হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ)- পর্ব ৪
হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ) – পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নির্দিষ্ট দিনে তিনি সত্যিই বেরিয়ে এলেন। শীর্ণ আর দুর্বল শরীর। চোখ দুটি ঢুকে গেছে ভেতরে। কিন্তু হযরত যুনযুন (রঃ) বুঝতে পারলেন, তাঁর বহির্গমনের প্রভাবে সমগ্র পর্বত যেন কম্পমান। ঘর থেকে বেরিয়ে এসে তিনি একবার সস্নেহ দৃষ্টি মেলে দিলেন রোগ-ক্লিষ্ট লোকগুলোর দিকে। তারপর আকাশের দিকে তাকালেন। পরে তাদের শরীরে ফুঁ দিলেন আর দেখতে দেখতে সব রোগী সম্পূর্ণ ভাল হয়ে গেল। এবার তিনি ঘরে ঢুকলেন। হঠাৎ কাপড়ে পড়ল টান। তিনি হযরত যুনযুন (রঃ)-কে দেখতে পেলেন। যুনযুন (রঃ) বললেন, আপনি জাহেরী রোগের চিকিৎসা করলেন। এবার আমার বাতেনী রোগের চিকিৎসা করুন হুযুর।
দরবেশ বললেন, আপনি আমাকে ছেড়ে দিন যুনযুন। তাঁকে ছেড়ে আপনি অন্যের আঁচল চেপে ধরেছেন। এটা বিরক্তির সাঙ্গে আল্লাহ লক্ষ্য করছেন। সুতরাং তিনি হয়ত এবার আপনাকে নিজের হাতে না রেখে তারই হাতে সোপর্দ করবেন। একথা বলে তিনি কুটিরে ঢুকে পড়লেন।
একদা হযরত যুনযুন (রঃ) আকুলভাবে কাঁদতে থাকেন। তার কারণ, তিনি এক রাতে সেজদাবনত অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়েন। আর স্বপ্নে দেখেন, আল্লাহ বলেছেন, তিনি এই সৃষ্টিজগতকে দশ ভাগে ভাগ করেন। তার নভাগই দুনিয়ার প্রতি আসক্তি দেখান। মাত্র এক ভাগ কোন আকর্ষণ অনুভব করল না। এই এক ভাগকে আবার দশ ভাগ করা হল। আর তাদের সামনে রাখা হল জান্নাত। সেখানেও নভাগই জান্নাতের প্রতি আকৃষ্ট হল। আর তাদের সামনে রাখা হল জান্নাত। সেখানেও নভাগই জান্নাতের প্রতি আকৃষ্ট হল। শুধু এক ভাগ রইল নির্বিকার। তিনি তখন তাদের সামনে জাহান্নামকে উপস্থাপন করলেন। কিন্তু তখনও তারা নির্বিকার। সামান্যতম ভয়ও তাদের স্পর্শ করল না। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা জান্নাতের প্রতি অনুরাগ দেখালে না। আবার জাহান্নাম থেকেও মুক্তি কামনা করলে না। আসলে তোমরা কি চাও?
তারা বললেন, আমরা কি চাই, আপনি তা জানেন প্রভু। আমরা কেবলমাত্র আপনার সন্তুষ্টি চাই। আমাদের অন্য কোন বাসনা নেই। আমরা শুধু আপনাকেই চাই। এই ক্ষুদ্র দলটির অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন কিনা, হযরত যুনযুন (রঃ) হয়ত সেই কথা ভেবে অস্থির আবেগে কাঁন্নাকাটি করতে থাকেন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া