হযরত শাহজালাল (রঃ ) – পর্ব ১০
হযরত শাহজালাল (রঃ ) – পর্ব ৯ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বুরহান উদ্দির ফরিয়াদঃ
রাজা গৌর গোবিন্দের শাসনামলে শ্রীহট্টের এক পাদদেশে পুন্যাত্মার অধিকারী শেখ বুরহান উদ্দিন নামে একজন লোক ছিলেন। তিনি আল্লাহর উপর বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর ঈমানও ছিল অটল। তিনি যখন যুবক বয়সে উপনীত হলেন তখন অনেক জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসল। কিন্তু বুরহান উদ্দিন যেমন পাকা ঈমানদার ছিলেন তাঁর বুদ্ধি বিবেচনাও ছিল অনুরূপ। অন্য কোন ব্যক্তির ঈমান সম্পর্কে না জানলেও কতগুলো নিদর্শন তাঁর জানা ছিল তাই সে সেই নিদর্শন খুজে তাঁর মত একটি পূর্ণবান মেয়েকে স্ত্রীরূপে বরণ করলেন। বেশ সুখে- শান্তিতেই কয়েকটি বছর কেটে গেল। বুরহান উদ্দিন ইমানে যেমন ছিলেন পরিপূর্ণ ধনে-জনে-মানেও তেমনি ছিলেন পরিপূর্ণ। সেহেতু স্ত্রীকে নিয়ে মহা শান্তিতেই দাম্পত্য জীবন যাপন করতে লাগলেন। কিন্তু বুরহান উদ্দিনের যখন যুবক জীবন কেটে প্রৌঢ় অবস্থায় পৌছালেন তখনও কোন সন্তানের মুখ দেখার সৌভাগ্য হল না। এতদিন বেশ সুখেই কাটল।
যখন সন্তানের চিন্তা মাথায় ঢুকল তখন কে যেন তাদের সুখের ঘরে দুঃখের আগুন জ্বালালো। এখন আর মনে শান্তি নেই। নানা জনে নানা কথা বলতে লাগল। অনেকেই বন্ধ্যা বলে আখ্যা দিল। এছাড়া অনেক কটুক্তির দ্বারা তাদের মন মগজ খারাপ করে তুলল। তিনিও চিন্তায় অধীর হলেন, আল্লাহ যদি আমাদের কোন পুত্র সন্তান দান না করেন, তাহলে আমার বংশ এখানেই শেষ। কারণ সংসারে সন্ধ্যাবাতী জ্বালাবার কেউ থাকবে না। তাই চিন্তায় তিনি অধীর হয়ে উঠলেন সন্তান লাভের কোন চেতনাই ছিল না আল্লাহর লীলা বোঝা ভার। প্রায় বৃদ্ধাবস্থায় তাদের মনে সন্তানের আকাংখা জাগল। বুরহান উদ্দিন ছিলেন খাঁটি ইমানদার তাই সন্তান লাভের জন্য কৃত্রিম কোন পদ্ধতি না নিয়ে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করতে লাগলেন। তাদের উভয়ের মন থেকেই যেন শান্তি কেড়ে নিল। এমন অবস্থায় তারা পৌছল যে খাওয়া দাওয়ার প্রতিও তাদের তেমন খেয়াল নেই। দিন রাত শুধুসন্তান লাভের আকাংখা নিয়ে আল্লাহর শাহী দরবারে ফরিয়াদ করতে লাগলেন। হে আল্লাহ! তুমি অসীম। তোমার গুণ, মাগফেরাত, দয়া সব কিছুই। তোমার ধন ভান্ডার সব সময় পরিপূর্ণ। তুমি যাকে ইচ্ছা তাকেই দান করতে পার। তাই আমি তোমার কাছে কোন ধন সম্পদ চাই না। যে উদ্দেশ্যে এই গভীর রাত্রে আমরা তোমার দরবারে হাত তুলেছি তোমার কাছে তা অজানা নয়। “হে মাবুদ! তোমার কাছেই আকুল আবেদন তুমি আমাদের মনের আশা পূর্ণ করে দাও।” বুরহান উদ্দিন ও তার স্ত্রী দিনের পর রাত আবার রাতের পর দিন আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করতে লাগলেন। মহান দানশীল আল্লার কাছে মন খুলে কিছু চাইতে পারলে আল্লাহ তাকে তা দান করেন। এক সময় দেখতে পেলেন তার স্ত্রী গর্ভধারণ করেছে। কিন্তু তিনি ফরিয়াদ থেকে বিরত হলেন না। এক সময় তিনি ফরিয়াদ করতে গিয়ে বললেন, “ হে মাবুদ তুমি আমাকে একটি পুত্র সন্তান দান কর। জানি তোমার দানের হাত খাট নয়। হে প্রভু তুমি আমাকে একটি পুত্র সন্তান দান করিলে আমি একটি গরু কোরবানী করব তোমার রাস্তায় বিলিয়ে দিব।” আল্লাহ তার প্রার্থনা কবুল করে একটি পুত্র সন্তান দান করলেন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া