হযরত শাহজালাল (রঃ ) – পর্ব ৭
হযরত শাহজালাল (রঃ ) – পর্ব ৬ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ইসলাম আবার দুনিয়ার বুকে পূর্ণ জাগরুক হোক এটাই তো প্রতিপালকের পরম ইচ্ছা। সে ইচ্ছা পূরণের জন্যই আল্লাহ তোমাকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান দান করেছেন। আর বিলম্ব করার সময় নেই। ধর্ম প্রাচারের জন্য উদ্বুদ্ধ হয়ে দায়িত্ব পালনে তৎপর হও। যে স্থান থেকে ইসলাম বিলীনের পথে। মানুষ নানা অনাচার কুআচারে লিপ্ত সেখানে দায়িত্ব পালন কর। এবারে তাঁর নিদ্রা ভাঙ্গল মনে পড়ল স্বপ্নে পাওয়া প্রত্যাদেশের কথা। সাথে সাথে ব্যস্ত হলেন। কারণ যে বিষয়টা নিয়ে তিনি চিন্তা ভাবনা করতে ছিলেন সে সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। তাই তো তিনি আনন্দিত হয়ে পরে দিন ভোরে শিক্ষা গুরুর নিকট জানালেন।
কিন্তু তিনি বুঝতে পারলেন না কোথায় সে জায়গাটি। কিন্তু মনোবল হারালেন না বরং আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়লেন ভাবলেন তাহলে সেই মহান দায়িত্ব পালনের জন্য কি আমাকে পাঠিয়েছেন? এই প্রত্যাদেশও কি একই উদ্দেশ্যে দিয়েছেন। আবার ভাবতে লাগলেন আল্লাহর এ প্রত্যাদেশও কি উপেক্ষা করা যায়। কখনই না। আমাকে এ পুণ্য দায়িত্ব পালন করতেই হবে। কিন্তু শত চিন্তা ভাবনার পরেও নির্দিষ্ট স্থানটি নির্বাচন করতে পারলেন না। এদিকে তাঁর গুরু সৈয়দ আহম্মদ কবির তাঁর প্রিয় ভাগীনার স্বপ্ন শুনে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। বললেন এ মহান দায়িত্ব তোমাকেই পালন করতে হবে। আমিও তোমাকে অনুমতি দিলাম। যাও তুমি গিয়ে তোমার দায়িত্ব পালন কর। এবারে হযরত শাহাজালাল (রঃ) তাঁর মামার অনুমতি পেয়ে দেশ ত্যাগর জন্য প্রস্তুত হলেন। পরের দিন ভোরে তাঁর মামা সৈয়দ কবির এক মুষ্টি মাটি ভাগিনার হাতে দিয়ে বললেন, যাও বাবা এখান থেকে পূর্ব দিকে চলে যাও। এবং যাত্রা পথে সেখানে রাত্রি যাপন করবে সেখানের মাটি পরিক্ষা করে দেখবে। এই মাটির সাথে যে স্থানে মাটির মিল হবে সেখানে তুমি তোমার আস্তনা তৈরি করে বসবাস শুরু কর। এবং সেখানেই তোমাকে আল্লাহর কর্তব্য পালনে ব্যপ্ত হবে। দেশ ত্যাগের পূর্বে মামার এ আদেশ পেয়ে স্থান নির্বাচনের ব্যাপারে যে চিন্তা তাঁর মনে দোলা দিতে ছিল সে চিন্তাও বিদূরীত হল। এবার তিনি ১২জন শিষ্য সহচর নিয়ে ভারত বর্ষের দিকে রওয়ানা হলেন। অজানা অচেনা পথ ধরে চলতে লাগলেন। কিন্তু কোনরূপ বাঁধা বিঘ্নের কথা অন্তরে স্থান দিলেন না। আল্লাহর দেওয়া প্রত্যাদেশ পালনের জন্যই মানব সেবায় নিজেকে বীলীন করার উদ্দেশ্য নতুন পথ ধরে চলতে লাগলেন।
একথা সুউজ্জ্বল যে আলেম কুলের শিরোমণি হযরত শাহাজালাল (রঃ) বেশি দিন ইয়েমেন থাকলেন না। ইয়েমেন থেকে তিনি পূর্ব বঙ্গ রওয়ানা হলেন। পথিমধ্যে তিনি দিল্লীতেও কিছু সময় অবস্থান করেছিলেন। তখন দিল্লীর বাদশাহ ছিলেন। আল্লাউদ্দিন খলজী। দিল্লীতে তৎকালে একজন প্রখ্যাত আওলিয়া বাস করতেন। তাঁর নাম ছিল হযরত নিজামদ্দিন আওলিয়া। তাঁর সুনামও সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল। হযরত শাহাজালাল (রঃ) দিল্লীতে এসে তাঁর নাম শুনে তাঁর সাথে সাক্ষাত করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। যেই ইচ্ছা সেই কাজ। হযরত শাহাজালাল (রঃ) নিজামউদ্দিন আওলিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করলেন। তিনি হযরত শাহাজালাল (রঃ) সাধ্যানুযায়ী মেহমানদারী করলেন এবং ওখানে রাত্রি যাপনের জন্য অনুরোধ করলেন। হযরত শাহাজালাল (রঃ) ওখানেই রাত্র কাটালেন। রাত্রে হযরত নিজামউদ্দিন আওলিয়া হযরত শাহাজালাল (রঃ) কে ওলিত্বের ব্যাপারে পরীক্ষা করতে চাইলেন। নিজামউদ্দিন আওলিয়া একটি কৌটায় কিছু আগুন ও তুলা ভরে কৌটার মুখ বন্ধ করে তাঁর কাছে পাঠালেন। আধ্যাত্মিক জ্ঞানের মহা সাধক হযরত হযরত শাহাজালাল নিজামউদ্দিন আওলিয়ার মনোভাব বুঝতে পারে বিসমিল্লাহ বলে কৌটার মুখ খুললেন। দেখা গেল তুলাকে আগুন স্পর্শ করেনি।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া