হযরত শামউন মুহেব্ব (রঃ) – পর্ব ১
হযরত শামাউন মুহেব্ব এক অসাধারণ প্রেমময় পুরুষ ছিলেন। সুফীসাধনার মধ্যে প্রেমের কি স্থান, প্রেমের আলোকস্তম্ভ হয়ে তিনি তা প্রমাণ করে দিয়েছেন। তাঁর মতবাদ হল, প্রেমের মাধ্যমেই শুধু আল্লাহকে পাওয়া যায়। প্রেম ছাড়া মারেফাতের সব কিছু সঞ্জীবিত হয়।
তিনি হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) ও হযরত সাররী সাকতী (রঃ)-এর সমসাময়িক ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। সমকালের আরও অনেক সাধক তার মতো প্রেমের ওপর সমধিক গুরত্ব দেন। অধ্যাত্ম-সাধনার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন মহাপ্রেমিক। সেজন্য সবাই তাঁকে শামাউন মুহেব্ব বলে সম্বোধন করতেন। মুহেব্ব শব্দের অর্থ হল প্রেমিক।
একবার হজ্জ থেকে ফেরার সময় কয়েদ নামক স্থানে জনগণের অনুরোধে তিনি ভাষণ দেন। কিন্তু তাঁর বক্তব্য জনগণকে তেমন প্রভাবিত করতে পারল না। তাঁরা অমনোযোগী হয়ে গেলেন। আর তিনি বিরক্ত হয়ে সভার লণ্ঠনগুলিকে লক্ষ্য করে বললেন, এস, আমি তোমাদের সঙ্গেই প্রেমালাপ করি। সঙ্গে সঙ্গে লণ্ঠনগুলি গড়ে উঠল। সেগুলি এমন জোরে জোরে আন্দোলিত হয় যে, পরস্পর ঠোকাঠুকি লেগে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল।
আর একদিন তিনি বক্তৃতা দিচ্ছেন। সে বক্তৃতারও বিষয় প্রেম। তখন একটি কবুতর উড়ে এসে তাঁর মাথায় বসল। তারপর মাথা থেকে কোলে কোল থেকে হাত এসে বসল। শেষে হাত থেকে নেমে গেল মাটিতে। আর ঠোঁট দিয়ে তা খুঁড়তে লাগল। পায়রাটি ঠোঁট দিয়ে এমন জোরে আঘাত করল যে, ঠোঁট রক্তে রঙিন হয়ে গেল। আর এভাবে মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে পায়রাটি মারা গেল।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সুন্নাত পালনের জন্য তিনি বিবাহ করেন। একটি কন্যাও জন্মে। আল্লাহর কি ইচ্ছা, তিনি এ কন্যাটির প্রতি অত্যন্ত আকৃষ্ট হন। সন্তান বাৎসলের যেন বান ডেকে গেল। এ সময় তিনি স্বপ্নে দেখলেন, হাশরের মাঠে আল্লাহ প্রেমিকদের একটি পতাকা পোঁতা আছে। তিনি যখন ঐ পতাকাতলে গিয়ে দাঁড়ালেন, তখন এক ফেরেশতা তাঁকে সরিয়ে দিলেন। তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, আমি শামাউন মুহেব্ব। আল্লাহ নিজেই আমাকে এ নামে ভূষিত করেন। আপনি আমাকে হটিয়ে দিচ্ছেন কেন?
ফেরেশতা বললেন, আপনার কন্যার সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে আপনি আল্লাহ-প্রেমী ছিলেন ঠিকই, কিন্তু এখন আপনার মধ্যে সে প্রেম নেই। সঙ্গে সঙ্গে তিনি আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা জানালেন, কন্যার কারণে যদি আপনার আমার সম্পর্ক ছিন্ন হয়, তা হলে তাকে আপনি এখনই তুলে নিন। স্বপ্নের মধ্যে তাঁর প্রার্থনা তখনও শেষ হয়নি। ঘরে উঠল কান্নার রোল। জানা গেল, বাড়ীর ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে তার স্নেহের পুত্তলী প্রাণ হারিয়েছে। ঘুম থেকে উঠি তিনি এ দুঃসংবাদ শুনলেন। কিন্তু শোকার্ত না হয়ে আল্লাহর শোকর আদায় করলেন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া