হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ)- পর্ব ৩
হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত যুনযুন (রঃ) বললেন, কি করে বুঝলে?
সুন্দরী বললেন, তুমি পাগল হলে ওযু করতে না। আলেম হলে পর নারীর দিকে চাইতে না। আর দরবেশ হলে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর দিকে তুমি তাকাতেই পারতে না। একথা বলে মহিলা অদৃশ্য হয়ে গেল।
তখন তিনি বুঝলেন, আল্লাহর তরফ থেকে তাঁকে সতর্ক করে দেওয়া হল।
একবার তিনি চলেছেন নৌকাযোগে। আরও অনেক যাত্রী ছিল নৌকায়। ছিল এক মুক্তা ব্যবসায়ী। হঠাৎ কি করে যেন তাঁর একটি মুক্তা হারিয়ে গেল। আর সবাই মিলে সন্দেহ করল হযরতকে। নানা কথা বলে তারা তাঁকে অপমান করতে শুরু করে। শেষে সহ্য করতে না পেরে তিনি আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করলেন, আল্লাহ গো! আপনি নিশ্চয় জানেন আমি চোর নই। অতএব আপনি আমার সম্মান রক্ষা করুন। আল্লাহ তার আকুল প্রার্থনার সাড়া দিলেন। দেখা গেল, নদীর অসংখ্য মাছ এক একটি মুক্তাদানা মুখে নিয়ে ভেসে উঠল নৌকার চারপাশে।
তিনি তখন একটি মাছের মুখ থেকে মুক্তা খসিয়ে নিয়ে বণিককে দিলেন। যাত্রীরা এবার হুমড়ি খেয়ে পড়ল তাঁর পায়ে। ক্ষমা চাইল। তিনি তাদের ক্ষমাও করলেন। এ ঘটনার পর থেকে তিনি যুনযুন নামে পরিচিত হন। মাছের মালিককে যুনযুন বলা হয়।
তাঁর সাহচর্যে এসে তাঁর বোনও এক মহিমান্বিতা তাপসী হয়ে ওঠেন। এই অপাপবিদ্ধা নারী পবিত্র কোরআন পাঠকালে সেই আয়াতটির সম্মুখীন হলেন, যাতে রয়েছে-আমি (বনী-ইসরাঈলদের) ওপর মান্না ও সালওয়া নাযিল করেছি। আয়াতটি পাঠ করে তিনি প্রার্থনা করেন, আল্লাহ গো, আপনি বনী ইসরাঈলদের বেহেশতী খাবার উপহার দিলেন। অথচ রাসূলুল্লাহর উম্মতদের দিলেন না। আপনি যতক্ষণ না আমাকে তা দিচ্ছেন, ততক্ষণ আমি বসব না। এই রইলাম দাঁড়িয়ে। আল্লাহ সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ইচ্ছা পূরণ করলেন। আকাশ থেকে মান্না ও সালওয়া বর্ষিত হতে লাগল। অবাক বিষ্ময়ে আল্লাহর এই প্রিয় সেবিকা আল্লাহর প্রেমে বিভোর হয়ে লোকালয় ছেড়ে চলে গেলেন। তারপর থেকে তাঁর আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
একবার হযরত যুনযুন (রঃ) এক পাহাড়ের মাথায় প্রচুর কুষ্ঠরোগী দেখতে পেলেন। জানা গেল, এখানে এক কুটিরে এক দরবেশ থাকেন। বছরে মাত্র একবার ঘর থেকে বেরিয়ে এসে রোগীদের শরীরে ফুঁ দেন। আর তারা রোগমুক্ত হয় এবং তিনি আবার চলে যান তাঁর কুঁড়ে ঘরে। বর্তমানে তাঁর ঘর থেকে বেরিয়ে আসার সময় হয়েছে। রোগীরা তাঁর অপেক্ষায় রয়েছে।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া