হযরত শাহজালাল (রঃ ) – পর্ব ৬
হযরত শাহজালাল (রঃ ) – পর্ব ৫ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মামা ভাগীনার মুখে একথা শুনে অতি আশ্চর্য হয়ে গেলেন। ভাবলেন আমি ধারণা করেছি সেটাই করেছে? আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন। তার আর বুঝার বাকী রইল না যে, এ ছেলে পূর্ণ আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভ করেছে। তাঁর মামার শত কষ্টের প্রতিফলন ঘটল সেখানে। তাঁর অন্তরে বিন্দু মাত্র কষ্ট রইল না। আনন্দে ভরে উঠল তার অন্তর। ভাগীনাকে সজোরে জড়িয়ে ধরে বললেন, বৎস তুমি ধন্য আমার জীবনে সকল আশা আকাঙ্ক্ষা তুমিই পূর্ণ করতে সক্ষম হয়েছ। শুধু তাই নয় তুমিতো সফলতার শীর্ষ চূড়ায় আরোহণ করেছ। তুমি পূর্ণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়েছ। উত্তীর্ণ হয়েছ আমার সকল পরীক্ষায়। এবার তুমি কর্ম ব্যস্তে ঝাপিয়ে পড়। শাহজালালের শ্রদ্ধেয় মামা তথা শিক্ষা গুরু ধর্ম গুরু ছিলেন গভীর জ্ঞানের অধিকারী সেহেতু তিনি ভাবতে পারলেন যে অধিক জ্ঞানীদের এক স্থানে জড়ো হওয়া ঠিক নয়। তাই তার আদুরে ভাগীনাকে আদরের গন্ডির ভিতরে না রেখে বললেন, বাবা তুমি অন্যত্র চলে যাও। গিয়ে ইসলাম প্রচার শুরু কর। এখানে আর আবদ্ধ হয়ে থাকার দরকার নেই। শত শত পথ ভোলা পথিককে সৎ পথে আনতে পারলেই তুমি হবে ধন্য। ইহ জগতে লাভ করতে পারবে আল্লাহর অশেষ করুণা। পর জগতেও লাভ করতে পার জান্নাতে অগণিত সুখ শান্তি।
প্রত্যাদেশ লাভ ও দেশ ত্যাগঃ প্রকাশ থাকে যে সৈয়দ কবির আহম্মদ তার স্নেহের ভাগীনাকে যে সকল পরীক্ষা করেছেন হযরত শাহজালাল (রঃ) তাঁর মামার প্রত্যেকটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এতে তার কোন বেগ পেতে হয়নি। এবার তাঁর শিক্ষাগুরু তাঁকে যে দেশ ত্যাগের ইঙ্গিত দিয়েছেন তখন থেকেই তাঁর মনে কি যেন নব আধ্যায়ের সূচনা তিনি দেখতে লাগলেন। কি যেন অদম্য আকাঙ্ক্ষায় অস্থির হয়ে উঠলেন।
তিনি বুঝতে পারলেন তাঁর জীবনেও রয়েছে অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য। আল্লাহর প্রেমে যখন তিনি অধীর হয়েছেন, তখন আল্লাহ তা’য়ালাও তাঁকে এমন জ্ঞান দান করলেন যাতে সকল বিষয় বুঝতে পারেন। সেহেতু তিনি একথাও বুঝতে পারলেন যে আমার উপর যে সব দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে এগুলো শুধু আমার ব্যক্তিগত মঙ্গলের জন্য নয়। আল্লাহর সৃষ্ট জীব আশরাফুল মাকলুকাতের মঙ্গলের জন্য আমাকে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হবে।
কিন্তু সেই দায়িত্ব কর্তব্যটা যে কি, সেটা তিনি বুঝতে পারতেছেন না। শুধু রাত দিন ভাবতেছেন কি সেই দায়িত্ব? এখন তিনি গুরুর সেবায় নিজেকে বিলীন করে দিতে লাগলেন। শুধু তাই নয় আল্লাহর ইবাদতেও মশগুল থাকতেন। এক দিন গভীর রাত্রে আল্লাহর আরাধনা করতে করতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন। এমন সময় তিনি স্বপ্নে দেখলেন কে যেন তাঁকে ডেকে বলছে, “হে শাহজালাল! তুমি যে কঠোর সাধনা ও তপস্যার দ্বারা আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও সংযমতা অর্জন করেছ, এসব তোমার নিজের জন্য নয়। এবার তুমি মানব জাতির কল্যাণের জন্য নিজেকে নিয়োগ কর। পাপাচার ধর্মান্ধ মানুষকে আহবান করে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় দান কর। ইসলাম প্রায় অর্ধ বিলীনের পথে, তাই সকল মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে ইসলামের পতাকা পূর্ণ উত্তোলন কর। বিপথগামী মানুষকে আশ্রয় দিয়ে মুক্তির দিশা দাও। আর বসার সময় নয়। ইসলাম জগতের মহান আদর্শকে আবার পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত করে তাঁর দীপ্ত রশ্মিকে কু’আচারে নিমগ্ন পাপী তাপীকে কলুষিত আত্মার থেকে আলোকিত করে তোল।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া