হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ)- পর্ব ১
অভাবের সংসার। শুধু অভাব আর অভাব। কিন্তু সেখানেও সংসার থেমে থাকে না। সেখানেও জীবন আপন ছন্দে বয়ে যায়। নতুন প্রাণ অঙ্কুরিত হয়।
সন্তান সম্ভবা এক জননী বুঝতে পারেন, তাঁর জঠর থেকে আরোও একটি প্রাণ পৃথিবীর আলো-বাতাসে অচিরেই মুক্তি পাবে। সময় আসন্ন। আর কিছুক্ষণ পরে হয়তো একটি নবীন প্রাণ তার অস্তিত্ব ঘোষণা করবে।
রাত্রিবেলা। আলো জ্বালাতে হবে। কিন্তু ঘরে এক ফোঁটা তেল নেই। আলো জ্বলবে কি করে? তিনি স্বামীকে এক পড়শীর ঘর থেকে খানিকটা তেল ধার করে আনতে বললেন। কিন্তু এর আগে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন, কোন লোকের কাছে ধার করবেন না। কিন্তু আজ? স্ত্রীর অবস্থা উপলব্ধি করে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঐ প্রতিবেশীর বাড়িতে গেলেন তেল ধার করতে। স্ত্রীর জন্য তিনি প্রতিজ্ঞা ভাঙলেন, কিন্তু কাজ হল না। ধার দেওয়া তো দূরের কথা, প্রতিবেশী বাড়ীর দরজা পর্যন্ত খুলল না।
নিরাশ হয়ে তিনি ফিরে এলেন। দুঃখে, ক্ষোভে তাঁর কান্না এল। চুপ করে বসে রইলেন ঘরের কোণে। তারপর একসময় যে চোখ দুটি পানিত ভাসছিল, তা বুজে এল তন্দ্রায়। তিনি স্বপ্ন দেখলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এসে তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন, কেঁদো না, দুঃখ করো না। আল্লাহর ইচ্ছায় তুমি এক অসাধারণ কন্যার পিতা হতে চলেছ। ভবিষ্যতে সে এক অন্যতমা মহীয়সী নারী হবে। জান্নাতের অগ্রবর্তিনীদের অন্যতমা হবে। তার সুপারিশে আমার সত্তর হাজার পাপী উত্তম মুক্তি পাবে।
স্বপ্নযোগে রাসূলে কারীম (সাঃ) তাঁকে বসুরায় আমীর ঈসার নিকট যেতে বললেন। এক টুকরো কাগজ্রে কয়েকটি কথা লেখে নিতেও বললেন। কথাগুলি হল হে আমীর! তুমি প্রতি রাতে শোবার সময় একশ বার দুরুদ শরীফ পাঠ করে থাক, আর জুময়ার রাতে পড় চারশ বার। আর যেহেতু তুমি গত জুমআয় দুরুদ পাঠ করনি, অতএব ক্ষতিপূরণ স্বরূপ চারশ দিরহাম দান করে দাও।
ঘুম ভেঙে গেল। এই আশ্চর্য স্বপ্ন দেখে তিনি জেগে উঠলেন। আর স্বপ্নের নির্দেশমত একখানি কাগজে নবীজীর কথাগুলি লিখে নিলেন। পরদিন ভোরে এক লোক মারফত সেই বাণীলিপি পাঠিয়েছিলেন বসরায় আমীরের কাছে। লিপি পড়ে ঈসা অবাক। মহানবীর মূল্যবান উপদেশের কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তিনি দশ হাজার দেরহাম দীন দুঃখীদের দান করলেন। আর যাঁর মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর এই অমূল্য বাণী লাভ করেছেন, তাঁর জন্য চারশ দীনার আলাদা করে রাখলেন। পরে একদিন নিজেই দিনারগুলি নিয়ে গেলেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে।
যথাসময়ে তাঁর সঙ্গে দেখে হল ঈসার। দীনারগুলি তাঁর হাতে তুলে দিয়ে বললেন, আপনার যখন যা দরকার হবে, দয়া করে আমাকে জানাবেন। কোন সঙ্কোচ করবেন না। আমি তার ব্যবস্থা করবো।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া