হযরত শামাউন (আঃ)-এর শারীরিক গঠন ও নবুয়ত লাভ-৪র্থ পর্ব

হযরত শামাউন (আঃ)-এর শারীরিক গঠন ও নবুয়ত লাভ- ৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

কুটনী রমণী বলল, মাগো! নবী সহধর্মিনীই হয়েছ জীবনে ভাত কাপড়ে শান্তি তো কোন দিনই করলে না। উপরন্ত স্বামীর স্বভাব চরিত্রও ভাল নয়। তুমি নিজে আমার নিকট বল বা নাই বল, মনের ভিতরে কি দুঃখ ও অশান্তির জ্বালা পোয়াচ্ছ তা আমি ভালভাবেই উপলব্ধি করতেছি। এখন যত শীঘ্র সম্ভব তোমার ভালোর জন্য তোমার নিজেরই ব্যবস্থা নেয়া উচিত। সে ব্যবস্থা হিসেবেই আজ রাতে যখন তোমার স্বামী গভীর ঘুমে অচেতন হবে তখন তুমি তাঁর হাত-পা রশি দিয়ে শক্রভাবে বেঁধে ফেলবে এবং বাদশাহর দরবারে খবর দিবে। বাদশাহর লোকজন এসে এ অবস্থায় তাঁকে নিয়ে যাবে। আর বাদশাহ তোমার এ কাজের জন্য তোমাকে নিজের বেগমরুপে বরণ করে নিবেন। এখন তুমি চিন্তা করে দেখ, তুমি এ কাজ করতে পারবে কি না? যদি পার তবে তুমি বাকী জীবন বাদশাহর রাণী রূপে পরম সুখে কাটাতে পারবে। আমি তো বুঝি বোনঝী। তোমার জন্য এ ব্যবস্থা এখনই গ্রহণ করা উচিত। তোমার ঐ অসৎ স্বামীকে ধরে থেকে কোন লাভ নেই। ভবিষ্যৎ যেমন অন্ধকার তেমনই বিপদজনকও বটে।

কুটনী রমণী কথা দ্বারা নবীপত্নী মন পূর্বেই দুর্বল করে নিয়েছিল। তিনি তাঁর কথার প্রতারিত হয়ে কুটনী রমণীকে নিজের পরম শুভাকাঙ্খানী ভাবল। সুতরাং তিনি বললেন, হ্যাঁ, খালা আমি আপানার কথামত কাজ করতে পারব।

ঐ দিনই রাতেই হযরত শামাউন (আঃ) নিদ্রাভিভূত হয়ে পড়লে তাঁর স্ত্রী একটি শক্ত রশি দিয়ে তাঁর হাত-পা শক্ত করে বেঁধে ফেললেন। কিছুক্ষণ পরই তাঁর নিদ্রা ভঙ্গ হলে তিনি নড়াচড়া দিয়ে উঠলেন। আর তাঁর নড়াচড়াতে রশি ছিঁড়ে খণ্ড খণ্ড হয়ে গেল।

অতঃপর চক্ষু খুলে স্ত্রী দিকে তাকিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ঘুমের মধ্যে আমাকে এভাবে বেঁধেছিল কে বলতে পার? তাঁর স্ত্রী বললেন, আমিই আপনাকে এভাবে বেঁধে ছিলাম।

হযরত শামাউন (আঃ) জিজ্ঞেস করলেন কেন?

স্ত্রী বললেন, প্রতিদিন আপনি যেভাবে দ্বীন প্রচারে উদ্দেশ্য কাফিরদের মাঝে থাকেন, তাতে আমাকে খুবই দুশ্চিন্তায় মধ্যে থাকতে হয়। কারণ মুক্ত অবস্থায় আপনার সাথে শত্রুগণ কোনরূপ এঁটে উঠতে না পেরে আপনাকে যদি কোনরূপ বেঁধে ফেলে তখন আপনার কি অবস্থা হবে। এ দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য একটু পরিক্ষা করে দেখলাম, আপনি শক্তির বলে আল্লাহ্‌র রহমতে বন্ধন মুক্ত হতে পারেন কিনা। না বন্ধন অবস্থায় বিপদ্গ্রস্থ হয়ে পড়েন।

