হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ)- পর্ব ১২
হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ) – পর্ব ১১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
২০। যিনি যত বড় আরেফ, আল্লাহর ভয়ে তিনি তত বেশী ভীত ও তওবাকারী হবেন। যে যতটা সূর্যের নিকটবর্তী হয়, সে ততটা তাপ পায়। প্রকৃত আরেফ যিনি, তিনি জ্ঞানের সাহায্যের গোপন তত্ত্বের গুণসমূহ অবলোকন করেন। আরেফ আল্লাহর নিকটে এমনকি তাঁর সঙ্গেই মিলিত থাকেন। তাঁর পরিবর্তন যেন আল্লাহরই পরিবর্তন। আল্লাহর কথাই তাঁর মুখ দিয়ে বের হয়। তাঁর চোখ আল্লাহরই চোখ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, আল্লাহ বলেছেন, আমি যখন আমার দাসকে ভালোবাসি, তখন প্রভু হওয়া সত্ত্বেও আমি তাঁর কান হয়ে যাই, সে তখন তা দিয়ে শোনে। আমি তাঁর চোখ হয়ে যাই, সে তা দিয়ে দেখে। আমি তার মুখ হয়ে যাই, সে তা দিয়ে কথা বলে। আমি তার হাত হয়ে যাই, সে তা দিয়ে ধারণ করে।
২১। যাহেদ ও নির্লোভ ব্যক্তি আখেরাতের বাদশাহ আর আরেফ হল যাহেদগণের বাদশাহ।
২২। অসুস্থ হৃদয়ের চারটি লক্ষণ। যথা-
ক) সে এবাদতে স্বাদ পায় না,
খ) তার মনে আল্লাহর ভয় থাকে না,
গ) পার্থিব কার্যকলাপ থেকে উপদেশ গ্রহণ করে না,
ঘ) জ্ঞানের কথা শুনেও তার চর্চা করে না।
২৩। বিদ্যাচর্চা করাই বিদ্যার মূল উদ্দেশ্য। আর চর্চার সঙ্গে ইখলাস এবং প্রেমের সাথে সততা অটুট থাকা খুবই জরূরী।
২৪। তওবা দুরকমের। যথা-
ক) আমিত্ব ত্যাগের উদ্দেশ্যে তওবা করা এবং
খ) আল্লাহর দরবারে লজ্জাবশতঃ তওবা করা।
২৫। প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য তওবা রয়েছে। যেমন-
ক) অবৈধ চিন্তা ত্যাগ করা মনের তওবা,
খ) অশ্রাব্য কথা বলা থেকে বিরত থাকা কানের তওবা,
গ) অবৈধ বস্তু গ্রহণ থেকে বিরত থাকা হাতের তওবা,
ঘ) নিষিদ্ধ পথে গমন করা থেকে বিরত থাকা পায়ের তওবা,
ঙ) ব্যাভিচার থেকে বিরত থাকা হল গুপ্তাঙ্গের তওবা।
২৬। কোন কিছু চাইবে নম্রতা ও ভদ্রতার সঙ্গে, রুক্ষতা ও আদেশ-নির্দেশের ভঙ্গিতে নয়।
২৭। অন্যায় করা মাত্র আল্লাহর শাস্তির ভয় মনে জেগে ওঠাই হল লজ্জার লক্ষণ।
২৮। প্রকাশ্য গুনাহ ও অবাধ্যতা প্রকাশ করা, গোপনে অন্যায় কাজ থেকে বেঁচে থাকা ও সর্বদা আল্লাহর ভয় মনে রাখাই হল ধর্ম-ভীরুতার লক্ষণ। ধর্ম-ভীরূগণ সর্বদা মনে করেন যে, আল্লাহ আমাদের সকল কাজ দেখেন এবং আমরা তাঁর চোখের সামনে আছি।
২৯। পবিত্র ও উত্তম বস্তু আল্লাহর পথে ব্যয় করবে। আল্লাহ যে বস্তুকে মহৎ, মহান ও শ্রেষ্ঠ করেছেন, তাকে মহান বলে জানবে। আর তুমি যে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে সক্ষম হলে, সেও আল্লাহর এক বিরাট দান বলে গণ্য করবে। আর যে বস্তু আল্লাহর কাছে অপ্রিয়, তা থেকে দূরে থাকবে।
৩০। বিষয়ী লোকদের সংসর্গ থেকে দূরে থাকা আর আল্লাহ প্রেমীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখা আল্লাহর সঙ্গে প্রেম করারই শামিল। যেহেতু তাঁরা আল্লাহর প্রেমিক।
৩১। আল্লাহপ্রেমীগণ প্রেম রসে ডুবে গিয়ে যে কথা বলেন, তা যেন জান্নাতী আলোর বাক্য। আর তাঁরা ভীতি-বিহবল হয়ে যা বলেন, তা যেন জাহান্নামের আগ্নেয় বাণী।
৩২। চিন্তা-ভাবনা ও ধ্যান-জ্ঞান এবাদতের চাবি আর রিপুর কামনার বিরোধিতা করা দীদারে এলাহীর দর্পণ – স্বরূপ। যিনি মনে-প্রাণে ধ্যানে লিপ্ত হন, তিনি আত্নিক জগতকে নিজের চোখে দেখতে পান।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া