের গ্রন্থের মধ্যে একখানি হল লিসানুর হাকীকত- যা এখনও লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সু-রক্ষিত আছে।

‘তাযকিরাতুল আউলিয়া’ গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি যা লিখেছেন, তাতে তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও ব্যক্তিসত্তার স্বরূপ উপলব্ধি করা যায় অনায়াসে। নম্রতা ও বিনয়ের সে এক উজ্জ্বল প্রতিবিম্ব ছিলেন তিনি। নিজেকে অত্যন্ত দীন, হীন ও নিকৃষ্ট বলে মনে করতেন তিনি। আর বিনম্রবোধের কারণেই তত্ত্ব-জ্ঞানী ও আল্লাহ-প্রেমী হিসেবে মানুষের মনে তিনি চিরজাগরুক হয়ে রয়েছেন এবং থাকবেন।

তাঁর রচিত গ্রন্থের বিষয়বস্তু ও রচনাশৈলীও অভিনব। সর্বপ্রথমে উচ্চারিত হয়েছে মহান আল্লাহ্‌ ও তাঁর প্রিয় রাসূলের প্রশংসা ও প্রশান্তি। পরের বিষয়ে এসেছে খোলাফায়ে রাশেদীনের খ্যাতি- সুখ্যাতি। তারপর শুরু হয়েছে আসল বক্তব্য। কিন্তু ভঙ্গি সম্পূর্ণ আলাদা। কাহিনীর নায়কেরা উপস্থাপিত হয়েছে পাখি রূপে। যেমন, হুদহুদ, তোতা, মোরগ, পায়রা, শানা, বুলবুল, বাজ ইত্যাদি।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া  

হযরত শেখ ফরীদউদ্দীন আক্তার (রঃ) -শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।