হযরত শামাউন (আঃ) তাঁর স্ত্রীকে বললেন, এ ব্যাপারে তুমি একটুকুও চিন্তা করিও না। কাফিররা আমাকে যত শক্ত রশি দিয়েই আমাকে বাঁধুক না কেন, আমি আল্লাহ্‌ পাকের অসীম অনুগ্রহে অনায়াসে তা ছিন্ন করে মুক্ত হতে পারব।

পরদিন অবস্থা জানার উদ্দেশ্যে ঐ বৃদ্ধা রমণী আমার নবী হযরত শামাউন (আঃ)- এর বাড়ির ভিতরে এসে হাজির হল এবং নবী পত্নীর নিকট সমস্ত ঘটনা শুনে বলল, বল কি বোনঝী। অবশ্য এরকম একটা সন্দেহের মধ্যে আমি ছিলাম। যেহেতু আগে থেকে জানতাম যে, লোকটির সাথে কেউ কখনও মল্লযুদ্ধে জয়লাভ করতে পারেনি। সে সন্দেহের বশে আজ আমি একটি শক্ত লৌহ শিকল নিয়ে এসেছি। পুনরায় ঘুমের মধ্যে তাঁকে যদি এ শিকল দ্বারা বেঁধে ফেলতে পার; তাহলে অবশ্যই তোমার কার্য সিদ্ধি হবে। তোমার স্বামী যত শক্তিরই অধিকারী হোক না কেন, এ লোহার শিকল ছিন্ন করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে না।

নবী পত্নী আজও ঠিক গত রাতের মত স্বামীকে তাঁর ঘুমের ঘোরে লৌহ শিকল দ্বারা মজবুতভাবে বেঁধে ফেললেন।

নিদ্রা ভঙ্গ হবার পর হযরত শামাউন (আঃ) যখন দেখলেন যে তাঁর হাত-পা এবং সর্বাঙ্গ লৌহ শিকলে বাঁধা। তখন তিনি তাঁর স্বীয় স্ত্রীর নিকট জিজ্ঞেস করলেন, আজ আবার আমাকে এভাবে কে বেঁধে রেখেছে বলতে পার কি? জিজ্ঞেস করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিজ হাত-পায়ে একটু ঝাড়া দিবার চেষ্টা করলেন আর সাথে সাথেই উক্ত লৌহ শিকল ছেড়ে টুকরা টুকরা হয়ে গেল। এ অবস্থা দেখে হযরত শামাউন (আঃ) এর স্ত্রী বেশ কিছুটা খুশির ভাব প্রকাশ করে বললেন, আজও আমিই আপনাকে শিকল দ্বারা বেঁধে ছিলাম। মনে মনে ভাবলাম আমার স্বামী রশি ছিঁড়ে ফেলতে পারলেও শত্রুগণ যদি তাঁকে লৌহ শিকল দ্বারা বেঁধে ফেলে তবে তো সে শিকল ছিন্ন করে বাধন মুক্ত হতে পারবে না। আমার মনের এ দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য আজ আমি লৌহ শিকল দ্বারা বেঁধে পরীক্ষা করলাম। এখন আমি স্বচক্ষে যা দেখালাম, তাতে আমার মনের চিন্তা অনেকটা দূর হয়ে গেল। এবার আমি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারলাম।

হযরত শামাউন (আঃ) বললেন, শুন প্রিয়তমা! আল্লাহ্‌ পাকের রহমতে শত্রুগণ আমাকে কোন কিছু দিয়েই বেঁধে রাখতে পারবে না। সুতরাং এ বিষয় তোমার কোনরূপ চিন্তাভাবনা করা সম্পূর্ণ অহেতুক। অবশ্য এমন এক বস্তু রয়েছে যা দিয়ে কেউ আমাকে বাঁধতে পারলে সে বন্ধন হতে মুক্তি লাভ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে এ বিষয়টা কেউ জানে না।

হযরত শামাউন (আঃ)-এর শারীরিক গঠন ও নবুয়ত লাভ- ৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।