হযরত শায়খ আবু আলী মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব সাকাফী (রঃ)
নিশাপুরের মাশায়েখদের ইমাম ও প্রিয় মানুষ হলেন হযরত শায়খ আবু আলী মুহাম্মদ (রঃ)। গুপ্ত ও প্রকাশ্য উভয় বিদ্যায় বিদ্ব্যান এই তাপস ফেকাহ ও হাদিসশাস্ত্রেও সুপণ্ডিত ছিলেন। মারেফাত তত্ত্বে আত্মনিয়োগের পর তিনি অবশ্য প্রকাশ্য বিদ্যাচর্চা থেকে সরে যান। তিনি হযরত আবু হাফস (রঃ) ও হযরত হামদুন (রঃ)-এ সান্নিধ্য লাভ করেন। ৩২৮ হিজরীতে এই শীর্ষস্থানীয় আলেম দরবেশ পরলোক গমন করেন।
হযরত আবু আলী মুহাম্মদ (রঃ)-এর এক প্রতিবেশীর পায়রা উড়ানোর বড় শখ ছিল। একদিন পায়রার দিকে কাঁকর নিক্ষেপ করে সে পায়রার খেলা দেখাতে লাগল। আর একটি কাঁকর এসে পড়ল হযরত আবু আলী মুহাম্মদ (রঃ)-এর কপালে। অমনি ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটল। তাঁর শিষ্যরা লোকটির ধরে হাকীমের দরবারে নিয়ে যাবার যোগাড় করতেই তিনি তাদের থামালেণ এবং গাছ থেকে একটি লম্বা চিকন ডাল কেটে আনতে বললেন। সেটি আনা হলে তিনি তাদের পাঠিয়ে দিলেন প্রতিবেশীর কাছে। বলতে বললেন, এরপর সে যেন এই ডালটি দিয়ে পায়রা উড়ায়। ভবিষ্যতে আর কাঁকর নিক্ষেপ না করে।
একবার হযরত আবু আলী মুহাম্মদ (রঃ) দেখলেন, তিন জন পুরুষ ও এক মহিলা একটি লাশ বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি আর স্থির থাকতে পারলেন না। নিজে মৃতের খাট কাঁধে নিয়ে স্ত্রীলোকটিকে ছেড়ে দিলেন। দাফনের পর তিনি লাশ বহনকারীদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি আর পুরুষ পাওনি যে, স্ত্রীলোকটির সাহায্য নিয়েছিলেন। তারা বলল, ঐ মৃত লোকটি ছিল নপুংসক। সবাই তাকে ঘৃণা করত। তাই তার লাশ বহনে অন্য পুরুষ এগিয়ে আসেনি। বাধ্য আমরা মহিলাকে নিয়েছি। তাদের কথা শুনে হযরত আবু আলী মুহাম্মদ (রঃ) তাদের সহানুভূতিসম্পন্ন হলেন। তাদের কিছু গম ও টাকা উপহার দিলেন।
ঐ রাতে তিনি স্বপ্ন দেখলেন, দামী পোশাক পরিহিত এক সুদর্শন তরুণ মৃদু হেসে তাঁকে বলছেন, আপনি যাকে বয়ে নিয়ে গিয়ে জানাজা দিয়ে দাফন করেছিলেন, আমিই সেই নপুংসক। আল্লাহ আমাকে মাফ করেছেন। এবং আমার ওপর যথেষ্ট অনুগ্রহ ও করুণা করেছেন।
১. হযরত আবু আলী মুহাম্মদ (রঃ) বলতেন, নানা রকম শিক্ষা রপ্ত করে কেউ যদি বিভিন্ন পণ্ডিত ও সাধক-দরবেশের সঙ্গে কাল কাটায়, তবুও যে পর্যন্ত না সে সিদ্ধ পুরুষের নির্দেশমাফিক এবাদতের মাধ্যমে আত্মশাসন করে, সে পর্যন্ত সে আমল লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না।
২. সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকে নিজের কাজকর্মকে যে সুন্দর করতে চায় এবং সময় রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নাতের ওপর বহাল থাকতে চায়, তবে সে যেন নির্মলতা ও সততা অবলম্বন করে। যে ব্যক্তি সততা ও সত্যনিষ্ঠ কাকে বলা জানে না, তার কাছ থেকে সততা ও সত্যনিষ্ঠার আশা করা, আর যে ব্যক্তি আদব কী বস্তু জানে না, তার কাছ থেকে আদব আশা করা অবান্তর। যে
মুরীদ পীরের দরবারে থেকেও পীরের আদব কি জানে না, পীরের বরকত থেকে সে বঞ্চিত থাকে।
৩. খাঁটি হতে হলে চারটি বস্তুর বিশেষ প্রয়োজন। তা হলঃ (ক) সত্য কথা, (খ) সত্য কাজ, (গ) খাঁটির বন্ধুত্ব ও (ঘ) খাঁটি আমানতদার হওয়া।
৪. ভেতরের কাজ যদি সংশোধিত হয়, তাহলে বাইরের কাজগুলি অবশ্যই সংশোধিত ও পরিমার্জিত হবে।
৫. যে জিনিস পরিমাণে দুঃখ, মনের কষ্ট ও অন্যান্য বিপদ আনে, তার প্রতি ফিরে তাকানো জ্ঞানীর কাজ নয়।
৬. শিক্ষা অন্তরের জীবন সদৃশ। কেননা, সেটি অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে দূরে রাখে। শিক্ষা চোখের আলোস্বরূপ। এ জন্য বিদ্যার মাধ্যমে ব্যক্তিগণ কপট ব্যক্তিদের সান্নিধ্য লাভ আনন্দজনক মনে করবে।