হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ)- পর্ব ৮

হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ)- পর্ব ৭ পড়তে এখানে ক্লিক করুন    

ভালোবাসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রকৃত ভালোবাসা সৃষ্টির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এর এক ফোঁটা যে পান করেছে সে প্রেমাস্পদ আল্লাহর সেঙ্গে মিলিত হয়। আর এ নির্দেশ লাভ করে যে আল্লাহকে ভালোবাসে, স্বয়ং আল্লাহ তাঁকে ভালোবাসেন।

হযরত রাবেয়া (রঃ) সব সময় কান্নাকাটি করতেন।

এর কারণ জিজ্ঞে করা হলে তিনি বললেন, আল্লাহ থেকে পাছে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি, এ ভয়ে আমি কাঁদি। তাঁর প্রতি আমার যে আসক্তি, তাতে যদি মৃত্যুর মুহূর্তে আমি শুনে ফেলি, আল্লাহ ঘোষণা করছেন যে, তুমি আমার যোগ্য ব্যক্তি নও, তাহলে আমার কী উপায় হবে?

পাপীরা তওবা করলে কি তা কবুল হয়? তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি বললেন, তওবা করার তওফীক দেন স্বয়ং আল্লাহ। সুতরাং সেই তওফীক অনুযায়ী কেউ তওবা করলে তা কবুল করার তওফীক দেন স্বয়ং আল্লাহ। সুতরাং সেই তওফীক অনুযায়ী কেউ তওবা করেল তা কবুল না হওয়ার কোন কারণই নেই।

তিনি বলেন, আল্লাহর কোন নেয়ামত লাভ করে মানুষ যেন সন্তুষ্ট হয়, তাঁকে লাভ করার পরিশ্রম ও সাধনার দ্বারা যদি সে অনুরূপ অন্তুষ্টি অর্জন করে, আল্লাহ কেবল তখনই সন্তুষ্ট হন। তাঁর কথা হলঃ শুধুমাত্র বহিরেন্দ্রিয়ের দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় না। হাত, পা, চোখ, কান, জিভ দ্বারাও তা সম্ভব নয়। কেননা, কান শুধু শোনে আর পা চালায়। কিন্তু আল্লাহর সম্পর্ক হৃদয়ের সঙ্গে। অতএব হৃদয়ের জাগরণ খুব জরুরী। যার অন্তর জেগে থাকে, তার কোন বন্ধুর প্রয়োজন নেই। আর আল্লাহতে যিনি সব সমর্পণ করেছেন, একমাত্র তিনিই চির জাগরুক।

তার বক্তব্যঃ শুধু মুখে ক্ষমা চাওয়া মিথ্যুকের কাজ। আর প্রকৃত তওবা নিজে করলেই যথেষ্ট। অন্যের মাধ্যমে তওবা করার দরকার নেই। যে প্রকৃত তওবা করে, তার দ্বিতীয়বার তওবার দরকার পড়ে না।

যিনি তত্ত্ব-জ্ঞানী, তিনি আল্লাহর কাছে পবিত্র অন্তর কামনা করেন। যখন তাঁকে তা দান করা হয়, তখন তা আবার তিনি আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে দেন-যেন সেটি লোকচক্ষুর আড়ালে সুরক্ষিত থাকে।

১০। হযরত সালেহ আমেরী (রঃ) ছিলেন এক তত্ত্ব-জ্ঞানী সাধক। তিনি বলতেন, দরজায় অবিরাম শব্দ করতে থাকলে এক সময় তা খুলে দেওয়া হবেই। তাঁর কথা শুনে হযরত রাবেয়া (রঃ) বলেন, যে দরজা কখনও বন্ধই থাকে না, তা আবার খোলার প্রশ্ন ওঠে কেন? তত্ত্বের দিক দিয়ে এ যে কত সুক্ষ্ণ, তা সালেহ আমেরী (রঃ)-এর বুঝতে অসুবিধা হয় না।

এক লোক হায় দুঃখ হায় বলে বিলাপ করছিল। হযরত রাবেয়া (রঃ) তাঁকে বললেন, ওসব না বলে তুমি বরং হায় নিশ্চন্ততা বল। কেননা, তোমার যদি সত্যিই দুঃখ থাকত, তাহলে তোমার মুখে কথাই ফুটত না।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ)- পর্ব ৯ পড়তে এখানে ক্লিক করুন    

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।