হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ)- পর্ব ১১
হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ)- পর্ব ১০ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আপনি যদি সংসারকে ভালো না বাসতেন, তাহলে সত্যিই একজন পুন্যবান ব্যক্তি হতেন। আশ্চর্য! আমার মধ্যে আপনি সংসার প্রীতির কী দেখলেন?
তা যদি না হত, তাহলে আপনি অবুঝের মত জিজ্ঞেস করতেন না যে, আমার কী খেতে ইচ্ছা হয়। অথচ আপনি জানেন, এ জগত-সংসার অস্থায়ী, ধবংসশীল। এসব কিছুই মূল্যহীন।
তাপসীর কথা শুনে হযরত সুফিয়ানের (রঃ) চৈতন্যেদয় হয়। তিনি চীৎকার করে বলে উঠলেন, আল্লাহু আকবর! হে আল্লাহ! আপনি আমার ওপরে খুশী থাকুন। তাঁর প্রার্থনা হযরত রাবেয়া (রঃ)-এর কানে গেলে বললেন, আপনি যাঁর ইচ্ছার ওপর সন্তুষ্ট নন, আপনার ওপর তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করতে আপনার লজ্জা হয় না?
মহাসাধিকা হযরত রাবেয়া (রঃ)-এর এ আধ্যাত্নিক অনুভূতি অনির্বচনীয়। সমকালের অসাধারণ পুরুষরাও তাঁর মূল্যায়নে হিমশিম খেয়েছেন।
১৩। একদিন এলেন প্রখ্যাত সাধক হযরত মালেক দীনার (রঃ)। দেখলেন হযরত রাবেয়া (রঃ) একটি ভাঙা ঘটিতে ওযু করেন ও পানি পান করেন। শোবার জন্যে রয়েছে পুরানো ছেঁড়া এক চাটাই আর ইটের বালিশ। এসব দেখে বড় ব্যাথা পেলেন তিনি। বললেন, কত কষ্ট আপনার মাননীয়া। আমার প্রচুর ধনী শিষ্য ও বন্ধু-বান্ধব রয়েছে। যদি অনুমতি দেন তাহলে কিছু দরকারী জিনিসপত্র এনে দেই।
তিনি তাঁর স্বভাব সুলভ উত্তর দিলেন। হযরত! আপনি ভূল করলেন? আপনার বিত্তশালী বন্ধুবান্ধবের প্রভু এবং আমার প্রভু কি এক নয়?
হযরত মালেক (রঃ) বললেন, তা তো বটেই।
দারিদ্র্যের কারণে তিনি কি দরিদ্র দাসদের ভুলে থাকেন? নাকি স্বচ্ছলতার কারণে স্মরণে রাখেন সম্পদশালী দাসদের?
না, তা নয়।
তাহলে তিনি যখন ধনী-দরিদ্র সকলের অবস্থাই জানেন, তখন তাঁকে আর স্মরণ করিয়ে দেওয়ার দরকার কি?
১৪। আলোচনাসভা বসেছে মহাতাপসীর বাসভবনে। আলোচনা করছেন একদল আলোকময় পুরুষ। হযরত হাসান বসরী (রঃ), হযরত মালেক দীনার (রঃ), হযরত শাকীক বলখী (রঃ) প্রমুখ। আলোচ্য বিষয়-আল্লাহ প্রেমের বিশুদ্ধ সত্য-স্বরূপ।
হযরত হাসান (রঃ) বললেন, প্রভুর আঘাতে যিনি ধৈর্য হারান তাঁর আল্লাহ প্রেমের দাবী সত্য নয়। হযরত রাবেয়া (রঃ) বললেন, এতে আত্নপরতা ও অহমিকা প্রকাশ পায়।
হযরত শাকীক (রঃ) বললেন, প্রভুর আঘাতে যিনি শোকর করেন না, তাঁরও প্রভু প্রেমের দাবী খাঁটি নয়।
হযরত রাবেয়া (রঃ) বললেন, এর সংজ্ঞা আরও উন্নত হওয়া দরকার। তখন সবাই তাঁকেই ধরলেন। এ বিষয়ে আপনি কিছু বলুন। তিনি বললেন, যিনি প্রভুর দেওয়া আঘাত প্রভুর দর্শনে ভুলে যান, তিনিই তাঁর বন্ধুত্বের প্রকৃত দাবীদার। যেমন মিসরের নারীরা হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর দর্শনে নিজেদের আঙ্গুল কর্তন জনিত যন্ত্রণার কথা টেরই পেলেন না।
আল্লাহ প্রেমের সত্য-স্বরূপ তিনিই উপলব্ধি করেন।
একদিন ধর্ম নিয়ে আলোচনা চলছে। হযরত রাবেয়া (রঃ) উনুনে গোশতের হাঁড়ি চাপিয়ে দিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করলেন। রান্নার চেয়ে আলোচনা তাঁর কাছে অনেক বেশী মূল্যবান। আলোচনা চলল সারা বিকেল ধরে। মাগরিবের নামাজের পর ভোজন। হযরত হাসান বসরী (রঃ)-এর মনে সন্দেহ, ঐ গোশত কি মুখে দেওয়া যাবে? কিন্তু এক টুকরো মুখে দিয়েই তিনি বুঝলেন, এমন উত্তম জিনিস তিনি আর কখনও খাননি। অথচ রাবেয়া (রঃ) গোশতের হাঁড়িতে শুধু পানি ঢেলে দেন, অন্য কিছু নয়।
ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন হযরত হাসান (রঃ)। আর একদিনের বর্ণনা দিয়েছেন হযরত সুফিয়ান সাওরী (রঃ)। তিনি তাপসীর বাড়ীতে একটি রাত অতিবাহিত করেন। পরিদিন সকালে বললেন, আল্লাহ তাঁকে যে রাতভর নামাজ পড়ার তওফীক দিয়েছেন, তার কৃতজ্ঞতা আদায়ের জন্য তিনি আগামীকাল রোজা রাখবেন। এমন আল্লাহপ্রাণ সাধ্বী আল্লাহর এক বিষ্ময়কর সৃষ্টি।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া