হযরত শাহজালাল (রঃ ) – পর্ব ১৯

হযরত শাহজালাল (রঃ ) – পর্ব ১৮ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

সেহেতু এক সময় হিন্দু মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, ধনী, দরিদ্র, অসহায় দুস্থদের আহবান করলেন তাদের থেকে বিদায় নেবার জন্য এবার তিনি তার সুললিত কন্ঠে জনতার উদ্দেশ্যে বিদায়ী ভাষণ শুরু করলেন। তার ভাষণের প্রতিটি কথাই শ্রোতারা অনুধাবন করতে পারলেন বুঝতে পারলেন হুজুর আর বেশী দিন আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন না। তিনি কোন সম্প্রদায়ীকতায় বিশ্বাসী ছিলেন না। কোন দল গোষ্ঠীর মধ্যে তার ওলিত্ব সীমাবদ্ধ ছিল না। তাইতো উপস্থিত সকল ধর্মের সকল স্তরের মানুষ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। মনে হল দুনিয়ায় নেমে এসেছে এক শোকের অন্ধকার। শুধু মানব জাতির নয় পশু পাখি, গাছপালা, তারুলতা সকলেই যেন দুঃখের সাগরে ভেসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। সকলেই অনুভব করল তাদের প্রিয়জন দুনিয়ায় বেশী দিন থাকবে না। সারা ময়দানে দুঃখের প্লাবন বয়ে গেল। ওলোট-পালট হয়ে গেল সকলের অন্তর। জীর্ণ-শীর্ণ হয়ে গেল সকলের শরীর। সকলেই ধুকে ধুকে প্রার্থনা করতে লাগল হে প্রভু! এই রহমত আমাদের মাঝে আরো কিছু দিন বিদ্যমান রাখুন। আল্লাহর লীলাকে বুঝতে পারে। আল্লাহও তার প্রিয় বান্দাকে তাঁর সান্নিধ্যে নেয়ার জন্য সঠিক সময়টি স্থির করে ফেললেন।

সে যাই হোক এক সময় বিদায়ী সভা ভেঙ্গে গেল আস্তে আস্তে অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবারে তিনি স্বীয় হুজরায় ঢুকে ধ্যানে নিমগ্ন হলেন। অনেকে তার হুজরায় ঢুকতে চাইলে হুজুর তাদেরকে নিষেধ করলেন কেউই তার কাছে গেলেন না। লোকেরা দেখতে লাগল হুজুর হাত তুলে কি যেন বলছেন তার চক্ষু থেকে পানি বয়ে বক্ষদেশ ভিজে জমিনে পড়ছে। তিনি এমন মহাপুরুষ ছিলেন

যে মৃতুর সময়ও নিজের ব্যক্তিগত কোন স্বার্থের জন্য কাঁদেননি। এ বলেই তিনি ফরিয়াদ করেছেন হে প্রভু! আমি আমার দায়িত্ব পূর্ণভাবে পালন করতে পারছি কিনা এ ব্যাপারে নিজেই আমি সন্দিহান। তাইতো হে প্রভু তুমি আমাকে সকল অপরাধ ক্ষমা করে পরকালেও যেন তোমার প্রেম লাভ করতে পারি সেই তাওফিক দান কর।

এবারে তার শরীরের করুণ অবস্থা দেখে সবাই তার নিকটবর্তী হলেন। এভাবে বায়ুর গতিতে মহামতি আজরাইল হযরত শাহজালাল (রঃ)-এর কাছে আগমন করলেন। হযরত আবার বিষন্ন বদনে সকলকে দূরে যেতে বললেন। আবার সবাই একটু দূরে সরে গেল। কিছুক্ষণ পর সকলে শুনতে পেল হযরত শাহজালাল সুললিত কন্ঠে কালেমা তাইয়্যেবা ও কালেমা শাহাদাৎ পাঠ করছেন। সকলে এ দুঃখময় ব্যাপারটা বুঝতে পারল কিন্তু কেউই তার হুজরায় ঢুকল না। সকলে সেখানে দাঁড়িয়ে রইল। অনেক সময় ধরে কোন টু শব্দটুকু নেই। এবার একজন ঢুকে দেখল হুজুর আর দুনিয়ায় নেই। দুধপায়ী সন্তানের ন্যায় তিনি চির নিদ্রায় শায়িত হলেন। কেঁদে সকলে জারে জার হয়ে গেল। সারা বিশ্ব দুঃখের নিঃশ্বাস ফেলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। পশু পাখী গাছপালা ঝিমুতে লাগল।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত শাহজালাল (রঃ ) – শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।