হযরত শাহজালাল (রঃ ) – পর্ব ১৬
হযরত শাহজালাল (রঃ ) – পর্ব ১৫ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
চির কুমার শাহজালালঃ
যে সকল মহা মানব ধরার বুকে থেকে আল্লাহর প্রেম লাভে সক্ষম হয়েছেন তাদের মধ্যে হযরত শাহজালাল (রঃ) ছিলেন অন্যতম। আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী বান্দারা কোন দিন এই নশ্বর জগতে সংসার পাতাবার ইচ্ছা করেননি। হযরত শাহজালাল (রঃ)-এর জীবন ও ইহার বিন্দুমাত্র ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবুও রক্তে মাংসে গড়া মানুষের সঙ্গিনী নিয়ে জীবন চালাতে কার না ইচ্ছে হয়? হয়ত বা ইচ্ছা জেগেছিল। কিন্তু শুধু আল্লাহর প্রেমে মুগ্ধ হয়েই তিনি জীবনের এ দিকটার প্রতি ছিলেন সম্পূর্ণ উদাসীন।
অনেক সময় খুব সুন্দরী ও ধন্যাঢ্য ব্যক্তিদের প্রস্তাব আসত। কিন্তু কোন ক্রমেই তা তিনি গ্রহণ করেনি। কোন কোন সময় তার শিষ্যরা তার কাছে বিয়ে না করার কারণ জিজ্ঞেস করত। তার উত্তরে তিনি একথাই বলতেন যে মহান আল্লাহ যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন তার দায়িত্বই ঠিক ভাবে আদায় করতে পারিনি। সেহেতু আবার একটি বিয়ে করে সংসারের ঝামেলা মাথায় নেয়া উচিত মনে করি না। আবার তিনি শিষ্য সাগরেদরকে বলতেন তোমরা তো আমার বিয়ের জন্য বল, আসলে যা শরীর আছে, মাংস রক্ত আছে তার বিয়ের ও প্রয়োজন আছে। কিন্তু আমার সে শরীরই নেই এই যে দেহখানা দেখ এটাতো সম্পূর্ণ আল্লাতেই বিলীন করে দিয়েছি। অতএব, আমার বিয়ের প্রয়োজন হয় না। আর একবার হযরতের কাছে বিয়ের প্রস্তাব আসলে উহার উত্তরে তিনি বললেন, দুনিয়ার সকল অশান্তির মূল কারণ হচ্ছে নারীরা তাই আমি সেই অশান্তির অতল গহ্বরে ডুবতে চাই না। চাই শুধু আল্লাহর প্রেম ও নৈকট্য। কোন মানুষের কাছে সঙ্গিহীন জীবন যাপন করা খুবই কষ্টকর তাই বলে হযরত শাহজালালের বেলায় সেটা ঘটেনি। কারণ তিনি সদা সর্বদা আল্লাহকেই প্রকৃত সঙ্গী রূপে গ্রহণ করেছিলেন। যেহেতু বলা যায় বাহ্যিক দৃষ্টিতে সঙ্গিহীন দেখলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি সঙ্গিহীন ছিলেন না।
তবে তিনি বিবাহ করেননি বলে সমাজে মোজাররাদ নামেও পরিচিত ছিলেন। ইহার অর্থ হল চিরকুমার তিনি দুনিয়ার লোভ-লালসা, ধন-সম্পদ, আরাম-আয়েশের প্রতি কখনোই মত্ত হননি। তার জীবনের প্রধান কাজই ছিল জাহেলিয়াতের মধ্যে নিবদ্ধ জনগণের মধ্যে সুন্দর ও সত্য ধর্ম প্রতিষ্ঠিত করা। যারা অসৎ পথে চলে গেছে সৃষ্টিকর্তার কথা ভুলে গেছে তাদেরকে সৎপথে আনা।
আল্লাহর দেয়া এই মহান দায়িত্ব পালনের জন্যই তিনি মায়ামমতায় বিজড়িত মাতৃভূমিও ত্যাগ করেছেন এবং তার প্রচারের সঠিক জায়গায়টা বেছে নেয়ার জন্য এশিয়া বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন। পরিশেষে শ্রীহট্টেই হলো তার প্রকৃত ধর্ম প্রচারের স্থান। কোন এক সময় শীতের মৌসুমে হযরত শাহজালাল (রঃ) শীতে আক্রান্ত হয়ে বারংবার মুসলিম শাসক সিকান্দার গাজীকে জানালেন আমার জন্য শীতের একটা ব্যবস্থা করুণ। এর জবাবে তিনি বললেন শাহজালাল শীতের দিনে শরীর গরমের জন্য একজন সুন্দরী নারী চান। রাজার যেই কথা উজিরদের সেই কাজ। সিকান্দার গাজীর হুকুমে একজন সুন্দরী নারীকে পালকীতে করে হযরত এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন।
সংসার ত্যাগী হযরত শাহজালাল (রঃ) বললেন হে সংসারসক্ত সিকান্দার গাজী! তুমি নিজেও এ নশ্বর জগতের মায়ায় অতল গহ্বরে ডুবেছ আর আমাকে ডুবাতে চাও। সিকান্দার গাজীর কারুকার্যে শাহজালাল বিস্মিত হয়ে বললেন, তুমি আমাকে এই নশ্বর জগতের মায়ায় ডুবাতে চাও এর চেয়ে তুমি একাই মর। আল্লাহর ওলির মুখে কথা কি আর বিফল যায়? এদিকে সিকান্দার গাজী পরমা সুন্দরীকে হুজুরের কাছে পাঠিয়ে নদীর ঘাটে বড়ছি নিয়ে মাছ ধরতে গেলেন। এদিকে হযরত যখন তাকে একাকী ডুবে মরার জন্য বললেন, সাথে সাথে সিকান্দার গাজী হোঁচট খেয়ে নদীতে পড়ে গেলেন। এটা আল্লাহর ওলির অলৌকিক ক্ষমতা ছাড়া কিছুই নয়।
মহাসাধক হযরত শাহজালাল (রঃ) নারী সংসর্গকে পছন্দ করলেও তিনি নারীত্বের অবমাননা হতে দিলেন না। সেই যাই হোক তিনি তার একনিষ্ঠ শিষ্য হাজি ইউসুফকে বললেন, হে ইউসুফ! তুমি এই সুন্দরীকে বিয়ে করে নাও। হাজী ইউসুফও ছিলেন সংসার ত্যাগী তাই তিনি কমল কন্ঠে বললেন, ওহে হযরত! আমার নিজের ভরণ পোষাণের জন্য আল্লাহর উপর নির্ভরশীল তার একে বিয়ে করে আবার কোন ঝামেলায় পড়ব? সে যাই হোক গুরুর কথা তিনি অমান্য না কর সেই পরমা সুন্দরীকে বিয়ে করলেন। বর্তমানে সেই শ্রীহট্টে শাহজালালের দরবারে যার পরিচালনা করেছেন তারা সেই হাজী ইউসুফেরই বংশধর। পরিশেষে একথা বলা যায় যে হযরত শাহজালাল চিরকুমার থেকেই আল্লাহর প্রেম লাভ করে জীবনকে ধন্য করেছেন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া